স্টক ফটোগ্রাফিতে ভালো করার ৭ উপায়

এক দশক আগেও স্টক ফটোগ্রাফির বাজার বেশ তুঙ্গে ছিল। আর তাই আলোকচিত্রীদের জন্য উপার্জনের ভালো পথও খোলা ছিল। কিন্তু দিন দিন স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বাজারের মজুদ এখন আকাশচুম্বী। 
স্টক ফটোগ্রাফিতে ভালো করার ৭ উপায়
ছবি: রয়টার্স

এক দশক আগেও স্টক ফটোগ্রাফির বাজার বেশ তুঙ্গে ছিল। আর তাই আলোকচিত্রীদের জন্য উপার্জনের ভালো পথও খোলা ছিল। কিন্তু দিন দিন স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বাজারের মজুদ এখন আকাশচুম্বী। 

তবে তার মানে এই নয়, পেশাদার আলোকচিত্রীরা স্টক ফটোগ্রাফিতে আগের মতো ভালো করতে পারবেন না। সেজন্য ছবিগুলো তোলার জন্য বিশেষ কিছু পদ্ধতি গ্রহণ– যা নিয়ে এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।

ভালো মানের ছবি তোলা 

সাধারণত মোটামুটি ভালো মানের স্টক ওয়েবসাইটগুলোও আলোকচিত্রীদের নামেমাত্র রয়্যালিটি মূল্য পরিশোধ করে। সেক্ষেত্রে এসব ওয়েবসাইট বেছে না নিয়ে গেটি ইমেজেস, ইমেজ প্রফেশনালস এবং শাটারস্টক অফসেটের মতো বিশেষ ওয়েবসাইটগুলোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। 

ছবি: রয়টার্স

তবে এই ওয়েবসাইটগুলোতে কাজের সুযোগ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। ছবিগুলো অবশ্যই এত বেশি ভালো মানের হতে হবে যে ওসব ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে থাকা ছবির সঙ্গে যেন পাল্লা দিতে পারে। সেজন্য নিজের ছবি তোলার মান সমৃদ্ধ করার তুলনা হয় না। 'লাইফস্টাইল ইমেজ' আর 'স্টোরিটেলিং' – এই দুটো কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। 

মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত এবং নতুন কোনো গল্প বলা হয়েছে, এমন ছবিই বেশি চায় এইসব প্রিমিয়াম ওয়েবসাইটগুলো। খুব বেশি ঘষামাজা করা ছবির আবেদন কম এসব জায়গায়। ছবিগুলো বরং হবে স্বতস্ফূর্ত ও ক্যান্ডিড, যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলোতে তোলা। 

গ্রাহকের ফরমায়েশ 

ইচ্ছেমতো ছবি তুলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করার চেয়ে বরং বিভিন্ন কাস্টমারের কাছ থেকে আসা অর্ডার অনুযায়ী কাজ করা বেশি কার্যকর হবে। প্রায় সব স্টক ওয়েবসাইটই তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে আসা ফরমায়েশের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই ফিচারটি কাজে লাগিয়ে তাই ছবি তোলা ও বিক্রয়ের বিষয়টিকে আরও সম্ভাবনাময় করে তোলা যায়। এ ছাড়া ছবি তোলার নতুন পদ্ধতি আর ধরনের সঙ্গেও পরিচিত হওয়া যাবে এর মাধ্যমে। 

ছবি: রয়টার্স

নির্দিষ্ট স্টাইল অথবা পারদর্শিতার জায়গাটি খুঁজে বের করা 

স্টক ওয়েবসাইটগুলো বেশিরভাগই ল্যান্ডস্কেপ বা নির্দিষ্ট ধারণাভিত্তিক ছবিতে ভরপুর। তাই এই দৌড়ে এগুতে গেলে প্রতিটি আলোকচিত্রীকেই নিজস্ব স্টাইল খুঁজে নিতে হবে। কোনো একটি বিষয় বা ধারণাকে কেন্দ্র করে ছবিগুলো সাজাতে হবে। এর জন্য প্রথমে কোন ধরনের ছবি এসব ওয়েবসাইটে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে, সে বিষয়ে জেনে নিতে হবে। 

এ ছাড়া নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইটকে লক্ষ্য করেও কাজ করা যায়– যেমন স্টকফুড, সায়েন্স ফটো লাইব্রেরি ইত্যাদি। নিজের পছন্দসই ও কার্যকর স্টাইল খুঁজে বের করতে হলে আগে নিজের শখ ও আগ্রহগুলো সম্পর্কে ভাবতে হবে। কেউ বই পছন্দ করে তো কেউ আকাশের তারা দেখতে ভালোবাসে। বই বা তারা– অথবা দুটোই হতে পারে একজন স্টক ফটোগ্রাফারের সেই বিশেষ জায়গা, যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে আলাদা করে তুলতে পারেন।

ছবি: রয়টার্স

নিয়মিত ছবি আপলোড

অবশ্যই সংখ্যা বা পরিমাণের চাইতে কোনো বিষয়ের মান বেশি প্রয়োজনীয়। কিন্তু স্টক ফটোগ্রাফির জগতে নজরে থাকতে হলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আদর্শ হবে প্রতি কয়েক মাসে অন্তত একশত ছবি তোলার লক্ষ্য রাখা। নিজের পোর্টফোলিও জোরদার করতে এই সংখ্যা কাজে লাগবে। তবে সেইসঙ্গে ছবির মানের দিকেও যথাযথ খেয়াল রাখতে হবে। একই ছবিকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তুলে কেউ কেউ সংখ্যাবৃদ্ধির কথা ভাবেন, কিন্তু এতে করে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য আসবে না। 

নিয়মিত চর্চা 

যদি কেউ স্টক ফটোগ্রাফিকে শখ হিসেবে নেন, তাহলে ওটা 'কাজ' বা 'পেশা' ভাবার ক্ষেত্রে তিনি বেশিদূর এগোতে পারবেন না। যেকোনো কাজের মতো এখানেও পেশাদারি মনোভাবের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে একটা নির্দিষ্ট সময় রাখতে হবে ছবি তোলার চর্চার জন্য। উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ছবি তোলাকে দেখতে চাইলে বিষয়টিতে যথেষ্ট সময় ও প্রচেষ্টার বিনিয়োগ ঘটাতে হবে। অন্যথায় ফিরতি অর্জনের আশা না করাই ভালো। আগে থেকেই কোন ধরনের ছবি তুলতে চান, সে বিষয়ে জানাশোনা রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান বা ছুটির দিন উদযাপনের ছবি যেহেতু সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে সেইসব দিনে ছবি তোলার লক্ষ্য স্থির করতে হবে। একইভাবে বিভিন্ন ঋতুর বিশেষ ছবির মজুদ রাখাও জরুরি। 

ছবি: রয়টার্স

প্রচলিত ট্রেন্ড অনুসরণ করা 

স্টক ছবির ইন্ডাস্ট্রিটে আসলে কখন কী চলছে, কোন ধরনের ছবি মানুষ বেশি পছন্দ করছে, কোন বিষয়ের ওপর ছবির বেশি চাহিদা– এসব সম্পর্কে হালনাগাদ থাকতে হবে। বিভিন্ন স্টক ফটোগ্রাফির ফোরাম বা সম্প্রদায়ের সঙ্গেও যুক্ত হওয়া যায়, এতে একই ধরনের পেশার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় থাকবে এবং যেকোনো প্রয়োজনীয় বিষয়ে দ্রুত জানা যাবে। একে অপরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণও এক্ষেত্রে একটি বাড়তি অর্জন। 

উপভোগ্যতাই শেষ কথা

স্টক ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত যখন একজন আলোকচিত্রী গ্রহণ করেন, তখন তাকে অবশ্যই দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত ছবি তোলার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। কেন না অনুশীলন ছাড়া কোনো কাজেই পারদর্শী হওয়া যায় না। অনুশীলনের জন্য অন্য আলোকচিত্রীদের সঙ্গে ছবি তোলার অভিযানে বেরিয়ে পড়া যায়। ঘোরাঘুরিও হবে, কাজের কাজও হবে। তবে শুধু দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই যে ছবি তুলতে হবে এমনটা নয়, ছবি তোলার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে উপভোগ করা জানতে হবে। উপভোগ্যতার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসবে ছবি তোলার নতুন নতুন অ্যাঙ্গেল, কম্পোজিশন ইত্যাদি। ক্যামেরাকে একসময় মনে হবে আলোকচিত্রীর বর্ধিত চোখ। 

 

তথ্যসূত্র:এমইউও

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments