চ্যাটজিপিটি শিক্ষা খাতে যেসব পরিবর্তন আনতে পারে

আমরা বর্তমানে কীভাবে শিখছি ও শেখাচ্ছি, চ্যাটজিপিটি তা কীভাবে বদলে দিতে পারে, সে বিষয়ে জানব এই প্রতিবেদনে। 
চ্যাটজিপিটি শিক্ষা খাতে যেসব পরিবর্তন আনতে পারে
ছবি: এআইয়ের ইলাস্ট্রেশন/নেট অ্যাডওয়ার্ড

প্রযুক্তির বিকাশে আমাদের শেখা ও শেখানোর পদ্ধতি এখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওপেনএআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এই চ্যাটজিপিটি বা এর মতো অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলগুলো। 

আমরা বর্তমানে কীভাবে শিখছি ও শেখাচ্ছি, চ্যাটজিপিটি তা কীভাবে বদলে দিতে পারে, সে বিষয়ে জানব এই প্রতিবেদনে। 

উল্লেখ্য, এখানে শুধু চ্যাটজিপিটি বা এ ধরনের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। হুবহু এমনটা নাও ঘটতে পারে। আবার এখন যা ভাবা হচ্ছে, ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটির মতো প্রযুক্তিগুলো তার চেয়েও বেশি উপকারে আসতে পারে।

বদলে দেবে ব্যক্তিগত শেখার অভিজ্ঞতা 

চ্যাটজিপিটির অন্যতম একটি সক্ষমতা হচ্ছে এটি ব্যবহার করে যে কেউ তার নিজের প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কিছু শিখতে পারে। ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীর সক্ষমতা ও দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে পারবে এবং সে অনুসারে পাঠ তৈরি করে দিতে পারবে। ফলে কোনো বিষয় ভালোভাবে আত্মস্থ করাটা তুলনামলূক অনেক সহজ হবে।

চ্যাটজিপিটি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শেখার ধরণ, গতি ও অগ্রাধিকার ধরতে পারবে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় আরও সহজ ও কার্যকরভাবে শিখতে পারবে। এই টুল যেহেতু যেকোনো বিষয়ে আলাদা ফিডব্যাক দিতে পারে, তাই কোনো বিষয়ে ভুল ধারণা থাকলে তা খুব সহজে ধরিয়ে দিতে পারবে এটি। চ্যাটজিপিটির সাহায্যে অবশ্য এটি এখনই সম্ভব। তবে ভবিষ্যতে হয়তো আরও ভালোভাবে সম্ভব হবে।  

শিক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে

শিক্ষার প্রক্রিয়ায় শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু অনেক বড় ক্লাস বা সীমীত রিসোর্সের কারণে সঠিকভাবে সবাইকে শেখানোর ক্ষেত্রে তারা অনেক সমস্যা মোকাবিলা করেন। চ্যাটজিপিটি এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট মার্কিং কিংবা ধরাবাঁধা উত্তর আছে, এমন প্রশ্নে নেওয়া পরীক্ষার উত্তরপত্র যাচাই করতে পারে চ্যাটজিপিটি। ফলে শিক্ষকরা আরও জটিল বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে এবং শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করতে পারবে। চ্যাটজিপিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শিক্ষকরা নিজেদের শেখানো পদ্ধতিও পর্যালোচনা করতে পারবেন। তাদের শেখানোটা কতটা কার্যকর হচ্ছে, কিংবা এর আরও উন্নতি সম্ভব কি না, সেটিও পর্যালোচনা করা যাবে চ্যাটজিপিটির সাহায্যে। পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের যেসব শিক্ষা উপকরণ তৈরি করতে হয়, চ্যাটজিপিটি সেখানেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

মানসম্মত শিক্ষা আরও সহজলভ্য হবে

চ্যাটজিপিটির সাহায্যে বড় পরিসরে শিক্ষার গণতন্ত্রায়ণ সম্ভব হতে পারে। এই টুল ব্যবহার করে বিশ্বর যেকোনো প্রন্তের যেকোনো শিক্ষার্থী উচ্চ মানসম্মত শিক্ষা উপকরণে প্রবেশাধিকার পেতে পারে। ফলে বিশ্বের সব শিক্ষার্থী একই মানসম্মত শিক্ষা পাবে। সারা বিশ্বই হবে একটি গ্লোবাল ক্লাসরুম। শিক্ষার্থীরা রিয়েল টাইমে যেকোনো শিক্ষা কনটেন্ট দেখতে পারবে কিংবা বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। প্রান্তিক কিংবা অনুন্নত অঞ্চলে এই সেবা অনেক গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

সহযোগিতামূলক শিক্ষা সহজলভ্য হবে

ক্রিটিকাল থিংকিং বা কোনো বিষয়কে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশের জন্য কোলাবোরেটিভ বা সহযোগিতামূলক শিক্ষা অপরিহার্য। চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম দিতে পারে, যেখানে তারা নির্দিষ্ট প্রজেক্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতামত ভাগাভাগির সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। যেকোনো বিষয়ে বিশ্বের যেকোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সঙ্গে গ্রুপ ওয়ার্ক করার, মতামত ভাগাভাগি করার কিংবা প্রতিক্রিয়া জানানোর প্ল্যাটফর্ম হতে পারে চ্যাটজিপিটি। নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও চ্যাটজিপিটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে।

শেখার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি আসবে

চ্যাটজিপিটি গেমিফিকেশন এবং ইন্টার‌্যাক্টিভ লার্নিংয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে আরও আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্য করে তুলতে পারে। গতানুগতিক ক্লাসরুমে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সংযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আরও বড় গভীর ও কার্যকরভাবে কোনো কিছু শেখানো সম্ভব। এতে করে শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়া আরও আনন্দদায়ক হবে।

উদ্ধাবনী চিন্তার বিকাশে সহায়ক হবে

শিক্ষার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটানো। শিক্ষার্থীদের চিন্তার সহায়ক হয়ে চ্যাটজিপিটি এ ক্ষেত্রে তাদের আরও বিভিন্নভাবে উপকার করতে পারে। যেমন- কোনো বিষয়ে ব্রেনস্টর্মিং করা, নতুন আইডিয়া নিয়ে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা কিংবা কোনো বিষয়কে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ব্যাপারে চ্যাটজিপিটি শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারবে। ফলে শিক্ষার্থীদের যুক্তি-তর্ক আরও তীক্ষ্ণ হবে এবং কোনো বিষয় ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অভ্যাস তৈরি হবে।

দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্যারিয়ারে সহায়ক হবে

চ্যাটজিপিটি বাস্তব দুনিয়ার বিভিন্ন জটিল সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের আরও গভীর ধারণা দিতে পারবে এবং শিক্ষার্থীরাও সে অনুসারে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেক্টরের কর্মজীবীদের সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ারেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে চ্যাটজিপিটি। আর এই প্রযুক্তির সাহায্যে যেকোনো বিষয়ে আত্ম-উন্নয়নের সুযোগতো সব সময়ই থাকবে। তাই উদ্যমী কারও পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

সূত্র: গোবুকমার্ট
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
 

Comments