বিদেশে উচ্চশিক্ষায় রিকমেন্ডেশন লেটার

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এক বা একাধিক সুপারিশপত্র। আমরা অনেকেই হয়তো জানি এই সুপারিশপত্রগুলো কেমন হওয়া উচিত। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায়ও অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তবে আজকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে সুপারিশপত্র আলোকপাত করছি।

বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারণা হলো রিকমেন্ডেশন লেটার যত বড় পণ্ডিত ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া যায় তত ভালো।

বাস্তবতা হলো, বড় কারো কাছ থেকে নিতে পারলে খুবই ভালো। তবে আমাদের কাছে যা বড় ওদের কাছে হয়তো একেবারেই সাধারণ আর অচেনা। আপনাকে যিনি কোন কাজ বা পড়ালেখার সূত্রে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন তার কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের রিকমেন্ডেশন লেটার দিয়ে আমি একটা স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। সেখানে তিনি ছোটবেলা থেকে আমাকে কেমন দেখেছেন, এলাকায় আমার সমাজসেবামূলক কাজ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা লেখা ছিল।

আমাদের জন্য উনি সাধারণ ইউপি সদস্য হলেও, বিদেশে কাউন্সিল মেম্বার অনেক বড় বিষয়। বিদেশে সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি দেয় কাউন্সিল। তাই আমার কমিউনিটি কাজের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য একজন ইউপি সদস্য বা চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য লোক দ্বিতীয়টি নাই। এ জন্যই আমি বৃত্তিটা পেয়েছিলাম। সেই রিকমেন্ডেশন লেটারটা ছিল বাংলায় লেখা। আমি সেটা ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে পাঠিয়েছিলাম।

যিনি আপনার জন্য সুপারিশ করছেন তার সঙ্গে আপনার কাজের সম্পর্কের কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাটাই সবচেয়ে জরুরি। আমার সেরা ছাত্র, আমার দেখা সবচেয়ে বিনয়ী এসব গতানুগতিক কথা একেবারেই কাজে আসবে না যদি না তিনি উদাহরণ আর পরিসংখ্যান দিয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন না করেন।

আবার অনেক সময় আমরা কিছু সাধারণ স্তুতিমূলক কথাও সুপারিশপত্রে লিখে দিই। কোনো ধরনের স্তুতিবাক্য আপনার রিকমেন্ডেশন লেটারকে খুব হালকা করে দিতে পারে। যেমন 'one of the best' এই কথাটি আপনার এসওপি বা রিকমেন্ডেশন লেটারে থাকলে কাজ না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেমন 'one of the best universities' এর চেয়ে যদি বলা হয় 2nd/3rd/4th most selective university, সেটা ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে। 'One of the best students' এর চেয়ে যদি বলা হয় 'He/she is among top 2% of my class (or college leaving students)' সেটা বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

2nd or 2% এগুলো উদাহরণ মাত্র। যার জন্য যেভাবে প্রযোজ্য সেভাবে রিকমেন্ডেশন লেটার উপস্থাপন করতে হবে। যেমন বুয়েটের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে 'The most selective engineering school of the country' অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে 'The most selective medical school of the country' বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে 'The highly sought after oldest and largest university of the country' এভাবে অনেকভাবেই নিজ নিজ অবস্থান উপস্থাপন করা সম্ভব।

আবার আমাদের রিকমেন্ডেশন লেটারগুলোতে শিক্ষার্থীদের এত বেশি গুণকীর্তন থাকে যে দেখলেই বুঝা যায় এসব বাড়িয়ে বলা। বিশেষ করে যখন কোনো গুণের কথা উল্লেখ করার পর ভর্তি কমিটি তার কোনো উদাহরণ দেখতে না পায় তখন পুরো রিকমেন্ডেশন লেটারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়।

একজন শিক্ষার্থীর গুণের কথা বর্ণনা দেওয়ার চেয়ে তার কাজের উদাহরণ তুলে ধরলেই ভর্তি কমিটি সম্যক ধারণা পেয়ে যায়। যেমন: সে খুব দয়ালু বলার চেয়ে যদি বলা হয় - একদিন আমাদের ক্লাসে সে এমন একটা কাজ (কাজটা বিবৃত করুন) করেছিল যেটা আমার মনে দাগ কেটেছে। উদাহরণ থেকে কমিটি বুঝে নেবে তার কী কী গুণ আছে। আলাদা করে বলার দরকারই নাই। যত বেশি উদাহরণ থাকবে রিকমেন্ডেশন লেটার তত বেশি বিশ্বাসযোগ্য হবে।

যিনি রিকমেন্ডেশন লেটার দিচ্ছেন তিনি একাডেমিক ব্যক্তি হলে অবশ্যই ভালো। কিন্তু একাডেমির বাইরেও এলাকার কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা অফিসের লাইন ম্যানেজারও আপনার জন্য রিকমেন্ডেশন লেটার দিতে পারেন। এ ধরনের রিকমেন্ডেশন লেটার বরং আরও ভালো কাজ করবে।

লেখক:

আহ্‌সান মুরাদ, পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

24m ago