যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে অপছন্দের ব্র্যান্ডের তালিকায় ফেসবুক, টুইটার ও টিকটক

‘নৈতিকতা’ ও ‘সংস্কৃতি’ ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে মেটা ও টুইটার।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে অপন্দের ব্র্যান্ডের তালিতায় ফেসবুক, টুইটার ও টিকটক
ছবি: সংগৃহীত

টুইটার, মেটা এবং টিকটক বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম। তবে সম্প্রতিকালে '২০২৩ অ্যাক্সিওস হ্যারিস পোল' প্রকাশিত 'হানড্রেড রেপুটেশন র‌্যাংকিংয়ে' এই ব্র্যান্ডগুলো আবার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে 'ঘৃণিত' ব্র্যান্ডের তালিকায়ও স্থান পেয়েছে।

ঘৃনিত ব্র্যান্ডের তালিকায় 'টিকটক' দেখে অনেকেই একটু অবাক হওয়ার কথা, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এই জরিপের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গেছে, কোটি কোটি মাসিক সক্রিয় গ্রাহক থাকলেই যে সেই ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানকে সবাই ভালোবাসবে, এমনটা না-ও হতে পারে। সুনামের ভিন্ন ভিন্ন ৯টি ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ১০০টি কোম্পানিকে বাঁছাই করতে অ্যাক্সিওস হ্যারিস জরিপে ১৬ হাজার মার্কিন নাগরিকের মতামত নেয়। 

'নৈতিকতা' ও 'সংস্কৃতি' ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে মেটা ও টুইটার। উভয় প্রতিষ্ঠানই সম্প্রতিকালে শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করে অনেকের সমালোচনার পাত্র হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে ইলন মাস্ক টুইটার কেনার পর প্রতিষ্ঠানটিতে একের পর এক 'নাটক' লেগেই আছে। 

মার্কিন আইনপ্রণেতারা অনেক দিন ধরেই দেশটিতে টিকটক নিষিদ্ধের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। জরিপে টিকটকের খারাপ ফলাফলের পেছনে এর ভূমিকাও আছে। 

জরিপের ফলাফল অনুসারে, টুইটার, মেটা ও টিকটের বাইরেও যুক্তারষ্ট্রের আরও বড় বড় কোম্পানি দেশটির জনগণের ঘৃণিত ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান পেয়েছে।  শীর্ষ ৭টি ঘৃণিত ব্র্যান্ড যথাক্রমে-

  • দ্য ট্রাম্প অরগানাইজেশন
  • এফটিএক্স
  • ফক্স করপোরেশন
  • টুইটার
  • মেটা
  • স্পিরিট এয়ারলাইনস
  • টিকটক

মানুষের মনে ট্রাম্প অরগানাইজেশন সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এর অনেক কারণ আছে। সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ট্রাম্প অরগানাইজেশনের বিরুদ্ধে নানা অন্যায় ও অনিয়মের অভিযোগ আছে এবং বিচারাধীন অনেকগুলো মামলাও আছে।

জরিপে 'প্রতিষ্ঠানের চরিত্র', 'বিশ্বস্ততা' ও 'নৈতিকতা' ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে খারাপ করেছে ট্রাম্প অরগানাইজেশন। এই জরিপটি প্রকাশিত হয়েছিল চলতি বছরের ৩ এপ্রিল। তার ঠিক একদিন পরই প্রথম বারের মতো কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৪টি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়, যেগুলো এখন বিচারাধীন। 

২০২২ সালের নভেম্বরে পতনের পর ও বর্তমানে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এফটিএক্স আমেরিকানদের মধ্যে দ্বিতীয় ঘৃণিত প্রতিষ্ঠানের খেতাব অর্জন করেছে। এফটিএক্সের সাবেক সিইও স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইড অনুমতি ছাড়াই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লেনদেন করেছেন, যার ফলে তার বিরুদ্ধে এখন মামলা চলমান আছে। 

ডমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মামলায় ৭৮৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে আপস-মীমাংসা করে ফক্স করপোরেশন। এত বিশাল অংকের অর্থ দিয়ে মামলার মীমাংসা করা যুক্তারষ্ট্রে একটি রেকর্ড। ফক্স মিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীলদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডমিনিয়নের ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমন সংবাদ প্রচার করার পর ফক্সের বিরুদ্ধে মামলা করে ডমিনিয়ন। কিন্তু নিজেদের পক্ষে কোনো প্রমাণ না তাকায় মামলায় হেরে যাওয়ার ভয়ে বিশাল অংকের জরিমানা দিয়ে মীমাংসা করে নেয় ফক্স। এই ঘটনার কারণে ফক্সের বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে।

এ ছাড়া ব্রিটিশ পেট্রলিয়াম ও বিটকয়েন শীর্ষ ৭ ঘৃণিত ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান না পেলেও জরিপে তাদেও শোচনীয় অবস্থা প্রমাণিত হয়েছে। ২০১১ সালে গালফ ও মেক্সিকোর বিশাল অঞ্চলজুড়ে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় 'আমেরিকার সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্র্যান্ড' খেতাব জুটেছিল ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের কপালে। এই প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে 'নাগরিকত্ব' ও 'নৈতিকতা' ক্যাটাগরিতে। 

ব্যালেন্সিয়াগা ও শিইন এই তালিকায় যথাক্রমে ১০ ও ১৬ নাম্বার স্থান দখল করেছে। দুটিই ফ্যাশন ব্র্যান্ড। 

সূত্র: সিএনবিসি
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments