এইআই’র সহায়তায় তৈরি সংগীত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করবে না স্পটিফাই

স্পটিফাইর প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল এক। ছবি: এএফপি
স্পটিফাইর প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল এক। ছবি: এএফপি

অনলাইন সংগীত স্ট্রিমিং সেবা স্পটিফাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল এক জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠানের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নিয়ে তৈরি করা সংগীত পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।

এ বছরের আরও আগের দিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কানাডীয় সংগীতশিল্পী ড্রেক ও দ্য উইকেন্ড এর কণ্ঠ 'ক্লোন' করে তৈরি করা একটি গান সরিয়ে নেয় স্পটিফাই।

তবে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ড্যানিয়েল এক বলেন, সংগীত তৈরিতে প্রযুক্তির যৌক্তিক ব্যবহার হতে পারে। কিন্তু শিল্পীর অনুমতি ছাড়া তার কণ্ঠ বা গানের আদলে নতুন কোন সংগীত সৃষ্টিতে এআইর ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।

এআই দিয়ে তৈরি সংগীত নিয়ে 'আরও বহু বছর' বিতর্ক চলবে বলে মনে করেন তিনি।

সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বলেন, সংগীতের ক্ষেত্রে এআইর ব্যবহার নিয়ে তার তিন পর্যবেক্ষণ হল:

  • অটো-টিউনের মতো এআই টুল গ্রহণযোগ্য, কারণ এগুলো সংগীতের গুণগত মানের উন্নয়ন করে
  • অন্যান্য শিল্পীর কণ্ঠ (তার অজান্তে) নকল করতে পারে এমন এআইর ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়।
  • এর মাঝামাঝি কিছু বিষয়, যেখানে এআই দিয়ে তৈরি সংগীতে অন্য কোনো শিল্পীর প্রভাব টের পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো সরাসরি নকল নয়—এ ঘটনাগুলোও ক্ষেত্রে বিশেষে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

তিনি জানান, 'বিষয়টির সহজ কোনো সমাধান নেই'।

স্পটিফাইয়ে এআই এখনো পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়। তবে অন্য অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মতো স্পটিফাই মেশিন লার্নিং বা এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের লাইব্রেরি বা কনটেন্ট উন্মুক্ত করেনি। এ ধরনের মডেলগুলো অনেক বেশি কন্টেন্ট নিরীক্ষা করতে পারলে নিজেরাই সংগীত তৈরি করা শিখে যায়। এভাবেই চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই কাজ করছে।

সৃজনশীল খাতগুলোতে এআই'র ক্রমবর্ধনশীল ব্যবহার নিয়ে শিল্পীরা ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

আগস্টে আইরিশ সংগীতশিল্পী হোজিয়ার বলেন, তার কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক ধরনের হুমকি। প্রয়োজনে তিনি এ বিষয়টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার কথাও বিবেচনা করছেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, এই প্রযুক্তিকে শিল্প বলা যায় কী না, সেটাও এক বিতর্কের বিষয়।

ড্রেক এবং দ্য উইকেন্ড জানতেনই না যে 'হার্ট অন মাই স্লিভ' নামের একটি গানে এআই প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের নকল কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে এবং মানুষ গানটি শুনছেনও। জানাজানি হওয়ার পর এপ্রিলে স্পটিফাই এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো গানটি মুছে ফেলে।

কানাডীয় সংগীত শিল্পী ড্রেক (বাঁয়ে) ও দ্য উইকেন্ড। ছবি: সংগৃহীত
কানাডীয় সংগীত শিল্পী ড্রেক (বাঁয়ে) ও দ্য উইকেন্ড। ছবি: সংগৃহীত

গানটি যিনি তৈরি করেছেন, তিনি 'ঘোস্টরাইটার' ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। এই গানের জন্য তিনি সংগীত শিল্পের সম্মানজনক পুরস্কার গ্র্যামির মনোনয়ন পাওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন, যদিও তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

স্পটিফাই প্রধান ড্যানিয়েল বলেন, 'আপনি কল্পনা করতে পারেন, এআই দিয়ে ম্যাডোনার কণ্ঠের আদলে একটি গান তৈরি করে কেউ সেটাকে আপলোড করে দিলো। স্পটিফাইয়ের ইতিহাসে আমাদের এখন আর কিছুই দেখার বাকি নেই। আমাদের সিস্টেমকে অনেকেই বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে।'

'আমাদের খুব বড় একটি দল শুধু এসব সমস্যা মোকাবিলা করার কাজেই নিয়োজিত আছে', যোগ করেন তিনি।

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দলের অন্যতম, দ্য বিটলসের জীবিত দুই সদস্য পল ম্যাকার্টনি ও রিংগো স্টার তাদের প্রয়াত ব্যান্ড-নেতা জন লেননের ৪৫ বছর আগে লেখা অসম্পূর্ণ একটি গানকে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন করে প্রকাশ করেছেন। এতে সহায়তা করেছেন পরিচালক পিটার জ্যাকসন। 

এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা বিটলস এর গান নাউ অ্যান্ড দেন । ছবি: ইউটিউবের মিউজিক ভিডিও থেকে স্ক্রিণশট
এআই প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা বিটলস এর গান নাউ অ্যান্ড দেন । ছবি: ইউটিউবের মিউজিক ভিডিও থেকে স্ক্রিণশট

'নাউ আন্ড দেন' গানটি একইসঙ্গে প্রশংসা, উদ্বেগ ও সমালোচনার জন্ম দিলেও বেশিরভাগ সংগীতবোদ্ধা বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন।

স্পটিফাইও ভবিষ্যতমনষ্ক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এআইকে বাতিলের খাতায় ফেলতে আগ্রহী নয়। 

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

2h ago