ফাস্ট চার্জিং কি ব্যাটারির ক্ষতি করে

ফাস্ট চার্জিং পদ্ধতিতে ব্যাটারির চার্জিং ২টি ধাপে হয়ে থাকে।
ফাস্ট চার্জিং কি ব্যাটারির ক্ষতি করে

ফাস্ট চার্জিং বা দ্রুত চার্জিং আপনার ডিভাইসকে খুব তাড়াতাড়ি জীবনীশক্তি ফিরিয়ে দিয়ে সেটিকে আবার চলতে সাহায্য করে। তবে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এর মাধ্যমে আপনি দীর্ঘমেয়াদে আপনার ফোনের ব্যাটারির ক্ষতি করছেন কিনা।

বর্তমানে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য গ্যাজেটগুলিতে ফাস্ট চার্জিং একটি আদর্শ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। এটি বেশ সুবিধাজনক। কারণ প্রচলিত চার্জিংয়ে আপনাকে যেখানে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে খুব কম সময়ের মধ্যে আপনার ডিভাইসের মাধ্যমে চার্জ করা সম্ভব।

ফাস্ট চার্জিং বেশ আকর্ষণীয় এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ব্যাটারি লাইফের উপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব আছে কিনা এবং ফাস্ট চার্জার আপনার ফোনের জন্য খারাপ কিনা; সেই ব্যাপারে অনেকের মধ্যে উদ্বেগ থাকতে পারে। তাই চলুন এ সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে নেওয়া যাক।

ফাস্ট চার্জিং কী?

ফাস্ট চার্জিং এমন একটি ফিচার যার মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসটি সাধারণ চার্জিংয়ের তুলনায় খুব দ্রুত চার্জ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ফোন বা অন্য ডিভাইস ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে কিনা, তা ডিভাইসটির ভেতরের চার্জিং সার্কিটের উপর নির্ভর করে।

চার্জিং সার্কিটটি ততটুকুই শক্তি নিতে পারবে যতটুকুর জন্যে এটিকে নকশা করা হয়েছে। যার কারণে আপনার ডিভাইসটিকে একটি ফাস্ট চার্জারের সঙ্গে সংযুক্ত করলেই সেটি দ্রুত চার্জ হবে না৷  তবে অবশ্যই আপনার স্মার্টফোনের ধীরে চার্জ হওয়ার পেছনে অন্যান্য অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই আপনাকে সেগুলিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমরা আমাদের ডিভাইসে এখন প্রচুর পরিমাণ সময় ব্যয় করি। যার কারণে এক চার্জে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সে বিবেচনা থেকে, দ্রুত চার্জ করা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কারণ এই ফাস্ট চার্জিংয়ের মাধ্যমে যখন তখন খুব কম সময়ে দিনে কয়েকবারও চার্জ দেওয়া যায়।

আমরা আজকের আলোচনায় বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে উদাহরণ হিসাবে স্মার্টফোনকেই রাখবো।

কোনটিকে ফাস্ট চার্জিং হিসেবে বিবেচনা করা হবে?

বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য ফাস্ট চার্জিং শব্দটি এখন মার্কেটিংয়ের জন্যে একটি কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এটি বেশি লক্ষণীয়।

তবে বিষয়টি অনেক সময়ই প্রতারণামূলক হতে পারে। আপনার মনে হতে পারে যে, আপনার ডিভাইসটি হয়তো ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে, এটি আসলে করে না। তাহলে কত ওয়াট হলে সেটি ফাস্ট চার্জিং হবে?

স্মার্টফোন নির্মাতারা প্রায়ই ১০ ওয়াটের বেশি হলেই সেটিকে ফাস্ট চার্জিং হিসেবে আখ্যা দিয়ে দেয়। কিন্তু ফাস্ট চার্জিং গতির নির্ধারিত কোনো ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড নেই। তবে ওয়াটের সংখ্যা যত বেশি হবে চার্জের গতির হারও তত বেশি হবে।

ফাস্ট চার্জিং কি ব্যাটারির ক্ষতি করে?

এই প্রশ্নটির পেছনে একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে, ফাস্ট চার্জিংয়ের সময় দেখা যায় আপনার ডিভাইসটি অত্যন্ত গরম হয়ে উঠছে। এর কারণ আপনি এত কম সময়ে এত উচ্চ শক্তি আপনার ডিভাইসে দিচ্ছেন। আর আপনি হয়তো ইতোমধ্যেই জানেন যে অত্যধিক তাপ আপনার ব্যাটারির জন্য খারাপ। বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জন্যে, যেগুলো বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ব্যবহার করা হয়৷ এই কারণেই ফাস্ট চার্জিং সিস্টেমগুলি তাদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা সম্ভব তাপ কমানোর চেষ্টা করে আসছে।

তাহলে ফাস্ট চার্জিং আপনার ডিভাইসের ব্যাটারির ক্ষতি করছে কি?

না, আসলে করছে না। এর কারণ ফাস্ট চার্জিংয়ের কাজের ধরন। ফাস্ট চার্জিং পদ্ধতিতে ব্যাটারির চার্জিং ২টি ধাপে হয়ে থাকে। প্রথম পর্যায়ে এগুলো যতটা সম্ভব শক্তি গ্রহণ করে নেয়। সে সময়ে সাধারণত ব্যাটারির চার্জ খালি বা কম থাকে। যার কারণে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপনগুলোয় ফলাও করে প্রচার করে যে, কীভাবে তাদের ফোনগুলো শূন্য থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট চার্জ করতে সক্ষম।

কিন্তু একবার ব্যাটারি সেই চার্জে পৌঁছে গেলে, চাপ এবং তাপ প্রতিরোধ করার জন্যে সেই সিস্টেম চার্জিংয়ের গতি কমিয়ে দেয়। এতে করে ব্যাটারি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি নিশ্চিত করা হয়। এ জন্যেই আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আপনার ফোন একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত খুব দ্রুত চার্জ হয়। কিন্তু সেই সীমার পর সম্পূর্ণ ব্যাটারি চার্জ হতে বেশ সময় লাগে।

এছাড়া আপনি দেখবেন যে, আপনার ডিভাইসের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করলে আপনার ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফাস্ট চার্জিং বন্ধ করে দেয়।

ফোন কোম্পানিগুলো যেভাবে ফাস্ট চার্জিংয়ের প্রভাবগুলো মোকাবেলা করে

স্মার্টফোন কোম্পানিগুলি ডুয়াল-ব্যাটারি নকশা ব্যবহার করে ব্যাটারির উপর ফাস্ট চার্জিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমানোর একটি উপায় তৈরি করেছে। উপায়টি হল, ২টি ব্যাটারি ফাস্ট চার্জিংয়ের উচ্চ শক্তিকে ভাগাভাগি করে নিয়ে ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

আরেকটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হল, বিভিন্ন ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার সিস্টেম। স্মার্টফোনে চার্জিং তত্ত্বাবধানের জন্য একটি নির্ধারিত ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। যা উচ্চ ইনপুট চার্জের দ্বারা ব্যাটারিকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রোধ করে। অ্যাপলের অপ্টিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং এর একটি চমৎকার উদাহরণ।

তাই আপনার ফোনের ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যারের কার্যকারিতা অনেকাংশে ঠিক করে দেয় যে, ফাস্ট চার্জিং আপনার ব্যাটারির ক্ষতি করবে কিনা।

তবে মূল কথা হল, ফাস্ট চার্জিং আপনার ব্যাটারির আয়ুকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে না। কিন্তু এই প্রযুক্তিটির পেছনের বিজ্ঞান অনুসারে, প্রচলিত 'ধীর' চার্জিংয়ের তুলনায় এর মাধ্যমে ব্যাটারি কম দীর্ঘস্থায়ী হবে।

আমরা ফাস্ট চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিয়ে বেশি চিন্তিত তা হচ্ছে এর অত্যধিক তাপ উৎপন্ন হওয়া। কিন্তু ব্যাটারির আয়ু কমার পেছনে এটি আসলে অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি।

আপনার ব্যাটারিতে ফাস্ট চার্জিংয়ের প্রভাব নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ চার্জিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যাটারির ক্ষতি রোধ করার জন্যে কাজ করে থাকে। তবে এটা স্পষ্ট যে এতে করে ব্যাটারির আয়ু কিছু হলেও প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই প্রভাবের পরিমাণ খুবই কম। তাই এটি এমন গুরুতর কিছু নয় যা আপনার উদ্বেগের কারণ হবে। তাই ফাস্ট চার্জিং নিয়ে আপনার খুব বেশি একটা চিন্তা করা উচিত হবে না।

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

তথ্যসূত্র

এমইউও

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago