রেকর্ড হারে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলছে

রয়টার্স ফাইল ছবি

অ্যান্টার্কটিকা মহাসাগরের বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ রেকর্ড নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। গত শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে স্যাটেলাইটের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের চারপাশে সমুদ্রে বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ এখন সবচেয়ে কম।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল স্নো এন্ড আইস ডাটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ওই সপ্তাহে অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৯১ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার বা ৭,৩৭,০০০ বর্গমাইল, যা ১৯৭৯ সালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর সর্বনিম্ন।

এর আগের সর্বকালের সর্বনিম্ন বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছিল গত বছর। সর্বশেষ সাত বছরের মধ্যে তিন বছরই অ্যান্টার্কটিকায় সর্বনিম্ন বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের রেকর্ড হয়েছিল। এই বছরগুলো ছিল ২০১৭, ২০২২ এবং ২০২৩।

ফেব্রুয়ারিতে এএসআইডিসি যখন এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে, তারপর আরও কয়েক সপ্তাহ বরফ গলার মৌসুম ছিল। অর্থাৎ, সর্বশেষ প্রতিবেদনে বরফ গলার যে পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে তার পরিমাণ আরও বাড়বে।

সমুদ্রে গলে যাওয়া বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না কারণ শীতের মৌসুমে সমুদ্রের পানি জমেই বরফ তৈরি হয়।

এনএসআইডিসি বলেছে, অ্যান্টার্কটিক উপকূলের বেশিরভাগ পানিতেই এখন বরফ নেই, ফলে বরফখণ্ডগুলো ঢেউ এবং উষ্ণ আবহাওয়ার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে প্রতি বছর শীতে বরফ জমে আবার গ্রীষ্মে বরফ গলে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আর্কটিক এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। তবে গত চার দশকে অ্যান্টার্কটিকায় ব্যাপক হারে বরফ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে বরফ গলার হার যেভাবে ত্বরান্বিত হয়েছে, তাতে খারাপ কিছু ঘটার উদ্বেগ বাড়ছে।

সমুদ্রের বরফ গলে যাওয়ার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ত্বরান্বিত হয়।

সমুদ্রের সাদা বরফ ৯০ শতাংশ সূর্যের আলো আবারও মহাশূন্যে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু বরফ কমে গেলে বা না থাকলে সূর্যের আলো পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে।

এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অ্যান্টার্কটিকায় বরফের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ২০ লাখ বর্গকিলোমিটারের নিচে নেমে আসে।

নতুন রেকর্ড কতটা অস্বাভাবিক

অ্যান্টার্কটিকার বরফের আচরণকে জটিল হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা এবং তারা মনে করছেন, শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন এর পেছনে দায়ী নয়।

গত ৪০ বছরের স্যাটেলাইট ডেটার দিকে তাকালে অ্যান্টার্কটিকার বরফের বিস্তৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। তবে গ্রীষ্মকালে বরফের পরিমাণের নিম্নমুখী প্রবণতা কেবল গত কয়েক বছর ধরে দৃশ্যমান।

কম্পিউটার মডেলগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বরফের কমে যাওয়ার এই প্রবণতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। যেমনটি আমরা আর্কটিক অঞ্চলে দেখেছি, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের বরফের পরিমাণ প্রতি দশকে ১২-১৩ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে।

তবে আর্কটিক অঞ্চলের আচরণ অ্যান্টার্কটিকার মতো নয়। আমরা যদি স্যাটেলাইট ডাটার বাইরে অন্য তথ্যের দিকে তাকাই, তাহলে অন্তত ১৯০০ সাল পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত শতকের শেষদিকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ কমা শুরু হয়েছে এবং এই হার পরে আরও বেড়েছে।

সূত্র: এএফপি, বিবিসি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments