যে ৫ ক্ষেত্রে বার্ডের চেয়ে এগিয়ে চ্যাটজিপিটি
চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুগল বার্ড উন্মোচনের পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট নিয়ে প্রতিযোগিতা জমে উঠেছে; এই দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের মধ্যে কোনটি এগিয়ে?
কাজের দিক থেকে উভয়ই প্রায় একই রকম- ব্যবহারকারীর লিখিত নির্দেশনা থেকে মুহূর্তের মধ্যেই উত্তর তৈরি করে দেয় এবং পাল্টা প্রশ্ন করা যায়। উভয় চ্যাটবটেই শক্তিশালী ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ইঞ্জিন আছে। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে চ্যাটবট দুটির দক্ষতার ক্ষেত্র ভিন্ন।
গুগলের বার্ড হচ্ছে ল্যামডার (ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশনস) প্রাথমিক ভার্সন। অসংখ্য আর্টিকেল, বই, রেডিট-টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কমেন্টস ইত্যাদির সাহায্যে এটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
চ্যাটজিপিটির মূল দক্ষতার জায়গা হচ্ছে তড়িৎ, সৃজনশীল ও মানসম্মত উত্তর তৈরি করা। দুটোর মধ্যে তুলনা করলে এই মুহূর্তে চ্যাটজিপিটিকেই সেরা বলে মনে হবে অনেকের।
যে ৫টি ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি বার্ডের চেয়ে এগিয়ে-
কোডিং
চ্যাটজিপির সেরা দক্ষতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটি লিখিত নির্দেশনা থেকে মুহূর্তের মধ্যেই কোড তৈরি করে দিতে পারে। অনেকেই হয়তো দেখেছেন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা 'ওয়ার্ডল' গেমের প্রতিদ্বন্দ্বী 'সামপ্লিট' পুরোপুরি তৈরি করা হয়েছে চ্যাটজিপিটির দেওয়া কোড থেকে।
যদিও আদর্শ প্রোগ্রামার হওয়ার জন্য চ্যাটজিপিটির এখনো অনেকদূর যেতে হবে। চ্যাটজিপিটি এইচটিএমএল, সিএসএস কিংবা জাভাস্ক্রিপ্টে কোডিং লিখলেও সেগুলো নির্ভুল হয় না। এখনো পরিপূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলেও কোডিংয়ের দিক থেকে চ্যাটজিপিটি গুগলের বার্ডের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে আছে। গুগল বলেছে, 'বার্ড এখনো কোডিং শিখছে এবং চ্যাটবটটি আপাতত কাউকে কোনো কোড লিখে দিচ্ছে না।'
যদিও ব্যবহারকারীর কিছু পশ্নের জবাবে কোড লিখছে বার্ড। প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেকরাডার 'টিক-ট্যাক-গো' গেমের আদলে একটি গেম তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর বার্ড যে কোড লিখেছে, সেটিকে মানানসই বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বার্ডের কোডিং সক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছে চ্যাটজিপিটি। হালনাগাদকৃত জিপিটি-৪ চালু করা পর চ্যাটজিপিটির কোডিং সক্ষমতা আরও বেড়েছে।
অধিক সৃজনশীল
আপনার সৃজনশীল আইডিয়াগুলোকে আরও পরিপূর্ণতা দিতে চান? কিংবা কাজের বিশ্লেষণ করতে চান? তাহলে চ্যাটজিপিটির শরণাপন্ন হতে পারেন, কারণ এটি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটটির অরেকটি দক্ষতার জায়গা। সৃজনশীলতার দিক থেকে গুগলের বার্ডের চেয়ে বেশ অনেকখানি এগিয়ে আছে চ্যাটজিপিটি।
এটিঅনেকটা সম্ভব হয়েছে চ্যাটজিপির 'ইনপুট সক্ষমতার' কারণে। যেমন- চ্যাটজিপিটির ফ্রি ভার্সনে একবারে ২ হাজার শব্দের নির্দেশনা বা কথোপকথন করা যায়। প্রিমিয়াম ভার্সনে এই সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ। পক্ষান্তরে গুগল বার্ডের ক্ষেত্রে এই সক্ষমতা মাত্র ১ হাজার শব্দ।
নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে চ্যাটজিপিটি বার্ডের চেয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ পরিচালনা করতে পারে। ফলে চ্যাটবটটি টেক্সট তৈরি, নতুন ধারণা তৈরি, কবিতা লেখায়, এমনকি স্ক্রিনপ্লে তৈরির ক্ষেত্রেও অধিক পারদর্শী।
সহজবোধ্য ব্যাখ্যা দিতে পারে
জটিল কোনো বিষয় সহজে বোঝা দরকার? চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিন। আদর্শ শিক্ষকের মতো এটি যেকোনো জটিল বিষকে সহজে বুঝিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে এখনো চ্যাটজিপিটির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও গুগল বার্ডের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে।
উদাহরণস্বরুপ- দুটি চ্যাটবটকেই 'সাগরের ঢেউ কীভাবে তৈরি হয়' জিজ্ঞেস করে দেখুন। দুটি বট ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেবে। বার্ডের উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত ও কঠিন বাক্যসমৃদ্ধ। কিন্তু চ্যাটজিপিটির উত্তর হবে কিছুটা দীর্ঘ ও সহজ ভাষায়, যাতে যে কেউ সহজে বুঝতে পারে। তথ্যগত বিবরণের বাইরেও সহজে বোঝার সুবধিার্থে চ্যাটজিপিটি অন্যান্য তুলনা উল্লেখ করবে, যেমন- পুকুরের পানিতে ঢিল ছুঁড়লে যেভাবে ঢেউ তৈরি হয়। চ্যাটজিপিটি সংশ্লিষ্ট অন্য তথ্যও দেবে। যেমন- সাগরের ঢেউয়ে চাঁদ ও সূর্যের প্রভাব। বার্ডের উত্তরে এসব থাকবে না।
চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলে মনে হবে এটি শিক্ষকতাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। কিন্তু বার্ডের ক্ষেত্রে মনে হবে এটি ভদ্রভাবে কিছু তথ্য সরবরাহ করছে।
একাধিক ভাষা বোঝে
এই মুহূর্তে বার্ড শুধু ইংরেজি ভাষাতেই কথোপকথন চালাতে পারে, যদিও গুগল বলছে তারা দ্রুতই অন্য ভাষাও যুক্ত করবে। এ ক্ষেত্রেও বার্ডকে পেছনে ফেলেছে চ্যাটজিপিটি। এই চ্যাটবটটি ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি, চীনা, আরবি, জাপানিসহ এক ডজনেরও বেশি ভাষায় প্রশিক্ষিত।
চ্যাটজিপিটি যে এসব ভাষা শুধু বুঝতে সক্ষম তা নয়, এসব ভাষাতে টেক্সটও তৈরি করতে পারে। যেমন- চ্যাটজিপিটিতে ফরাসি ভাষায় ছোট রচনা লেখা যাবে আবার জটিল গাণিতিক সমস্যারও সমাধান করা যাবে। বার্ডের পক্ষে যা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
যদিও এখনো সব ভাষাতেই চ্যাটজিপিটির সমান দক্ষতা গড়ে উঠেনি। যেহেতু, বিশ্বে ইংরেজই সবচেয়ে বেশি সাধারণভাবে ব্যবহৃত ভাষা, তাই বার্ডের মতো চ্যাটজিপিটিও ইংরেজিতেই সবচেয়ে বেশি দক্ষ।
বেশি আকর্ষণীয়
বার্ড চালু হওয়ার পর ব্যবহারকারীদের প্রথম যে অভিযোগ ছিল, সেটি হচ্ছে গুগলের এই চ্যাটবটটি অনেকটা নিষ্প্রভ, এতে মজা নেই। রসবোধের দিক থেকে বার্ডের তুলনায় চ্যাটজিপিটির অবস্থান অনেক উঁচুতে। রসবোধ তৈরি করার সময় এটি ব্যবহারকারীর সংস্কৃতিকেও বিবেচনা করে। ফলে চ্যাটজিপিটির কৌতুক বোঝা সহজ।
চ্যাটজিপিটি জটিল ও দুরূহ কথোপকথনে কিছুটা হলকা মেজাজ আনার জন্য বিভিন্ন ইমোজি ব্যবহার করে। কোনো উত্তেরের শেষ এমন একটি শব্দ বা বাক্য জুড়ে দেয়, যাতে ব্যবহারকারী পাল্টা প্রশ্ন করতে উৎসাহী হয়। চ্যাটজিপিটির উত্তরে যে প্রাণ থাকে, বার্ডের উত্তরে সেটি থাকে না।
সূত্র: টেকরাডার
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments