চাকরির সাক্ষাৎকারে যে ৭টি বিষয়ে খেয়াল রাখেন নিয়োগকর্তারা

ছবি: সংগৃহীত

কোনো চাকরির সাক্ষাৎকার শেষে তা কতটা ভালো হয়েছে, নিয়োগকারী সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না এসব প্রশ্ন নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন প্রার্থীরা। ছোটখাটো ভুলের কারণে তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে হয় অনেককে। 

অভিজ্ঞদের কাছ থেকে জানা গেছে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যোগ্যপ্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৭টি অজানা বিষয় সম্পর্কে।  

নিয়োগকারীরা চান হাইলাইট রিল, সব কিছুর তালিকা নয়  

সাক্ষাকারের সময় প্রার্থীকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে বললে কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে বেশিরভাগ মানুষ জীবন বৃত্তান্তের উল্লেখ থাকা তথ্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করার ভুলটি করে বসেন। 

কারণ প্রত্যেক প্রার্থী সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশের সময়টুকুতে নিয়োগকারীরা তাদের সিভি এক নজর দেখে নেন। যার ফলে একই তথ্য পুনরায় শোনার আগ্রহ তাদের থাকে না। বরং উক্ত প্রশ্নটির মাধ্যমে নিয়োগকারীরা প্রার্থীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উল্লেখযোগ্য তথ্যগুলো সংক্ষেপে জানতে চান। 

বেশিরভাগ সাক্ষাৎকারের সময় ৩০ মিনিট হওয়ায় প্রার্থীকে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর যতটুকু সম্ভব সংক্ষেপে দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ একটি প্রশ্নের উত্তর প্রদানে বেশি সময় ব্যয় করলে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। 

মনে রাখতে হবে, একটি প্রশ্নের উত্তরের ওপর ভিত্তি করে প্রাসঙ্গিক অন্য প্রশ্নও করতে পারে নিয়োগকারীরা। 

নিয়োগকারীর পদ বুঝে উত্তর দিন, উত্তম প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন 

সফল সাক্ষাৎকারের অন্যতম কৌশল হলো নিয়োগকারীর পদ অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। কারণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবার চাহিদা একরকম নয়। 

যেমন, পরিচালক জানতে চাইবেন প্রার্থী কাজটি করতে পারবে? সে কি দলের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে? সে প্রতিষ্ঠানের জন্য কি যথোপযুক্ত? অন্যদিকে ম্যানেজার জানার চেষ্টা করবে প্রার্থী তাকে অহেতুক বিরক্ত করা ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে কি না, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সক্ষম কি না, কী ধরনের সহায়তা তাকে করতে হবে ইত্যাদি। 

একটি সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় কাজ করে প্রতিষ্ঠানের প্রার্থী সংগ্রহকারী, নিয়োগকারী এবং নিয়োগকারী ব্যবস্থাপক। মনে রাখতে হবে, নিয়োগকারী ব্যবস্থাপকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়, নিয়োগকারীর নয়। 

কেবল শব্দ উচ্চারণে নয়, অঙ্গভঙ্গিতে প্রকাশ পায় সাক্ষাৎকারের সফলতা 

সাক্ষাৎকার প্রদানকালে প্রার্থীর আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশে কণ্ঠস্বর যতটুকু ভূমিকা পালন করে, ততটুকু ভূমিকা পালন করে তার দৈহিক অঙ্গভঙ্গিও। 

সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশ করা, চেয়ারে বসা, হাত নাড়িয়ে কথা বলা, মৌখিক অভিব্যক্তি, চোখের চাহনি সবকিছু লক্ষ্য করেন নিয়োগকারীরা। এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যাচাই করা হয় প্রার্থীর স্মার্টনেস, ব্যক্তিত্ব এবং আত্নবিশ্বাস। 

তাছাড়া অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নিয়োগকারীরা প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া গ্রহণের মানসিকতার পাশাপাশি মুখের অভিব্যক্তি এবং চোখের চাহনি দ্বারা উত্তম শ্রোতার বৈশিষ্ট্য যাচাই করেন। এই সিগন্যাল আদান-প্রদানের ওপর সাক্ষাৎকারের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। 

তাই সাক্ষাৎকারের প্রশ্নোত্তর পর্বে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে নজর রাখতে হবে অঙ্গভঙ্গির দিকেও।   

এক নয়, সাফল্যের একাধিক গল্পের তালিকা করুন

কর্মজগতে প্রবেশকালের ওপর নির্ভর করে প্রায় সবারই অন্তত একটি সাফল্যের ঘটনা থাকে। তবে সাক্ষাৎকারে নিজেকে আলাদা প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চাইলে একাধিক সাফল্যের উদাহরণ থাকা উচিত। 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা প্রত্যেকের কাছে ঘুরেফিরে একই ধরনের গল্প শোনার পর যখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তখন কিছু সামনে আসলে প্রার্থী বাছাইয়ের ওপর তার প্রভাব পড়ে। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ভিন্নতার দিকটির দিকেও তারা লক্ষ্য রাখে। 

ফলো-আপ ইমেইল চাকরির প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয়   

চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরে অনেক সময় কোনো প্রকার বার্তা না পেয়ে হতাশায় দিন কাটে প্রার্থীদের। সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক চাপের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।  

প্রার্থী যদি এরকম বিড়ম্বনার শিকার হন তাহলে বুঝতে হবে তিনি অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের তালিকাভুক্ত কিংবা সাক্ষাৎকার ভালো হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ততটা উপযুক্ত নন। 

তবে প্রার্থী যদি অন্য কোথাও চাকরির নিয়োগে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে ই-মেইলের মাধ্যমে সেটি জানিয়ে তাদের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ফলোআপ ই-মেইল বার্তা কখনো চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে না।   

ধন্যবাদ বার্তা নেটওয়ার্কিং সুযোগ বাড়ায়, চাকরি নয় 

সাক্ষাৎকারের পর অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে নিয়োগকারীকে ধন্যবাদ বার্তা পাঠিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। তবে, এজন্য যদি প্রার্থী চাকরি পাওয়ার আশা করেন তাহলে সেটি বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। 

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের দায়িত্বের তালিকা থাকে বিশাল, সেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যতীত নির্দিষ্ট প্রার্থীর নাম মনে রাখাটা বেশ দূরূহ। এ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং সুযোগ বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও স্বজনপ্রিয়তার অবকাশ থাকে না। 

সাক্ষাৎকার বোর্ড থেকে নয়, সহকর্মীর নিকট থেকে ধারণা নিন

চাকরির ডাক পাওয়ার পর সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় নিয়োগকারীদের আচরণের ওপর নির্ভর করে কখনো রাজি হওয়া উচিত নয়। কেন না কোনো ম্যানেজার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কখনো নিজেকে প্রথমেই ভয়ঙ্কররূপে উপস্থাপন করবেন না। তাই সহকর্মীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

মনে রাখতে হবে, সাক্ষাৎকারের কয়েক মিনিটে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতি জানা সম্ভব নয়। তাই চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে এ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। যাতে নিয়োগের পর ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল না গুনতে হয়। 

 

তথ্যসূত্র: দ্য হাফিংটন পোস্ট, ইনডিড

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া  

   

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

8h ago