অফিসে যে ১০ অপেশাদার কাজ এড়িয়ে চলা উচিত

অনেক ভালো কর্মীও এসব অপেশাদার আচরণ করে থাকেন।
ছবি: সংগৃহীত

কর্মক্ষেত্রে আমরা অনেকেই এমন অনেক কাজ করি, যেগুলো পেশাদার আচরণ নয়। অনেক ভালো কর্মীও এসব অপেশাদার আচরণ করে থাকেন।

সেগুলো কী এবং কীভাবে এসব কাজ এড়িয়ে চলবেন, তা আমরা জানাব এই লেখায়।

গুরুত্বপূর্ণ কথা মেসেজে বলা

মিটিংয়ের সময় পরিবর্তন সম্পর্কে জানাতে টেক্সট মেসেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে স্ল্যাক বা টিমস ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য অবশ্যই ইমেইল বা সরাসরি কথা বলা উচিত।

টেক্সটে অনেক সময় আপনি যা বলতে চান, তা পুরোপুরি বোঝানো সম্ভব হয় না। তাই অন্যজন ভুল বার্তা পেতে পারে। সরাসরি আলোচনা করলে বার্তা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়, যা সঠিক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের উপযুক্ত ডকুমেন্টেশনের জন্য ইমেইলও ভালো মাধ্যম।

পরামর্শ: আপনি যদি টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করাটাই বেশি পছন্দ করেন, তাহলে একটি ইমেইল দিয়ে জানিয়ে দিতে পারেন যে আপনি সবকিছু বুঝেছেন বা উভয়পক্ষের যোগাযোগ ঠিকমতো হয়েছে।

সব কাজের ক্রেডিট নেওয়া

অফিসের বেশিরভাগ কাজই দলগতভাবে করতে হয়। তাই কোনো কাজে সফলতা আসলে সে কাজে সংশ্লিষ্ট সবারই প্রশংসা করা উচিত বা বসের কাছে সবার ক্রেডিটই দেওয়া উচিত। টিম লিডার হিসেবে শুধু নিজে ক্রেডিট নেবেন না। এমনটা করলে ভবিষ্যতে কেউ আর আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাইবে না।

পরামর্শ: কোনো প্রকল্প নিয়ে কথা বলার সময় 'আমি'র পরিবর্তে 'আমরা' ব্যবহার করুন। পুরো প্রকল্পে কার কার কাছ থেকে সহযোগিতা ও উপকার পেয়েছেন, সেগুলো সবার সামনে উল্লেখ করুন। এতে সহকর্মীরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহী হবেন।

অজুহাত দেওয়া

আপনি যদি কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হন বা কোনো ভুল করেন, তাহলে সরাসরি সেটি স্বীকার করে নিন। সরাসরি ভুল স্বীকার করা এবং সৎ থাকাটাই সর্বোত্তম পন্থা, যদিও এটা কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে।

আপনি হয়তো ভাবছেন অজুহাত দিয়ে নেতিবাচক ফলাফল ও অপর পক্ষের অসন্তুষ্টি এড়াতে পারবেন, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উল্টোটাই হয়। অযথা অজুহাত দেওয়াটা অপেশাদার ও অদায়িত্বশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

পরামর্শ: কেউ শতভাগ নিখুঁত নয়। কাজ করতে গেলে ভুল হবেই। তাই আপনি যখন কিছু ভুল করেন, তখন তা স্বীকার করুন এবং সামনে এগিয়ে যান। অন্যদিকে, কোন কোন কাজের জন্য দুঃখপ্রকাশ করার দরকার নেই, সেটিও মাথায় রাখুন।

অন্যের নামে কুৎসা রটানো

মানুষ যতই কুৎসা রটাতে পছন্দ করুক না কেন, নিজের বিরুদ্ধে কটু কথা কেউই পছন্দ করেন না। অফিসে কারো বিরুদ্ধে তাদের অগোচরে কটু কথা বলাটা খুবই অপেশাদার ও অসৎ একটি কাজ। এতে করে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। আপনার যতই মনে হোক না কেন যাকে বলছেন, তার কাছ থেকে কথাটি অন্য কারও কাছে ছড়াবে না, এটা কখনোই শতভাগ নিরাপদ নয়।

ধরুন, আপনি আপনার সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে কারো বিরুদ্ধে একটা কথা বললেন। তিনি হয়তো কাউকে কথা প্রসঙ্গে কথাটি বলে দেবেন এবং তিনি আবার অন্য কাউকে বলবেন। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে আপনি খুব বিব্রতকর একটা পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

পরামর্শ: কারো বিরুদ্ধে যদি আপনার কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ থাকে, তাহলে তার পেছনে না বলে সরাসরি তাকে গিয়েই বলুন। এর ফলে সহকর্মীদের আপনার প্রতি বিশ্বাস তৈরি হবে।

পোশাক রীতি অনুসরণ না করা

অনেক অফিসেরই নির্দিষ্ট পোশাক নীতি আছে। সেটি মেনে চলা উচিত। আবার অনেক অফিসে নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নীতি নেই। সেক্ষেত্রে এমন কোনো পোশাক পরা উচিত না, যা দৃষ্টিকটু। চটকদার পোশাক পরিহার করা উচিত।

পরামর্শ: নিশ্চিত হতে পারছেন না কী পরবেন? যদি এমন বিভ্রান্তিতে পড়েন, সেক্ষেত্রে অন্য সহকর্মীদের দেখে ধারণা নিয়ে পোশাক পরাটাই ভালো সিদ্ধান্ত।

দেরিতে উত্তর দেওয়া

নিয়মিত ইমেইল, ভয়েস মেসেজ এবং স্ল্যাক মেসেজের উত্তর দেরিতে দেওয়াটা অপেশাদার ও বিরক্তিকর একটি কাজ। আপনার উত্তরের ওপর অন্য কারো কাজ নির্ভর করতে পারে। তাই অফিসের কোনো ইমেইল বা স্ল্যাক মেসেজের জবাব যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া উচিত। অনেকে অফিসের ইমেইলের উত্তর দিতে কয়েক দিন দেরি করেন কিংবা পুরোপুরি ভুলেই যান এবং অন্য কাউকে আবার মনে করিয়ে দিতে হয়। এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।

দ্রুত জবাব দিলে সহকর্মীরা কোনো কাজের জন্য আপনার ওপর ভরসা করতে পারেন এবং কাজটি করার মতো সময় আপনার হাতে আছে কি না, তা সহজে বুঝতে পারেন। ইমেইলের জবাব দ্রুত দিয়ে দিয়ে আপনার ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমে যায়।

পরামর্শ: আপনি যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করতে চান, তাহলে সেই কাজ শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব ইমেইলের জবাব দিন। আপনাকে কাজেও মনোযোগী হতে হবে, আবার ইমেইলের জবাবও সময়মতো দিতে হবে। দুটোর মধ্যে সমন্বয় করে নিলেই সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। 

ডেস্ক অগোছালো করে রাখা

আপনার কাজের ডেস্কটি সবসময় পরিপাটি থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে টেবিলের সর্বত্র সবসময় কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখাটা ভালো দেখায় না। এতে আপনার সম্পর্কে সহকর্মীরা ভিন্ন বার্তা পাবে। টেবিল যতটা সম্ভব নিজের গুছিয়ে রাখুন, প্রয়োজনে নিজের পছন্দমতো কোনো সৌন্দর্য উপকরণ ব্যবহার করুন। এতে মনে হবে আপনি আপনার কাজকে গুরুত্ব দেন। আপনার প্রায়ই অফিসে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হতে পারে। তাই নিজের ডেস্কটি এমনভাবে রাখুন, যাতে আপনি সেখানে বসাটা উপভোগ করতে পারেন।

পরামর্শ: আপনার ভালো লাগে, এমন কোনো ছবি রাখতে পারেন টেবিলে। যেমন- আপনার পরিবারের, পছন্দের কোনো মুহূর্তের কিংবা পোষা প্রাণীর ছবি রাখতে পারেন। 

একটু পর পর ফোন চেক করা

প্রতিবার কোনো নোটিফিকেশন আসলেই ফোন চেক করাটা প্রমাণ করে আপনি কাজের প্রতি মনোযোগী না। কোনো মিটিংয়ে থাকলেও ফোন বারবার চেক করা উচিত না, কারণ এতে উপস্থিত অন্যরা বিরক্ত হন। আপনার মনে হতে পারে আপনি একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারেন, কিন্তু আসলে এতে মনোযোগের অনেক ব্যাঘাত ঘটে।

সহকর্মীদের সামনে এ কাজ করাটা তাদের প্রতি রূঢ় আচরণের শামিল, একইসঙ্গে অপেশাদারও। কারণ আপনার সহকর্মীরা কিন্তু জানতে পারছেন না আপনি কি অফিসের কোনো কাজের ইমেইল চেক করছেন নাকি ব্যক্তিগত কোনো কথোপকথন চালাচ্ছেন।

পরামর্শ: মিটিংয়ের বা কাজের সময় মোবাইল দূরে রাখুন বা নোটিফিকেশন চেক করা থেকে বিরত থাকুন। একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন, যখন আপনি সবগুলো নোটিফিকেশন একসঙ্গে চেক করবেন।

দেরিতে অফিসে আসা

ট্রাফিক জ্যাম বা পারিবারিক ব্যস্ততায় এমনটা মাঝেমাঝে হতেই পারে। অধিকাংশ মানুষই এসব সমস্যা বুঝতে পারবে। কিন্তু এটা যদি প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে, তাহলে সেটা মোটেও পেশাদার আচরণ হতে পারে না। নিয়মিত দেরিতে আসলে আপনার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও কাজে সমস্যা হতে পারে। ধারাবাহিকভাবে অফিসে দেরি করে আসাটা প্রমাণ করে, অফিসের সময়ের চেয়ে আপনার নিজের সময়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ: সময়মতো অফিসে আসার চেষ্টা করুন। দেরি হলে আগে থেকে জানিয়ে দিন।

কখনোই অসুস্থতাজনিত ছুটি না নেওয়া

এমন অনেক অফিস আছে, যেখানে কর্মীদেরকে তাদের শারীরিক অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, প্রতিদিন অফিসে আসতে উৎসাহিত করা হয় এবং এমন একটা মনোভাব পোষণ করা হয় যে কেউ কোনো কারণে অফিসে আসতে না পারলে তিনি মনে হয় অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়লেন। ইদানিং অবশ্য এমন অফিস সংস্কৃতির অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে, বিশেষ করে করোনা মহামারির পর।

এখন অসুস্থ অবস্থায় অফিসে আসাটা বরং অনেক অফিসেই নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এতে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক বসই এখন কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা আগের তুলনায় আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে বিবেচনা করছেন।

পরামর্শ: আপনি যে অসুস্থ, তা অফিসকে জানিয়ে দিন। অফিসে অসুস্থতাজনিত ছুটির ইমেইল ফরম্যাট অনুসারে ইমেইল করে দিন।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Comments