ভালো কভার লেটার লিখবেন যেভাবে

প্রতীকী ছবি

চাকরির বাজারে নিয়োগকর্তার সুনজরে পড়তে একটি সমৃদ্ধ সিভির পাশাপাশি একটি পরিপূর্ণ কভার লেটার গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কভার লেটার বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু নিয়োগকর্তারা সিভির সঙ্গে একটি কভার লেটার সংযুক্ত করাকে সবসময়ই ভালো অভ্যাস বলে মনে করেন।

রেজিউমি ল্যাবের সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা যায়, ৮৩ শতাংশ নিয়োগকর্তারা মনে করেন চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তাদের মতে, কভার লেটারসহ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে তারা বেশি আগ্রহ বোধ করেন, এমনকি তাদের সিভি ততটা সমৃদ্ধ না হলেও। এই জরিপ থেকে আরও জানা যায়, কভার লেটার পাঠানো বাধ্যতামূলক না হলেও ৭৭ শতাংশ নিয়োগকর্তা কভার লেটার পাঠিয়েছেন এমন প্রার্থীদেরই পছন্দের তালিকায় ওপরে রাখেন।

কভার লেটারে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ধাপে ধাপে সাজানো থাকে বিগত সব কাজের অভিজ্ঞতা, অর্জন এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্যের উপস্থাপন, যেগুলো চাকরিদাতাকে প্রার্থীর বিষয়ে আরেকটু বেশি আগ্রহী করে তুলবে। আজকের এ লেখায় কভার লেটার সঠিক উপায়ে লেখার কিছু ধাপ বর্ণনা করা হলো।

যোগাযোগের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য

নিজের নামের নিচে যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর ও ইমেইল অ্যাড্রেস দুটোই উল্লেখ করা জরুরি। এছাড়া লিংকডইন প্রোফাইল বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের লিংকও দেওয়া যেতে পারে। এতে করে নিয়োগকর্তারা কভার লেটার পড়েই প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

সম্বোধনের ক্ষেত্রে সতর্কতা

কভার লেটার একইসঙ্গে চিঠি ও দরখাস্তের একটি সমন্বয়। তাই এতে সম্বোধনের সময় পেশাদারিত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি থাকতে হবে প্রার্থীর ব্যক্তিগত স্পর্শ। যোগাযোগটা যাতে শুরু থেকেই উষ্ণ থাকে, সেজন্য সম্বোধনে রাখতে হবে আন্তরিকতা। বেশিরভাগ ইমেইলে কর্তৃপক্ষকে সম্বোধন ব্যবহার করা হয়– 'ডিয়ার

কনসার্ন'। এমন যান্ত্রিক সম্বোধন এড়িয়ে চলতে হবে। যার বরাবর কভার লেটার পাঠানো হচ্ছে, তার নাম জানা থাকলে নাম ব্যবহার করা যায় কিংবা যে নির্দিষ্ট বিভাগের চাকরির জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তাদের বরাবরও লেখা যেতে পারে।

শুরুটা হোক সচেতনভাবে

অন্য সবকিছুর মতো কভার লেটের শুরুটা নিয়েও সচেতন থাকতে হবে। গোড়াতেই যেন গলদ না হয়। শুরুতে বলে নিতে হবে, কীভাবে এই চাকরির খোঁজ পেয়েছেন, কোন নির্দিষ্ট পদের জন্য আবেদন করছেন এবং ঠিক কেন এই চাকরির প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। আগ্রহের বিষয়ে গৎবাঁধা ধাঁচের বাইরে এমন কিছু বলা ভালো, যাতে চাকরিপ্রার্থীর প্রতিও কর্তৃপক্ষের বিশেষ আগ্রহ জন্মে।

এভাবে অন্য সব প্রার্থী থেকে নিজেকে কিছুটা আলাদাভাবে উপস্থাপন করা যায়, এমনকি সাক্ষাৎকারের আগেই। এরপর আসবে নিজেকে প্রমাণের ধাপ। কেন এই পদটির জন্য আপনি যোগ্য এবং কেন চাকরিটি আপনি দেওয়া উচিত, এ নিয়ে কিছু নিরেট তথ্যের মিশেলে যুক্তি দেখাতে হবে। এই পদ বা কাজের বিভিন্ন খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে তার সঙ্গে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাকে মেলানো গেলে দুই পক্ষেরই বুঝতে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে পয়েন্ট আকারে কথা বললে দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে।

যেমন– 'এই তিনটি কারণে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হবার উপযোগী বলে নিজেকে মনে করছি…' তারপর একে একে সেই কারণগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে কভার লেটারকে পরিপূর্ণতা দেওয়া সম্ভব।

প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা, ডিগ্রি ও অর্জন

নিয়োগদাতারা বেশিরভাগ সময় অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রার্থীকে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে আগের কোনো গবেষণাকাজ বা কোর্সের সার্টিফিকেট থেকে থাকলে সেগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করে দেওয়া যায়। পূর্বের অভিজ্ঞতা কীভাবে বর্তমানের এই কাজটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, সেদিকেও নজর কাড়া জরুরি।

মূলত নিজের কাজের সফলতাগুলো বেশ সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কভার লেটারের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে যতটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নিজের যোগ্যতার খুঁটিনাটি বিবরণ দিতে হবে এবং এই যোগ্যতাগুলো কীভাবে আকাঙ্ক্ষিত পদের জন্য দরকারি, তাও উল্লেখ করতে হবে।

একেকটি পদের জন্য এই যোগ্যতার বিবরণ ভিন্ন ভিন্ন হবে। অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিবরণ যোগ না করাই ভালো, তাতে নিয়োগদাতার বিভ্রান্তিতে পড়ার সুযোগ থেকে যায়। তবে নির্দিষ্ট কোনো চাকরির জন্য না হয়ে সামগ্রিক কোনো পেশাদারি কভার লেটার যদি হয়, তাতে সবধরনের যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ থাকে।

প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা

নিয়োগের বিবরণেই পদসংক্রান্ত সব দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা থাকে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীকে সেই দায়িত্বগুলো বিশ্লেষণ করে নিতে হবে ও নিজের পূর্ব শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নিজের তথ্য সাজাতে হবে।

সবশেষে

কভার লেটার শেষ করার আগে নিয়োগদাতাকে তাদের সময় ও মনোযোগ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে।

শেষের সম্ভাষণে 'ধন্যবাদান্তে', 'শুভেচ্ছাসহ' (Sincerely, Best Regards, With thanks, Respectfully) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে পেশাদারি ভাব বজায় রাখা শ্রেয়।

জমা দেওয়ার আগে অবশ্যই ঠিকঠাক দেখে নিতে হবে বানান, বাক্যের গঠন বা তথ্যাবলীতে কোনোকিছু ভুল থেকে গেছে কি না। যেকোনো লেখার মতো এতেও সম্পাদনা বড় ভূমিকা রাখবে। ডিজিটাল ফরম্যাটের ক্ষেত্রে পিডিএফ বা মাইক্রোসফট ডক ব্যবহার করা ভালো। ফন্টের ঝামেলা এড়াতে এক্ষেত্রে পিডিএফ ভালো কাজে দেবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

9h ago