যে ৯ সফট স্কিল চাকরিতে বাড়তি সুবিধা দেয়

ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চাকরির বাজার আর আগের মতো নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান চাকরির বাজার খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং টিকে থাকতে হলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাপারে দক্ষতার পাশাপাশি কিছু সফট স্কিল বা বাড়তি দক্ষতাও অনেক বড় উপকারে আসে।
ছবি: এলএস

ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে চাকরির বাজার আর আগের মতো নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান চাকরির বাজার খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং টিকে থাকতে হলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাপারে দক্ষতার পাশাপাশি কিছু সফট স্কিল বা বাড়তি দক্ষতাও অনেক বড় উপকারে আসে। 

বর্তমানে নিয়োগদাতারাও প্রার্থীর এসব সফট স্কিলগুলোকে বেশ গুরুত্ব-সহকারে বিবেচনায় নেয়। তাই এখনকার সময়ে ভালো চাকরি পেতে হলে নিজেকে সেভাবেই তৈরি করতে হবে।
 
আমরা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নয়টি সফট স্কিলের কথা উল্লেখ করব, যেগুলো আপনাকে বাকি সবার থেকে আলাদা করবে, চাকরিতে বাড়তি সুবিধা দেবে এবং আপনার স্বপ্নের চাকরিতে নিয়োগ পেতেও ভূমিকা রাখবে।  

সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী হওয়া

এটা বলা যত সহজ, করা ততটা সহজ নাও হতে পারে। চাকরিতে আপনাকে প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী মানসিকতা থাকলে অনেক কঠিন সমস্যারও সহজ ও চকমপ্রদ সমাধান বের করা যায়। কোনো অপরিচিত সমস্যার মুখোমুখি হলে 'আমি তো জানি না এখন কী করতে হবে' না বলে সমস্যাটি নিয়ে ভাবুন, আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগান, প্রয়োজনে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করুন। দেখবেন কোনো সহজ সমাধান বের হতে পারে। 

প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সমস্যা সমাধানে আপনি কী সমাধান নিয়ে আসেন, নিয়োগদাতারা সেটিও দেখতে চান। আপনি যত সৃজনশীল হবেন, তত বেশি উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হবেন এবং প্রতিষ্ঠানটিও তত উপকৃত হবে। 

সিভিতে সমস্যা সমাধানে আপনার দক্ষতা ও সৃজনশীলতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবেন।

যোগাযোগ দক্ষতা

চাকরির ক্ষেত্রে যেগাযোগের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পরিসরও বিশাল। আপনি গ্রাহক ও সহকর্মীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন, ইমেইল লিখেন কীভাবে- সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। এখন যেহেতু বেশিরভাগ যোগাযোগ ইমেইল, চ্যাট, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হয়, তাই যোগাযোগ দক্ষতা এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

যদি মনে করেন এখানে আপনার ঘাটতি আছে, তাহলে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। বর্তমানে যেকোনো শিল্পেই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা। তাই ভালো চাকরি পেতে হলে যোগাযোগে দক্ষ হতে হবে।

সময় ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বাসা থেকে কাজ করতে হতে পারে। এটি নিয়োগদাতাদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তারা চিন্তা করেন কর্মীরা কী বাসায়ও অফিসের মতোই সময়মত কাজ করবে? তাই কর্মীর সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অনেক নিয়োগদাতার গুরুত্বের তলিকায় ওপরের দিকে থাকে। 

নিজের কাজ সময়মত দক্ষতার সঙ্গে শেষ করাকেই সময় ব্যবস্থাপনা বলে। কোনো পরিদর্শক বা সুপারভাইজার না থাকলেও আপনি নিজের সময়কে কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন, সেটাই সময় ব্যবস্থাপনা। 

উন্নতি করার মানসিকতা

ক্যারিয়ারের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে ক্রমাগত উন্নতি করতে হবে। আপনি যে খাতে কাজ করছেন কিংবা পুরো চাকরির বাজারের পরিবর্তনগুলোকে আত্মস্থ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য তাই উন্নতির মানসিকতা অপরিহার্য। 

উন্নতির মানসিকতাসম্পন্ন পেশাদাররা নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে উৎসাহী থাকেন এবং ক্রমাগতভাবে নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করেন। আপনার যে দক্ষতা ইতোমধ্যেই আছে, সেটিকে আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিন। 

আপনার সিভিতেও উন্নতির মানসিকতার কথা উল্লেখ করুন। অতীতে নিজের দক্ষতা কীভাবে বাড়িয়েছেন, তা উদাহরণসহ উল্লেখ করতে পারেন। 

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা 'আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা'
 
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা 'আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা' হলো নিজের এবং অন্যদের আবেগকে উপলব্ধি, মূল্যায়ন এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা। এর অর্থ হলো আপনি আপনার চারপাশের মানুষদের এবং কর্মক্ষেত্রে যে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে সেগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।

নিয়োগদাতারা বর্তমানে এই সফট স্কিলটিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ পৃথিবীতে এখন কাজের পরিবেশ ও ধরন আমূল বদলে গেছে। করোনা মহামারির পর অনেকেই এখন তাদের কর্মক্ষেত্র এবং আশপাশের জগত নিয়ে সংগ্রাম করছে। তাই সহকর্মীর আবেগ বোঝা এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারাটা জরুরি।

এক জরিপে দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ নিয়োগদাতারাই বুদ্ধির (আইকিউ) চেয়ে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং ৭৫ ভাগ নিয়োগদাতা পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সসম্পন্ন প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেন।  

তাই বর্তমান চাকরির বাজারে ভালো করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স থাকতে হবে, সহকর্মী ও কাজের পরিবেশের প্রতি যত্নবান হতে হবে। 

দলগত কাজ

সহকর্মীর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করাটা সবার জন্য অতটা সহজ নাও হতে পারে। প্রায় সব অফিসেই এমন কিছু কর্মী থাকেন, যারা ভাবেন তারা কাজটি অন্যদের চেয়ে ভালো বোঝেন এবং ভালোভাবে করতে পারবেন। ফলে দলবদ্ধভাবে কাজ করা সহকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা তৈরি হয়, পুরো কাজের ওপরই যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

অন্যকে বিশ্বাস করা, একসঙ্গে কাজ করা এবং ধারণা আদান-প্রদান করাটা কষ্টকর মনে হতে পারে, তবে একবার যদি আপনি এ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে অনেকের চেয়ে এগিয়ে যাবেন।

আপনি যে দলগত কাজে খুবই দক্ষ, তা সিভিতে উল্লেখ করুন। চাকরির সাক্ষাৎকারেও বিষয়টি উল্লেখ করতে পারেন। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র দলগতভাবে কাজকে উৎসাহ দেওয়া হয়। 

পরিবর্তনে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা

পরিবর্তন আধুনিক কর্মক্ষেত্রের একটি বড় অনুষঙ্গ। প্রযুক্তির অভাবনীয় উত্থানের ফলে কর্মক্ষেত্রগুলো এখন আর আগের মতো নেই। সামনের বছরগুলোতেও এই পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে। যে কারণে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

গত কয়েক বছরেই কর্মক্ষেত্রে যেসব বড় বড় পরিবর্তন হয়েছে, সেগুলোর কথাই চিন্তা করুন। অনেক কোম্পানি শতভাগ অফিস থেকে শতভাগ ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাসা থেকে কাজ করার পদ্ধতিতে চলে গেছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এখন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। আবার অনলাইনেই অন্য কর্মীদের সঙ্গে কাজ করাটাও এখন নিয়মিত হয়ে গেছে। এত বিশাল পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সেরকম মানসিকতার প্রয়োজন।

ভালো শ্রোতা হওয়া

সবাই ভালো শ্রোতাদের পছন্দ করে। এটা অনেকের জন্য কঠিন কোনো কাজ না হলেও অনেকের জন্য আবার কঠিন। ভালো শ্রোতা হওয়া মানে একেবারে মুখ বন্ধ করে শুধু শুনে যাওয়া না। বরং 'আচ্ছা', 'আমি বুঝতে পেরেছি', 'বুঝতে পারিনি', মাথা নাড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে কথোপকথনে নিজেকেও শরিক করা। 

অনেক সময় অফিসে দীর্ঘ মিটিংয়ে বিরক্তি ধরে যায়। তখন ভালো শ্রোতা হওয়া হয়ে ওঠে না। 

একজন ভালো শ্রোতা হতে হলে কী করা দরকার, তা নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে পারেন, বাসায় চর্চা করতে পারেন। চাকরির সাক্ষাৎকারের সময়ও নিয়োগকর্তারা আপনার এই দক্ষতা পর্যবেক্ষণ করবে।

নেতৃত্বগুণ

সৃজনশীলতা, যোগাযোগ দক্ষতা, উন্নতির মানসিকতা, দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা আপনাকে খুব ভালো কর্মীতে পরিণত করবে সন্দেহ নেই, তবে নেতৃত্বগুণ আপনাকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে। নিয়োগদাতারা এমন কর্মী চান যারা তাদের রুটিন কাজের বাইরে যেতে আগ্রহী। 

নেতৃত্বগুণ অবশ্য উপরে উল্লেখিত সবগুলো গুণের সমন্বয়েই তৈরি হয়। আপনার মধ্যে যদি সবগুলো গুণ থাকে, তাহলে আপনি দলবদ্ধভাবে কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের চেয়েও ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। তাই কর্মক্ষেত্রে নিজের নেতৃত্বগুণ প্রদর্শন করুন। 

আপনি যদি অতীতে বড় কোনো প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তাহলে সিভিতে তা ‍উল্লেখ করুন। 

সূত্র: টপ রেজুমি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments