গেমিং ও ডিজাইনে মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের সুবিধা

গেমিং ও ডিজাইনে মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের সুবিধা
ছবি: সংগৃহীত

বহুমুখী ব্যবহার, দাম এবং বিভিন্ন ধরনের ফিচারের কারণে বর্তমানে গেমার ও গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে মিড রেঞ্জের গ্রাফিক্স কার্ড।

যেসব হাই-এন্ড গ্রাফিক্স কার্ডগুলোতে সেরা গেমিং অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় সেগুলোর দাম হয় আকাশচুম্বী। এ ক্ষেত্রে মিড রেঞ্জের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো আপনাকে কম খরচে বেশ ভালো গ্রাফিক্স এবং গেমিং অভিজ্ঞতা দিতে পারে। 

চলুন দেখে নেওয়া যাক, মিড-রেঞ্জের গ্রাফিক্স কার্ড এবং এগুলো কেনার সময় কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে সে সম্পর্কে।  

মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ড কী?

যারা দাম এবং পারফরম্যান্সের মধ্যে ভালো ভারসাম্য চান, তাদের জন্য মিড রেঞ্জ জিপিইউ বা গ্রাফিক্স কার্ড উপযুক্ত। তাই এটি গেমারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। যারা হাই-এন্ড গ্রাফিক্স কার্ডে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে চান না, কিন্তু একটি এন্ট্রি-লেভেল গ্রাফিক্স কার্ডের চেয়েও ভালো কিছু চান; তাদের জন্য এগুলো নকশা করা হয়েছে।

মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হাই-এন্ড কার্ডগুলোর তুলনায় তুলনামূলক সস্তা। সাধারণত ২৫০ ডলার থেকে ৫০০ ডলারের মধ্যে এগুলো পাওয়া যায়। কম দাম হওয়া সত্ত্বেও এগুলো খুব শক্তিশালী। এগুলো ১০৮০পি বা ১৪৪০পি স্ক্রিনে সর্বোচ্চ গ্রাফিক সেটিংসে বেশিরভাগ নতুন এবং ভারী গেম চালাতে সক্ষম।

মিড-রেঞ্জ জিপিইউ এবং হাই-এন্ড জিপিইউ-এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে তাদের সিইউডিএ কোর বা কম্পিউট ইউনিটের সংখ্যা। এই দুটিই জিপিইউ-এর পারফরম্যান্স স্তর নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পারফরম্যান্সের পেছনে এই দুটিই শুধু একচ্ছত্রভাবে কাজ করে না, এর সঙ্গে অন্যান্য বেশ কয়টি বিষয়ও রয়েছে। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এনভিডিয়া আরটিএক্স ৩০৬০-এর ৩৫৮৪ সিইউডিএ কোর রয়েছে, যেখানে এনভিডিয়া আরটিএক্স ৩০৯০-এ ১০৪৯৬ সিইউডিএ কোর রয়েছে। অন্যদিকে, এএমডি আরএক্স ৬৬০০-এর ২৮ সিইউ রয়েছে, যেখানে এএমডি আরএক্স ৬৯০০ এক্সটি-এ ৮০ সিইউ রয়েছে।

মিড রেঞ্জ জিপিইউ ব্যবহারের সুবিধা

মূল্য এবং প্রাপ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে মিড রেঞ্জের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হাই-এন্ড গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা প্রদান করে। মিড-রেঞ্জ জিপিইউ ব্যবহারের প্রধান কিছু সুবিধা দেখে নেওয়া যাক।

পয়সা উসুল পারফরম্যান্স

মিড রেঞ্জের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হাই-এন্ড জিপিইউগুলোর বিপরীতে আপনার টাকার ওপর চাপ কমাবে এবং বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেবে। এগুলোয় রে ট্রেসিং, ডিএলএসএস, এক্সইএসএস এবং এফএসআর-এর মতো নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তিও রয়েছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের ফ্ল্যাগশিপ বা হাই-এন্ড জিপিইউগুলোর মতোই এগুলো পারফর্ম করতে পারে।

এনভিডিয়া-এর জিফোর্স আরটিএক্স ৩০৬০ টিআই-কে আরটিএক্স ২০৮০ সুপার-এর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নতুন আরটিএক্স ৩০৬০ টিআই পুরানো আরটিএক্স ২০৮০ সুপার-এর থেকে কিছুটা ভালো পারফর্ম করেছে। আরটিএক্স ৩০৬০ টিআই গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ দ্রুত ছিল। অথচ যেখানে আরটিএক্স ২০৮০ সুপার-এর দাম ৬৯৯ ডলার, সেখানে এর দাম ৩৯৯ ডলার। 

কম শক্তি খরচ এবং কম তাপ উৎপাদন  

শক্তি খরচের দিক দিয়ে নতুন মিডরেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হাই-এন্ড কার্ডগুলোর তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ। মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের জিপিইউ ফেব্রিকেশন প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। গ্রাফিক্স কার্ডগুলো সাধারণত সর্বাধিক ২০০ ওয়াট থেকে ২২০ ওয়াট এর মধ্যে শক্তি খরচ করে থাকে। এরা মধ্যম স্তরের শক্তিতেই বেশ ভালোভাবে কাজ চালিয়ে নিতে সক্ষম। অর্থাৎ এগুলো কম তাপ উৎপাদন করে এবং কম শক্তি ব্যবহার করে, যা বিভিন্ন কারণেই উপকারী হতে পারে।

মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্সকার্ডগুলোতে ভারী কাজ করার সময় হাই-এন্ড জিপিইউগুলোর তুলনায় কম তাপ উৎপাদন করে। যার কারণে নিরাপদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এগুলোকে শীতল রাখতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না।

কমপ্যাক্ট ফর্ম ফ্যাক্টর

যেহেতু মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো কম শক্তি ব্যবহার করে এবং কম তাপ উৎপন্ন করে, তাই সেগুলোর নকশা সাধারণত হাই-এন্ড জিপিইউগুলোর তুলনায় আরও বেশি কমপ্যাক্ট বা আঁটসাঁট হয়। বেশিরভাগ মিড-রেঞ্জ জিপিইউগুলোর একটি আদর্শ আকার থাকে। যা অনুভূমিকভাবে রাখা হলে একটি এটিএক্স মাদারবোর্ডের দৈর্ঘ্যের সমান হয়।

যেহেতু মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো অনেক কম জায়গা নেয়, সেহেতু একটি ছোট আকারের শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরির জন্য এই গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হতে পারে বেশ ভালো একটি বিকল্প। যার ফলে একটি মিনি-আইটিএক্স কেসের মধ্যে অন্যান্য যন্ত্রাংশ রাখার আরও জায়গা তৈরি করে এই গ্রাফিক্স কার্ডগুলো। পারফরম্যান্সে আপস না করে আপনি এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী কিন্তু কমপ্যাক্ট কম্পিউটার তৈরি করতে পারবেন।

আপনার পিসির জন্য মিড-রেঞ্জ জিপিইউ নির্বাচনের আগে কিছু বিবেচ্য বিষয়।  

বাজারে মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের অসংখ্য মডেল রয়েছে। তাই আপনার পিসির জন্য সঠিক মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ড বেছে নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই বেশ বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে। তাই আপনি যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তার জন্য রয়েছে কিছু টিপস। 

বাজেট বরাদ্দ

আপনি যদি একেবারে শূন্য থেকে একটি গেমিং পিসি তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার বাজেটের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ জিপিইউতে বরাদ্দ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে, আপনার বাজেট যদি ১ লাখ টাকা হয়, তাহলে আপনি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে একটি মিড রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন।

রেফারেন্স ডিজাইন বনাম এআইবি মডেল

একটি রেফারেন্স বা ফাউন্ডারস সংস্করণের জিপিইউ, এআইবি বা অল-ইন বোর্ড মডেলগুলোর থেকে ছোট এবং কম ব্যয়বহুল হওয়ায় তুলনামূলক ভালো বলে মনে হতে পারে। তবে আপনি যদি আরও উন্নত পাওয়ার ডেলিভারি সিস্টেম, একটি শক্তিশালী কুলিং সলিউশন এবং ওভারক্লক করার ক্ষমতাসহ একটি জিপিইউ চান, তাহলে তৃতীয় পক্ষের নির্মাতাদের তৈরি কাস্টম-মেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হতে পারে ভালো একটি পছন্দ। 

ফর্ম ফ্যাক্টর

আপনার পিসি কেসে একটি পূর্ণ-আকারের গ্রাফিক্স কার্ড রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না তা আগে নিশ্চিত করুন। যদি জায়গা কম থাকে, তাহলে একটি কমপ্যাক্ট সিঙ্গেল-ফ্যান বা ডুয়াল-ফ্যান জিপিইউ ব্যবহারের কথা বিবেচনা করুন। যা আপনার কেসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

পিএসইউ রিকোয়ারমেন্টস 

আপনার পিএসইউ বা পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট আপনি যে জিপিইউ কেনার পরিকল্পনা করছেন তার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করতে পারবে কি না তা আগে পরীক্ষা করে দেখুন। মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য সাধারণত ৫৫০ ওয়াট থেকে ৬৫০ ওয়াট-এর ওয়াটেজসহ একটি পিএসইউ যথেষ্ট।

পাওয়ার কানেক্টরস 

আপনার পিএসইউতে আপনার জিপিইউ-এর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পিসিআইই পাওয়ার কানেক্টরস আছে কি না তা নিশ্চিত করুন। বেশিরভাগ মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ৬-পিন এবং ৮-পিন পাওয়ার ক্যাবলের সংমিশ্রণ প্রয়োজন হয়।

মেমরির ধারণক্ষমতা

মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো সাধারণত ৮জিবি থেকে ১২জিবি ভি র‌্যাম এর হয়। যেগুলো ১০৮০পি, ১৪৪০পি, এমনকি ৪কে-এ গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট। আপনি যদি আরও উচ্চ-রেজ্যুলেশনের ভারী গেমস খেলার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনার একটি উচ্চতর মেমরি ক্ষমতাসহ জিপিইউ-এর প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১০ জিবি বা তারও বেশি মেমোরি লাগতে পারে।

মেমরি ব্যান্ডউইথ

উচ্চ মেমরির পাশাপাশি উচ্চ ব্যান্ডউইথ একটি মিড-রেঞ্জের জিপিইউ-এর পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এনভিডিয়ার জিফোর্স আরটিএক্স ৩০৬০ এর ৮জিবি ভেরিয়েন্টটির বাস-এর প্রস্থ এবং ব্যান্ডউইথের উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে আসল ১২জিবি মডেলের তুলনায় এটি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ধীরগতির ছিল।

৩০০ ডলার মূল্যের সাব সেগমেন্টে, এনভিডিয়া, এএমডি এবং ইন্টেল এর বেশ কিছু আকর্ষণীয় মিড রেঞ্জ জিপিইউ রয়েছে। আপনি যদি রিয়েল-টাইম রে ট্রেসিংয়ের চেয়ে রাস্টারাইজেশন পারফরম্যান্সের দিকে বেশি আগ্রহী হন, তাহলে ৩৩৯ ডলারের এএমডি রেডন আরএক্স ৬৭০০এক্সটি হতে পারে সেরা একটি পছন্দ।

আর আপনি যদি আরও ভালো রে ট্রেসিং পারফরম্যান্সযুক্ত মিড-রেঞ্জ জিপিইউ খুঁজে থাকেন তাহলে, ইন্টেল আর্ক এ৭৭০ এবং জিফোর্স আরটিএক্স ৩০৬০ উভয়ই হবে দুর্দান্ত পছন্দ। 

মিড-রেঞ্জ গ্রাফিক্স কার্ডগুলো তাদের পারফরম্যান্স, শক্তির ব্যবহার এবং কমপ্যাক্ট ফর্ম ফ্যাক্টরের একটি সুষম মিশ্রণের মাধ্যমে বাজেটের মধ্যে সেরাটাই দিয়ে থাকে। কম বিদ্যুত খরচ এবং কম তাপ নির্গত হওয়ার কারণে মিড-রেঞ্জ জিপিইউগুলোর বড় ধরনের কুলিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না। যার কারণে অনেক জায়গা বেঁচে যায়। আর কম বাজেটে বেশ দুর্দান্ত গেমিং অভিজ্ঞতাও প্রদান করে এটি। 

তথ্যসূত্র: এমইউও

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments

The Daily Star  | English

The constitution: Reforms only after a strong consensus

Constitutional reforms should be done after taking people’s opinions into account, said Dr Kamal Hossain, one of the framers of the constitution.

2h ago