সৌর বিমানের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার

সৌর বিমানের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার
প্রতীকী ছবি/ডয়চে ভেলে

এক সময়ে মানুষের যে স্বপ্ন অবাস্তব মনে হতো, পরে সেটি বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে যাত্রীবাহী বিমান চালানোর স্বপ্ন দেখছেন এক ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার৷ আপাতত ছোট আকারে তিনি সেটা করে দেখাচ্ছেন৷

জঁ-বাপ্তিস্ত লোয়াজ্লে তার সৌরশক্তি চালিত বিমানের উৎকর্ষ হাতেনাতে দেখাতে ভালোবাসেন৷ একটি উড়ালের জন্য তিনি প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে আকাশে থেকে ২২০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছেন৷ 

আকাশে 'ত্যুর দ্য ফ্রঁস'-এর ১৫তম পর্যায়ে ফ্রান্সের দক্ষিণে গ্রোলে-তে বিমানটি অবতরণ করেছে৷ এভাবে লোয়াজলে 'গ্রহের ডানা' প্রকল্পের জন্য প্রচার চালাচ্ছেন৷ 

লোয়াজলে বলেন, 'শুধু বাতাস ও সূর্যের আলোর শক্তি ব্যবহার করে দিগন্তের ওপর দিয়ে উড়তে অসাধারণ লাগে। আমাদের গ্রহ দূষণ না করেই যতদূর ইচ্ছে উড়ে যাওয়া আমার স্বপ্ন৷ সেই লক্ষ্যের দিকেই এগোচ্ছি বলে মনে হচ্ছে৷ সত্যিই অসাধারণ লাগছে৷'

এমন অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতার জন্য ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন৷ এখন পুরোপুরি সোলার প্লেন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন৷ সব জায়গায় কৌতূহলি মানুষের ভিড় হয়৷ বিমানটি কীভাবে চলে সবাই তা জানতে চান। 

এ প্রসঙ্গে লোয়াজ্লে মনে করিয়ে দেন, 'আমার বিমানটি এই প্রপেলারের সাহায্যে নিজে থেকেই টেকঅফ করে৷ দেখতে ছোট হলেও প্রপেলরের ব্যস এক মিটার৷ ব্যাটারি থেকে শক্তি আসে৷ ডানার ওপর বসানো সোলার সেল সেই ব্যাটারি চার্জ করে৷'

লোয়াজ্লে ৩ বছর ধরে এই বিমান তৈরির কাজ করেছেন এবং নিজের সঞ্চয়ের সব অর্থ এই প্রোটোটাইপে বিনিয়োগ করেছেন৷ এক গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন না করে পরিবেশবান্ধব উড়াল চালানোই হলো স্বপ্ন৷

জঁ-বাপতিস্ত গোটা বিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন৷ তিনি উদ্ভাবন ও প্রকৃতি ভালোবাসেন৷ দক্ষিণ মেরুর কাছে এক আলবাট্রস পাখি তাকে মুগ্ধ করার পর তিনি প্রথমে পানির নীচে চলে এমন এক রোবট তৈরি করেছিলেন৷

চলতি বছর লোয়াজ্লে গোটা ফ্রান্সের ওপর দিয়ে উড়ছেন৷ ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করছেন তিনি৷ তার মতে, ভবিষ্যতের পর্যটন এমনটাই হবে৷

বিমান শিল্পের অনেকেই তাকে পাগল ভাবেন৷ কারণ কোনো এক দিন শয়ে শয়ে যাত্রী নিয়ে বড় বিমানও পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে উড়বে বলে তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে৷ সেই বিশ্বাসের কারণ ব্যাখ্যা করে লোয়াজ্লে বলেন, 'আজকের যুগের বোয়িং বা এয়ারবাস বিমান সৌরশক্তিতে চলছে, এমনটা কল্পনা করা সত্যি কঠিন৷ কিন্তু আজকের সোলার সেল মাত্র ২০ শতাংশ সৌরশক্তি কাজে লাগায়৷ দশ থেকে ২০ বছরে সেটা বেড়ে হয়তো ৪০ বা ৬০ শতাংশ হবে৷ তখন হয়তো ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার গতিতে বিমান উড়তে পারবে৷ কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ উড়ালের জন্য সেটা যথেষ্ট৷

গ্রোলে থেকে টেকঅফের সময়ে লোয়াজ্লে গুরুত্বপূর্ণ এক পার্থক্য স্পষ্ট করে দিলেন৷ প্রচলিত গ্লাইডার ওড়াতে হলে দড়ির টান বা মোটরচালিত বিমানের দরকার পড়ে৷ তার জন্য বেশ জ্বালানির ব্যবহার হয়৷ লোয়াজ্লের বিমান কিন্তু শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়েই টেকঅফ করতে পারে৷

লোয়াজ্লে অবশ্য তাতেই সন্তুষ্ট নন৷ সূর্যের শক্তি কাজে লাগিয়ে ওড়ার বিষয়ে আরও মানুষের মনে উৎসাহ সৃষ্টি করতে এবার তিনি গোটা ইউরোপ ঘুরতে চান৷

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

8h ago