কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে, বেড়েছে আদায়

ডিজেল মজুত
স্টার ফাইল ফটো

বিতরণ কমলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে কৃষি ঋণ আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

তবে এই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ স্থিতিশীল থাকলেও বকেয়া বেড়েছে।

আর এসব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের কৃষি ও পল্লী অর্থায়নবিষয়ক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনটি বলছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ প্রদান কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে মোট কৃষি ঋণ বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে ১৬ হাজার ২৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকা হয়েছে।

এর মধ্যে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে কৃষি ঋণ বিতরণ সবচেয়ে বেশি কমেছে। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঋণ বিতরণ বাড়লে সার্বিক চিত্র বদলে যায়।

চলতি অর্থবছরে সরকার ৩৮ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল যা আগের বছরের বিতরণকৃত ঋণের থেকেও দুই দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য – যা মোট লক্ষ্যমাত্রার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি।

আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য দেয়া হয় সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগের বছরে একই সময়ের তুলনায় ৬৭ শতাংশ কম কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কমিয়েছে এক-পঞ্চমাংশ।

এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও ঋণ বিতরণ কমিয়েছে সাড়ে সাত শতাংশ।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ প্রায় ৫৯ শতাংশ বাড়ালেও তা সামগ্রিক বিতরণে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার পাশাপাশি জুলাই-বিপ্লব কৃষি ঋণ বিতরণে একটি বড় ভুমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি কৃষকদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।'

তিনি জানান, বোরো মৌসুমে কৃষকদের ঋণ প্রয়োজন হবে। দেশে সারা বছরে যা বোরো চাল উৎপাদন হয় তার অর্ধেকের বেশি আসে এই মৌসুমে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শফরুজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২৪ এর নভেম্বর থেকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। আর ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ঋণ বিতরণে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। রাজনৈতিক পালাবদল ও বন্যার কারণে এই মন্দা দেখা দিয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখন ভালো হচ্ছে।'

অন্যদিকে বিতরণের দিক বিবেচনায় নিলে ব্যাংকগুলো আগের বছরের তুলনায় বেশি ঋণ আদায় করেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ আদায়ে শীর্ষে থাকলেও বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে।

মুস্তাফা কে মুজেরি ঋণ আদায় বাড়াতে ক্ষুদ্রঋণ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী নেটওয়ার্ককে কৃতিত্ব দিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষি ঋণ বিতরণ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে গত সেপ্টেম্বরে ঋণ পুনরুদ্ধার বেশি হয়েছে। জুলাইয়ে ছিল সর্বনিম্ন।

চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১৯ হাজার ১১৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার ঋণ। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে সাত শতাংশ বেশি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় বেড়েছে ৫৬ শতাংশ আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কমেছে যথাক্রমে ১০ ও ৫০ শতাংশ।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৭৬৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঋণ আদায় করেছে যা জুলাইয়ে সর্বনিম্ন দুই হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় নেমে আসে।

সব কিছুর মধ্যে একটি ভালো দিক ছিলো ঋণ বিতরণের পরিমাণের স্থিতিশীলতা। কারণ আগের বছরের ২০২৪ এর শেষ ছয় মাসে ঋণ বিতরণ প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা দেখা গেছে বকেয়া ঋণে যার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

এমনকি কৃষিঋণ যা বিতরণ করা হয়েছে তার একটি বড় অংশ বকেয়ায় রুপান্তরিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে এখন।

বকেয়া কৃষি ঋণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪৩ শতাংশ বেড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ২৫ লাখ টাকা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ঋণের প্রায় ২১ শতাংশ বকেয়া হয়েছে, গত অর্থবছরে যা ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ।

মুস্তাফা কে মুজেরি মনে করেন, গত বছরের শেষের দিকে বন্যায় কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে জুলাইয়ে গণআন্দোলনের সময় উত্পাদিত পণ্যের বিপণন ও বিক্রি কমেছে।

'আগে যারা ঋণ নিয়েছিল তারা সময়মতো পরিশোধ করতে পারেননি। আর এর সাথে সাথে পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রিতেও তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে—রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় বকেয়া কৃষি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলোর কোনো বকেয়া ঋণ নেই।

মুজেরি মনে করেন, বিতরণ কমে যাওয়া ও বকেয়া বেড়ে যাওয়া কৃষি ঋণের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

তিনি মনে করেন—ক্ষুদ্র উৎপাদকরা যাতে আরও বেশি ঋণ পান, তা নিশ্চিত করতে সরকারের কড়া নজরদারি দরকার। কারণ এই কৃষকরা সময়মতো ঋণ না পেলে দেশের খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Price war in the garment sector: Exporters fear a race to the bottom

With China, Vietnam and Cambodia vying for market share, Bangladeshi exporters fear a race to the bottom on prices -- one they may not win

9h ago