ক্যারিয়ার

কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার ১০ টোটকা

কর্মক্ষেত্রে সফলতা কে না চায়। তবে বলে-কয়ে তো আর সবার হাতে সাফল্য ধরা দেয় না। সফলতা অর্জনের জন্য নিয়মিত ধৈর্য-সহকারে কাজ করে যেতে হয়। আবার শুধু কাজ করে গেলেই হয় না। কাজের ক্ষেত্রে কৌশলীও হতে হয়। 
ছবি: ফ্রিপিক

কর্মক্ষেত্রে সফলতা কে না চায়। তবে বলে-কয়ে তো আর সবার হাতে সাফল্য ধরা দেয় না। সফলতা অর্জনের জন্য নিয়মিত ধৈর্য-সহকারে কাজ করে যেতে হয়। আবার শুধু কাজ করে গেলেই হয় না। কাজের ক্ষেত্রে কৌশলীও হতে হয়। 

এমন ১০টি কৌশলের কথাই আজ জানব।  

উদ্যোগ নিন

এখনকার চাকরিগুলোতে ভালো করতে হলে কিংবা নেতৃত্ব-পর্যায়ে যেতে হলে দায়িত্ব ও ঝুঁকি নিতে হয়। গতানুগতিক এবং সবসময় নিরাপদ অবস্থানে থেকে কাজ করে বেশিদূর যাওয়া যায় না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিযোগদাতারা দেখতে চায় কারা নিত্য-নতুন আইডিয়া নিয়ে আসছে, কারা নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিচ্ছে, ব্যবসার ভালোর জন্য কে ভিন্নভাবে চিন্তা করছে, কে ভিন্নধর্মী সমাধান নিয়ে আসছে। সচেতনভাবে কাজ করুন। কোথায় অফিসের উন্নতির সুযোগ আছে, তা দেখুন, বলুন এবং করুন।  

নিজেই নিজের কাজের মূল্যায়ন করুন

ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য নিজেই নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বছর শেষে বস আপনার কাজের মূল্যায়ন করবে, সেজন্য অপেক্ষা না করে নিজেই নিজের মূল্যায়ন করুন। অফিসে নিশ্চয়ই আপনার একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিজেই নিজের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং কীভাবে তা অর্জন করা যায়, তার পরিকল্পনা করুন। কাজকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে ভাগ করে নিন। ধাপে ধাপে লক্ষ্যগুলো অর্জন করুন। লক্ষ্য একদিনে অর্জিত হবে না, তবে তার জন্য প্রতিদিনই কাজ করতে হবে। নিজেকে মূল্যায়নের জন্য সপ্তাহে বা মাসে একটি সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন। 

শেখার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকুন

ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য শেখার আগ্রহের কোনো বিকল্প নেই। নিজে শিখবেন, অন্যদের কাছ থেকে যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করবেন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে সংশোধন বা পরিবর্তন করবেন। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ুন না কেন কিংবা যে ডিগ্রিই থাকুক না কেন, সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে প্রতিনিয়ত শিখতে হবে। প্রতিদিন অফিসে যেসব কাজ করছেন, সেগুলো সম্পর্কে মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করুন। কেন কাজটি করছেন, এভাবে করছেন কেন, কোন কাজটি করলে কী লাভ, না করলে কী ক্ষতি ইত্যাদি। নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর প্রথমে কিছুটা এলোমেলো লাগতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ যাতে মনে করে আপনি শিখতে আগ্রহী এবং আপনি শেখানোর উপযুক্ত। 

প্রয়োজনগুলো আগে থেকেই অনুধাবন করুন

নতুন চাকরি এবং ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জন করতে হলে আপনার ম্যানেজার এবং দলের কী প্রয়োজন সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। নিজেকে বসের জায়গায় কল্পনা করে জিজ্ঞেস করুন তার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? সময়মতো দক্ষতার সঙ্গে কাজ শেষ করতে পারলে অফিসে এমনিতেই আপনার ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে, কর্তৃপক্ষও আপনাকে আরও বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেবে।  

ভালো যোগাযোগ রক্ষা করুন

কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের সফলতার মূল চাবি হচ্ছে যোগাযোগ। কাজ শেষ হলে বস চাওয়ার আগেই তাকে কাজ বুঝিয়ে দিন। প্রোঅ্যাকটিভ হোন। এক কাজ শেষ হলে নিজেই পরবর্তী কাজে হাত দিন। 

লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

'কঠোর পরিশ্রম' বা 'ব্যস্ত থাকার' জন্য প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দেয় না। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তার জন্যই আপনাকে বেতন দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান এবং আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। লক্ষ্য অর্জনের মানসিকতা থাকলে ক্যারিয়ারে সফলতা আসবেই। 

কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করুন

কথার চেয়ে কাজের মূল্য অনেক বেশি। অফিসে এটাই আপনার নীতি হওয়া উচিত। আপনি কী কী করতে পারেন, তা নিয়ে সারাক্ষণ কথা না বলে কাজ করে দেখান।  

বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করুন

যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রেই সহকর্মীর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। আপনার বস যত দ্রুত আপনার প্রতি ভরসা করতে পারবে, তত দ্রুত তিনি আপনার প্রতি বাড়তি সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগী হতে পারবে। আপনি যদি কাজের মাধ্যমে বসের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তার ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে তিনি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে দ্বিধান্বিত থাকবেন না। সময়মতো কাজ শেষ করার প্রতি মনোযোগী থাকুন। কাজের প্রতি নিজের অঙ্গীকার প্রমাণের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

সমাধান বের করুন

সবাই তাদের সব সমস্যার কথা ম্যানেজার বা বসকে জানায়। ফলে সবার সমস্যাই হয়ে যায় ম্যানেজারের সমস্যা। কোনো সমস্যায় পড়লে নিজে সমাধানের চেষ্টা করুন। যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার হাতে না থাকে, তাহলে বসকে সমাধানটি বলুন এবং তার সাহায্য চান। 

সহানুভূতিশীল হোন

সহকর্মীদের বুঝতে পারাও একজন ভালো কর্মীর গুণ। মেজাজ দেখানো এবং সারাক্ষণ অভিযোগ করাটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। দিনশেষে সবাই আসলে কাজই করতে আসে। তাই সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।

চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে পারলে আপনি যেমন সাফল্য অর্জন করতে পারবেন, তেমনি এগুলো আপনার নেতৃত্বগুণকে আরও বিকশিত করবে। যা আদতে আপনার দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারের জন্যই সহায়ক হবে। 

সূত্র: টপ রেজুমি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments