ইন্ট্রোভার্টদের জন্য উপযোগী ৮ পেশা

অনলাইন, অফলাইন– সবদিকে কাজের ক্ষেত্রেই যেন বহির্মুখী বা চটপটে স্বভাবের মানুষদের বেশি চোখে পড়ে। যোগাযোগের দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত হওয়াই বোধহয় এর প্রধান কারণ। একই কারণে কোথাও না কোথাও পিছিয়ে থাকেন ইন্ট্রোভার্ট (অন্তর্মুখী) বা সহজ কথায় মুখচোরা স্বভাবের মানুষ। 
ইন্ট্রোভার্টদের জন্য উপযোগী ৮ পেশা
ছবি: সংগৃগীত

অনলাইন, অফলাইন– সবদিকে কাজের ক্ষেত্রেই যেন এক্সট্রোভার্ট (বহির্মুখী) বা চটপটে স্বভাবের মানুষদের বেশি চোখে পড়ে। যোগাযোগের দক্ষতায় সিদ্ধহস্ত হওয়াই বোধহয় এর প্রধান কারণ। একই কারণে কোথাও না কোথাও পিছিয়ে থাকেন ইন্ট্রোভার্ট (অন্তর্মুখী) বা সহজ কথায় মুখচোরা স্বভাবের মানুষ। 

তবে নিজের দক্ষতাগুলোকে সঠিক পথে প্রবাহিত করলে ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের জন্যও অত্যন্ত সফল ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে। এমন ৮টি পেশা নিয়েই এ লেখায় আলোচনা করা হবে, যা কি না ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের মানুষের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি মানানসই। 

সফটওয়্যার ডেভেলপার

ইন্ট্রোভার্ট মানুষেরা নিজেদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে বিভিন্ন জটিল কাজের চর্চা করেন। নিজের প্রোগ্রামিং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কোডিং, টেস্টিংসহ বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রাম চালু করার কাজগুলো করার জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজটি তাদের জন্য মানানসই হতে পারে। এ সংক্রান্ত ক্যারিয়ারে বেশ সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। পেস্কেল ওয়েবসাইটের মতে, একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতি বছর গড়ে ৮৯ হাজার মার্কিন ডলার আয় করতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্স লেখক

ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের যোগাযোগ দক্ষতা যেমনই হোক, তারা সবচেয়ে ভালোভাবে বোধহয় নিজেদের প্রকাশ করতে পারে লেখার মাধ্যমে। আর এই লেখালেখির চর্চাকে যদি পেশায় রূপ দেওয়া যায়, তাহলে অন্য অনুপযোগী কর্মক্ষেত্রে ঝক্কি পোহাতে হবে না। ফ্রিল্যান্স লেখকদের মধ্যে ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের সেইসব ব্যক্তি ভালো করতে পারবেন, যাদের গবেষণা ও লেখালেখির মতো সৃজনশীল দক্ষতা রয়েছে। 

অনলাইনে বিভিন্ন মিথষ্ক্রিয়ামূলক লেখালেখির কাজ যেমন– ব্লগ, সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট, ই-বুক, ফ্লায়ার ইত্যাদি লেখার মাধ্যমে এ কাজ শুরু করা যায়। 

ইন্ডিড ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন ফ্রিল্যান্স লেখক বছরে গড়ে ৫৮ হাজার ৫০৭ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম। তবে আয়ের আগে নিজের কলম বা কী-বোর্ডে শান দেওয়া দরকার। 

গ্রাফিক ডিজাইনিং

লেখকরা যেমন শব্দের মাধ্যমে নিজের ভাবনার প্রকাশ ঘটায়, গ্রাফিক ডিজাইনাররা দৃশ্যের মাধ্যমে তাদের চিন্তার জগতকে বাইরে ফুটিয়ে তোলে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে ইলাস্ট্রেশনের মাধ্যমে তুলে ধরার কাজটি করে গ্রাফিক ডিজাইনাররা, তা সে লোগো, ডিজাইন বা ভিজ্যুয়াল যেকোনো রূপই হোক না কেন। এজন্য তারা অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ স্যুট, ফিগমা, স্কেচসহ আরও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। 

একটানা অনেকক্ষণ একা একা কাজ করার জন্যইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিরা এ পেশা বেছে নিতে পারেন। এছাড়া এ কাজে যে খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দরকার হয়, তার জন্যও এমন স্বভাবের মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়। 

ইন্ডিড ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রাফিক ডিজাইনাররা প্রতি বছর গড়ে ৫৯ হাজার ১৯৪ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনা

এই পেশায় মূলত নির্দিষ্ট কোনো ক্লায়েন্ট বা কোম্পানির জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনা করতে হয়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান বিভিন্ন ট্রেন্ডের সঙ্গে হালনাগাদ থাকা ও বিবিধ পোস্টের জন্য নিত্যনতুন চিন্তার জন্ম দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে হয়। 

এ ধরনের কাজের সুবিধা হচ্ছে বেশিরভাগ সময় একা একাই কাজ করা যাবে, যদিও কোম্পানির আকার ও প্রকারের ওপর ভিত্তি করে কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ছোট-বড় দলের সঙ্গেও কাজ করতে হবে।

পেস্কেল ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫৭,৪৪৯ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। 

অনলাইনে অনুবাদ

অনলাইনে বিভিন্ন নথিপত্র বা অডিও ফাইলকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরের কাজটি করেন একজন অনলাইন অনুবাদক। লেখালেখি ও অনুবাদের চর্চা এবং বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শিতা থাকলে এই কাজটি বেছে নেওয়া যায়। যেহেতু কাজটি অনলাইনেই হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিরা নিজের সুবিধামতো জায়গা ও সময়ে সহজেই তা করতে পারেন। 

ইন্ডিড ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন অনলাইন অনুবাদকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫৪ হাজার ৬০১ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

ভিডিও সম্পাদনা

ইন্ট্রোভার্টদের জন্য আরেকটি দারুণ ক্যারিয়ার হচ্ছে ভিডিও এডিটিং বা সম্পাদনা। ভিডিও এডিটর হিসেবে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে, স্ক্রিপ্ট ও অন্যান্য নির্দেশনা অনুযায়ী ভিডিও সম্পাদনা করতে হবে। এসব সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো, অ্যাডোবি আফটার ইফেক্টস ইত্যাদি। ভিডিও এডিটরদের সৃজনশীল হতে হয় এবং খুঁটিনাটি বিবরণের দিকে অনেক মনোযোগ দিতে হয়। 

এ ছাড়া উল্লিখিত সফটওয়্যার সম্পর্কেও ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। ইন্ডিড ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভিডিও এডিটরের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫২ হাজার ৪৮ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। 

ট্রান্সক্রিপশন

অনুবাদের মতো ট্রান্সক্রিপশনে রূপান্তরেরও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজে মূলত কোনো ভিডিও বা অডিও ফাইল থেকে লিখিত কপি প্রস্তুত করতে হয়। সেসব ফাইলে যা যা বলা হয়েছে, তার সবটাই সাধারণত লিখিত রূপে আনতে হয়। শ্রবণ ও লিখন দক্ষতায় যুগপৎ চর্চা থাকলে এই কাজটি ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। 

ইন্ডিড ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে একজন অনলাইন ট্রান্সক্রিপশনকারীর বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৪৪ হাজার ৬০৮ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ডাটা অ্যানালিসিস

তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিদিন অকল্পনীয় পরিমাণ তথ্যের আদান-প্রদান হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের জরুরি ব্যবসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কাজে লাগান এসব তথ্য। আর এসব তথ্য একত্রিত করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার কাজটি করেন ডাটা অ্যানালিস্টরা। যাদের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ডাটা অ্যানালিস্ট হবার জন্য ভালো সাংগঠনিক ও বিশ্লেষণী দক্ষতার চর্চা থাকতে হবে। এ পেশায় কাজ করার স্বাধীন পরিবেশ থাকে বিধায় ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের জন্য পেশা হিসেবে এটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে। 

গ্লাসডোর ওয়েবসাইটের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডাটা অ্যানালিস্টের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৬৯ হাজার ৫১৭ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: মেকইউজঅব

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments