বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন

বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। কিছু বিষয় ধীরে-সুস্থে গুছিয়ে এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়। নিজের আগ্রহের বিষয়, গবেষণা, ল্যাংগুয়েজ টেস্ট সবকিছু মিলিয়ে আবেদন করার প্রথম ধাপটাই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করা। আমাদের অনেকেরই বেশ কিছু কারণে পছন্দের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকে, যেখানে আমরা পড়তে চাই। তাই শুরুতেই আসে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের বিষয়টি।

বাছাই করুন নিজের পোর্টফোলিও অনুযায়ী

যুক্তরাষ্ট্রের একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুযায়ী আগে নিজের পোর্টফোলিও দেখে নেওয়া উচিত। কারো ভালো মানের গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে পারে, আবার কারো কাজের অভিজ্ঞতা। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য কমপক্ষে সিজিপিএ ৩.৫ হতে পারে, আবার কোথাও সর্বনিম্ন ৩। ল্যাংগুয়েজ টেস্ট, কাজের আগ্রহ এই প্রাথমিক বিষয়গুলোর পর অবশ্যই যেই বিভাগে আবেদন করবেন, সেখানকার ডিরেক্টরের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

কারণ অনেক সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে গৎবাঁধা বিষয় উল্লেখ থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থী অনুপাতে সেই বিভাগে ফান্ড পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা বিস্তারিতভাবে জানা যাবে আসলে ডিরেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। অনেক সময়ে ডিরেক্টর নিজেই কয়েকজন অধ্যাপক বা শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেন। এরপর যেসব শিক্ষকের সঙ্গে গবেষণার বিষয় মিলছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করাটা যৌক্তিক।

তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞান আর মানবিক বিষয়ক ফ্যাকাল্টিগুলোর ফান্ডিং পলিসি ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- আমার ক্ষেত্রে আবেদনে আগে কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়নি। কিন্তু আমার সহপাঠী যারা বিজ্ঞান অনুষদের তাদের প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্ন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি তালিকা তৈরি করা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কয়েকটি তালিকায় রাখা যেতে পারে। খুব ভালো, ভালো থেকে শুরু করে বিশ্বে ১ হাজার ২০০ পর্যন্ত র‌্যাংকিংয়ে আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা তালিকা করুন। এরপর এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগাযোগ করে সবশেষে কয়েকটিতে আবেদন করতে হবে। তালিকা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের পোর্টফোলিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজনের কাছে যেই বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যবর্তী পর্যায়ের, অন্যের জন্য সেটি নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডাইভারসিটি বা ভিন্ন সংস্কৃতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, অন্তত কিছু বিভাগে। তাই সেখানকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকা দেখে নেওয়া এবং প্রয়োজনে যোগাযোগ করে সেখানকার বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যেতে পারে।

ক্যাম্পাসের পরিবেশ এবং সেখানকার খরচাপাতি

আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, কোথাও আবেদন করার আগে সেই ক্যাম্পাসের পরিবেশ, সেই স্টেটের জীবনযাপন, খরচাপাতি, আবহাওয়া, ক্রাইম রেট কিংবা নিরাপত্তা এ জাতীয় বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ভালো হলেও একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য, সহপাঠী, সেখানকার কমিউনিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আবার কোথাও ডর্ম বা বাসা ভাড়া বেশ ব্যয়বহুল।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আবার জিমনেশিয়াম, স্বাস্থ্যবিমার জন্য আলাদা খরচ দিতে হয়, যা হয়তো একজন শিক্ষার্থীর ফান্ডিংয়ের থেকেও বেশি ব্যয়বহুল। এরপর আবহাওয়ার বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কয়েকজন সহপাঠীকে দেখেছি তুষারের সময়টাতে বেশ ঝক্কি পোহাতে। তাই আমেরিকার স্টেটগুলোর অবস্থান, আবহাওয়া সম্পর্কে সেখানকার কোনো শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া ভাল।

ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সেখানকার পরিবেশে কাজ শেখার জন্য কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ আছে, শিক্ষকরা কতটা সহযোগী মনোভাব রাখছেন এ ধরনের বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। আমার বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রায়ই বলতেন, এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা উচিত, যেখানে র‍্যাঙ্কিংয়ের চেয়ে বড় কথা হলো নিজের ভালো কাজের সুযোগ আছে। কারণ দিন শেষে একটি ভালো মানের গবেষণা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ishraque announces suspension of protest for 48 hours

He made the announcement while talking to the party men in front of Kakrail mosque this afternoon

15m ago