উইন্ডোজ ক্র্যাকড ভার্সন ব্যবহারে ৫ নিরাপত্তা ঝুঁকি

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রায়শই আসল উইন্ডোজের পরিবর্তে পাইরেটেড কপি ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনেকেই অর্থ খরচ না করে ক্র্যাকড ভার্সনের সব ফিচার উপভোগ করে থাকেন। মূলত অবৈধ উপায়ে উইন্ডোজ কপি ডাউনলোড করা বা অ্যাক্টিভেট করাকে পাইরেটেড বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পাইরেটেড কপি ব্যবহারে অপরাধের বিষয়টি অবহেলা করলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না।
মাইক্রোসফট প্রতিনিয়ত উইন্ডোজের কার্যকারিতা উন্নয়নের জন্য হালনাগাদ করে থাকে। ছবি: সংগৃহীত

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রায়শই আসল উইন্ডোজের পরিবর্তে পাইরেটেড কপি ব্যবহার করতে দেখা যায়। অনেকেই অর্থ খরচ না করে ক্র্যাকড ভার্সনের সব ফিচার উপভোগ করে থাকেন। মূলত অবৈধ উপায়ে উইন্ডোজ কপি ডাউনলোড করা বা অ্যাক্টিভেট করাকে পাইরেটেড বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পাইরেটেড কপি ব্যবহারে অপরাধের বিষয়টি অবহেলা করলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না।

স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ সুবিধা না পাওয়া

মাইক্রোসফট প্রতিনিয়ত উইন্ডোজের কার্যকারিতা উন্নয়নের জন্য হালনাগাদ করে থাকে, যা নতুন ফিচার আনার পাশাপাশি পুরনো আপডেটগুলোর বাগ সংশোধন করে। এ ছাড়া, ত্রুটি দূর করে এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সিস্টেমের নিরাপত্তা জোরদার করে।

এ ক্ষেত্রে উইন্ডোজ বৈধ না হলে মাইক্রোসফটের স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ করার সুবিধা পাওয়া যাবে না। যার ফলে উইন্ডোজের নতুন ফিচার তো পাওয়া যাবেই না, উপরন্তু বাগ জমা হতে থাকবে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির চিন্তা সবসময় মাথায় ঘুরপাক করতে থাকবে। তাই পাইরেটেড কপি ব্যবহারে যতটা না অর্থ সঞ্চয় হবে তার চেয়ে বেশি নিয়মিত হালনাগাদ না পাওয়ায় দুশ্চিন্তার উদ্রেক ঘটতে পারে।

নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া

কম্পিউটারের প্রাথমিক কাজ এবং গোপনীয় নথি সংরক্ষণের জন্য উইন্ডোজের পাইরেটেড কপি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হতে পারে সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি।

যেহেতু পাইরেটেড কপিগুলোতে স্বয়ংক্রিয় হালনাগাদ পাওয়া যায় না, তাই ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। আর ভয়ঙ্কর র‍্যানসমওয়্যারের মতো ম্যালওয়্যারের একটি একক স্ট্রেইনও ব্যবহারকারীর সংরক্ষিত ফাইল মুছে ফেলতে পারে কিংবা লক করে দিতে পারে।

অতর্কিত আক্রমণ ছাড়াও কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে উইন্ডোজ ডাউনলোড করার ক্ষেত্রেও ম্যালওয়্যার সম্বলিত পাইরেটেড কপি লোড হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাউনলোডের জন্য দর কষাকষির চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হলেও, মাইক্রোসফটের সাপোর্ট ব্যতীত ঝুঁকি নেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।

এ ছাড়া, কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের জরুরি সহায়তা পাওয়া সম্ভব হবে কি? কোনো কোম্পানির পণ্য চুরি করার পর গ্রাহক সহায়তা দিয়ে বিনোদন দেওয়ার আশা করাটা বোধহয় উচিত নয়।

কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া

একইভাবে নিয়মিত উইন্ডোজ হালনাগাদ সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে এবং অপারেটিং সিস্টেমকে সর্বোত্তম স্তরে কাজ করতে সহায়তা করে। তাই সিস্টেম হালনাগাদ না করলে উইন্ডোজের কর্মক্ষমতা কমে যাবে। আর এটি অপারেটিং সিস্টেমের কোনো ম্যালওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উদাহরণ হিসেবে, ডিস্ট্রিবিউটর ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে একটি ক্রিপ্টোজ্যাকার সংযোগ করে দিতে পারে। যা পরবর্তীতে গোপনে সিস্টেমের রিসোর্স ব্যবহার করে ক্রিপ্টো মাইনিং করতে সহায়তা করবে।

এ ছাড়া, কম্পিউটার বেশি লোড হয়ে গেলে প্রসেসিংয়ের জন্য বেশিরভাগ রিসোর্স পূর্ণ হয়ে যায়, ফলে কম্পিউটারের গতি ধীর করে দেয়। তাই সিস্টেম ক্র্যাশ, গতিমন্থর, ল্যাগিং ইত্যাদির সম্মুখীন হতে না চাইলে পাইরেসি থেকে দূরে থাকা ভালো।

মাইক্রোসফটের পণ্য ও পরিষেবা ব্যবহারের অ্যাক্সেস হারানো

উইন্ডোজের পাইরেটেড কপির আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো পূর্ণ নিশ্চয়তা নিয়ে মাইক্রোসফটের অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করা যায় না। কারণ মাইক্রোসফট যেকোনো সময় ভুয়া লাইসেন্সিং তথ্যাদি শনাক্ত করতে পারে। যার ফলে ব্যবহারকারী অন্য পরিষেবাগুলোর অ্যাক্সেসও হারাতে পারেন, এমনকি সেগুলোর জন্য অর্থ প্রদান করলেও।

এ ছাড়া, মাইক্রোসফট স্টোরের মতো এটির বেশিরভাগ পণ্য ব্যবহার করার অ্যাক্সেস ব্লক করে দিতে পারে। মূল উইন্ডোজে হালনাগাদ না করা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে থার্ড-পার্টি সফটওয়্যারের ওপর নির্ভর করবে। তাই মাইক্রোসফটের পণ্য এবং পরিষেবা পেতে চাইলে পাইরেসি এড়িয়ে চলা উচিত।

হ্যাকারদের গুপ্তচরবৃত্তির সুযোগ করে দেওয়া

একটি উইন্ডোজ যখন আসল প্রোডাক্ট-কি দিয়ে সক্রিয় করা হয়, তখন এটি উইন্ডোজ অ্যাক্টিভেশন সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। একইভাবে যখন তৃতীয় পক্ষের অ্যাক্টিভেটর ব্যবহার করে সক্রিয় করা হয়, তখন অন্য সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় ব্যবহারকারীর ওপর গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যায়।

ব্যবহারকারী যখনই কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তখন সার্ভার ট্র্যাক করে সিস্টেমে ফিড করা সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পর্দার আড়ালে থাকা সার্ভারে আপলোড করে ফেলতে পারে হ্যাকার। যা ব্যক্তিকে গুরুতর সমস্যায় ফেলতে পারে, যেহেতু ব্যাকগ্রাউন্ডে কী ঘটছে তা সম্পর্কে জানা অসম্ভব।

ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়া ছাড়াও, অনুপ্রবেশকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ডেটা পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি এটি গোপনীয় হলে আইনি ঝামেলাও হতে পারে। তাই ডেটা সুরক্ষিত রাখতে উইন্ডোজ সক্রিয় করার জন্য অবৈধ পন্থা পরিত্যাগ করতে হবে।

উইন্ডোজের পাইরেটেড কপি ব্যবহারের বহুবিধ ঝুঁকি থাকায় ডেটা সুরক্ষিত এবং নিরাপদে রাখার জন্য আসল উইন্ডোজ কপি কেনা শ্রেয়। মূল সংস্করণ কেনার সামর্থ্য না থাকলে বিনামূল্যের সংস্করণ ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু ফিচার না পেলেও ঝুঁকি এড়ানো যাবে।

প্রথমবারের মতো উইন্ডোজ কেনা বা ইনস্টল করার পরিকল্পনা করলে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার শুরু করার আগে আপডেট সেটিংস কনফিগার করা, মাইক্রোসফট ডিফেন্ডার সেট আপ করা এবং ব্যাকআপ পরিকল্পনা তৈরি করতেও ভুলবেন না।

তথ্যসূত্র: মেক ইউজ অব

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া

Comments