ক্যারিয়ার

নতুন বছরে কর্মক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন আনতে পারেন

নতুন উদ্যম ও উৎসাহ নিয়ে আরেকটি বছর শুরু হলো। বছরটি আপনি কীভাবে কাটাতে চান, তার জন্য শুরুতেই পরিকল্পনা করে নেওয়া ভালো। পর্যাপ্ত ঘুম, নিজের যত্ন, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ- নতুন বছরে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের জন্যও আলাদা পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। 
ছবি: ফ্রিপিক

নতুন উদ্যম ও উৎসাহ নিয়ে আরেকটি বছর শুরু হলো। বছরটি আপনি কীভাবে কাটাতে চান, তার জন্য শুরুতেই পরিকল্পনা করে নেওয়া ভালো। পর্যাপ্ত ঘুম, নিজের যত্ন, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ- নতুন বছরে এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রের জন্যও আলাদা পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। 

নিজের কর্মক্ষেত্রে বছরটি কেমন কাটাতে চান, তা নিয়ে বছরের শুরুতেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করে নিন। এমনভাবে পরিকল্পনা করুন, যাতে কাজগুলো পুরো জীবনেই আপনার কাজে আসে। এরকম ১০টি পরিকল্পনার পরামর্শই থাকবে আজকের লেখায়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল ঢেলে সাজান

আপনার অনলাইন প্রোফাইল, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলগুলোর দিকে তাকান। সেগুলো কি যথেষ্ট পেশাদার বা ক্যারিয়ারের জন্য কার্যকরী বলে মনে হয়? যদি মনে না হয়, তাহলে আপনার প্রোফাইলগুলোকে ঢেলে সাজান। চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট ক্যারিয়ার বিল্ডারের এক জরিপ অনুসারে, বর্তমানে ৭০ শতাংশ নিয়োগদাতা নিয়োগের আগে প্রার্থীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করেন, ২০০৬ সালে যা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু পোস্ট করবেন না, যা দেখে সম্ভাব্য নিয়োগদাতা আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে পারেন। অপেশাদার কোনো ছবি বা পোস্ট থাকলে সেটি মুছে ফেলুন এবং আপনার পেশার সঙ্গে সম্পর্কিত পোস্ট বেশি শেয়ার করুন। 

নিজের জন্য প্রতিদিন কিছু না কিছু করুন

অন্যের কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে মনোযোগ না দেওয়া মানুষের একটি মৌলিক স্বভাব। আপনিও যদি এরকম হন, তাহলে এ বছর তাতে পরিবর্তন আনুন। প্রতিদিন নিজের জন্য কিছু না কিছু করুন। দুপুরে খাবারের পর কিছুটা সময় হাঁটুন, দিনের কাজ শেষ হওয়ার পর সারাদিন কী কী করলেন, কোন কাজটি আরও ভালোভাবে করা যেত, তা নিয়ে একটু ভাবুন। দেখবেন একই কাজ পরবর্তীতে করার সময় আরও ভালোভাবে করতে পারবেন। 

ছোটখাটো এমন কিছু খুঁজে বের করুন, যা আপনার দৈনন্দিন কাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

যোগ্য হলে প্রশংসা করুন

সাফল্য উদযাপনের পরিবর্তে আপনি কি ব্যর্থতা নিয়েই বেশি চিন্তিত থাকেন? ব্যর্থতা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে কারণ অনুসন্ধান করে সমাধান বের করুন। সাফল্যকে ভালোভাবে উদযাপন করুন। আপনি ও আপনার দল হয়তো অফিসে খুব দারুণ একটা কাজ করেছে, সে ক্ষেত্রে সবাইকে উৎসাহ দিন, প্রশংসাযোগ্য হলে মন খুলে প্রশংসা করুন। আপনার একটু প্রশংসা আপনার সহকর্মীকে কতটা উজ্জীবিত করবে, তা হয়তো আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। 

ইতিবাচক থাকুন

কী নেই, তা নিয়ে সবসময় আফসোস না করে যা আছে, তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকুন। বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য আর কী কী করা প্রয়োজন, তা করুন। সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন। ভেবে দেখুন, আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন, হয়তো একটা সময় এই অবস্থানটা আপনার কাছে আকাঙ্ক্ষিত ছিল। নিজেকে ক্রমাগত উন্নতির ধারায় রাখুন। দক্ষতা বাড়ান। উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আপনার অগ্রযাত্রায় কোনো কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ৫ বছর পর ফিরে তাকালে দেখবেন কোথায় ছিলেন, আর এখন কোথায় আছেন।

নতুন কিছু শিখুন

অফিসে যে সফটওয়্যারটি নিয়মিত ব্যবহার করছেন, হঠাৎ করে সেই সফটওয়্যারে নতুন আপডেট আসার পর কাজে অসুবিধা হয়? তাহলে বুঝতে হবে নিজের দক্ষতাকেও আরেকটু হালনাগাদ করার সময় এসেছে। নতুন নতুন দক্ষতা শিখুন। আপনার বর্তমান কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক হলে আপনার অফিসও সেই দক্ষতা অর্জনের পেছনে ব্যয় করতে দ্বিধা করবে না। যদি তা সম্ভব না-ও হয়, তাহলেও অনলাইনে প্রচুর বিনামূল্যের কোর্স আছে, যেখান থেকে আপনি নতুন ও যুগোপযোগী দক্ষতা শিখতে পারেন। নতুন কিছু শেখাটা একদিনেই হবে না। এজন্য ধারাবাহিক সময় দিতে হবে। শেখার জন্য প্রতিদিন একটা সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন। 

নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হোন

নতুন চাকরির জন্য না হলেও নেটওয়ার্কিং বা বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে অংশ নিন, সবার সঙ্গে পরিচিত হোন, অনলাইনেও যোগাযোগ রক্ষা করুন। এসব সম্পর্ক ক্যারিয়ারের অমূল্য সম্পদ। কখন কোন কাজে কাকে প্রয়োজন হবে, আপনি তা কখনো আগে থকে জানবেন না। আবার এসব মানুষদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবেন। এমনকি অফিসেও নিজের ডিপার্টমেন্টের বাইরে অন্য ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। অফিসে কোনো প্রয়োজন হলে তারাই দেখবেন অন্যদের তুলনায় আপনার সমস্যাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এটা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যোগাযোগ থাকলে সবসময়ই বেশি প্রাধান্য পাওয়া যায়। 

টু-ডু লিস্ট সংশোধন করুন

অনেকেই টু-ডু লিস্ট বা করণীয় তালিকা রাখেন। কিন্তু ঠিকমতো ও ঠিক উপায়ে রাখার অভাবে কাজগুলো যথাসময়ে করা হয় না। নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে রাখার জন্য কার্যকর টু-ডু লিস্ট তৈরি রাখুন। অনেকেই ডায়েরিতে কাজগুলো লিখে রাখেন। তবে এখন যেহেতু অনলাইনের যুগ, সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাই আপনি চাইলে অ্যাপও ব্যবহার করতে পারেন। এ কাজের জন্য অসংখ্য অ্যাপ পাওয়া যায়। কোন অ্যাপটি আপনার জন্য উপযোগী, সেটি বাছাই করে ব্যবহার করুন। নিজের কাছেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকুন যে, যে কাজগুলো করবেন বলে ঠিক করেছেন, যেকোনো মূল্যে তা করবেন। 

পেশাগত জীবনের লক্ষ্য নিয়ে পুনরায় ভাবুন

যে পেশায় আছেন, সেখানে আপনি চূড়ান্তভাবে কী লক্ষ্য অর্জন করতে চান, তা নিয়ে মনে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুবই জরুরি। তাহলে প্রতিদিন বা প্রতি মাস ধরে ধরে আপনি নিজেকে সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য তৈরি করতে পারবেন। ভালো করে ভাবুন, বর্তমান পেশা থেকে আপনার চূড়ান্ত চাওয়া কী? এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না পেলে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবতে পারেন। নতুন পেশায় যাওয়ার আগে সে পেশা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেশুনে তারপর যান এবং সেখানেও চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করুন। 

ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করুন

আপনার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের প্রতিফলনই হচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড। একবার চিন্তা করুন তো, আপনার সম্পর্কে আপনার অফিস ও বাইরের সহকর্মীরা কী ধারণা পোষণ করেন। তারা কি আপনাকে দুর্দান্ত এবং জ্ঞানী একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেন? এটাই আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড। নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করুন। এটা আপনার কাজ ও আচার-আচরণের মাধ্যমেই তৈরি হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেও ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। 

অভিযোগ করা বাদ দিন

অফিসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সারাক্ষণ অভিযোগ না করে কীভাবে সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবুন ও সমাধান করুন। সারাক্ষণ অভিযোগ করলে সহকর্মীরাও আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করবে। বরং সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা থাকলে চারপাশের সবাই দেখবেন আপনাকে কতটা পছন্দ করছে ও গুরুত্ব দিচ্ছে। 

সূত্র: ক্যারিয়ার অ্যাডিক্ট

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments