কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণ চান ইলন মাস্কসহ প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা

এআই প্রযুক্তি মানবাজাতির প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এই দাবি জানানো হচ্ছে। 
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণ চান ইলন মাস্কসহ প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা
ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তি বিশ্বের সুপরিচিত ও প্রভাবশালী উদ্যোক্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় উত্থানে আশঙ্কা প্রকাশ করে অন্তত আগামী ৬ মাস এসব শক্তিশালী প্রযুক্তিগুলোর প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এসব এআই প্রযুক্তি মানবাজাতির প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এই দাবি জানানো হচ্ছে। 

অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কও আশঙ্কা প্রকাশকারীদের তালিকায় আছেন এবং তারা চাচ্ছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর যাতে আর বাড়তে দেওয়া না হয়। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভ্যাব্য ঝুঁকি নিয়ে তারা একটি খোলা চিঠি লিখেছেন যাতে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তিটি তৈরির জন্য যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে চলছে, সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রযুক্তি দুনিয়ার এক হাজারেরও বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। 

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই সম্প্রতি জিপিটি- ৪ চালু করেছে, যার ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই চ্যাটবটটির সক্ষমতা আরও বেড়েছে এবং এটি মুহূর্তের মধ্যে কঠিন ও জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি কোনো ছবিতে কী কী উপাদান আছে, তাও বুঝতে পারে। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'এআই সিস্টেমে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা সমাজ ও মানব জাতির উপর গভীর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।'

চিঠিটি লেখা হয়েছে ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউট নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তির চরমপন্থী উত্থান ও জীবনের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে। টুইটারের মালিক এবং টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এই প্রতিষ্ঠানটির একজন উপদেষ্টা। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সচেতনতার সঙ্গে তৈরি করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাসে এআই ল্যাবগুলো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সেগুলোকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব শক্তিশালী ডিজিটাল মস্কিষ্ককে কেউ তো না-ই, এমনকি তাদের নির্মাতারাও বুঝতে, ভবিষ্যদ্বানী করতে কিংবা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম।'

এসব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুয়া তথ্যের বন্যা বইয়ে দিতে পারে কিংবা মানুষের চাকরিকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় প্রতিস্থাপন করতে পারে বলে চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে। 

সম্প্রতি মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটি চাকরি প্রতিস্থাপন করবে। 

মানুষকে সেকেলে করে দেবে

খোলা চিঠিতে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, 'আমাদের কি এমন অমনুষ্য মস্তিষ্ক তৈরি করা উচিত হবে যা এক পর্যায়ে আমাদেরই সংখ্যায় ও বুদ্ধিতে পেছনে ফেলবে, আমাদের সেকেলে বানিয়ে আমাদেরই জায়গা দখল করে দেবে?'

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের লেখা একটি ব্লগ পোস্ট থেকেও উদ্বৃতি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। ওপেনএআই সম্প্রতি তাদের এক ব্লগ পোস্টে লিখেছে, অত্যধিক বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এআই প্রযুক্তি যদি যথাযথভাবে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্বৈরাচারী সরকারগুলোও এই ক্ষতি সাধন করতে পারে। 

'ঝুঁকিপূর্ণ কিছু ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে এসব প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে স্তিমিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ভবিষ্যতে', ওপেনএআই ওই ব্লগ পোস্টে লিখেছে। 

তবে খোলা চিঠিটি নিয়ে ওপেনএআই এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ইলন  মাস্ক নিজেও ওপেনএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরে দাঁড়ান এবং সম্প্রতি তিনি এটির বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর অবস্থান নিয়েছেন। 

চিঠিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তিগুলোর জন্য 'নতুন এবং সক্ষম কর্তৃপক্ষ গঠনেরও' তাগিদ দেওয়া হয়। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে নতুন প্রযুক্তিগুলোর জন্য নীতিমালা তৈরির প্রস্তাব সামনে আসে। যদিও যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য আলাদাভাবে কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করবে না। 

সূত্র: বিবিসি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments