জাবিতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয়নি ১ মাসেও, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে গেস্ট রুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনার ১ মাস পার হলেও বিচার না হওয়ায় মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা।

মানববন্ধনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তায় সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারসহ ৪ দফা দাবিতে এ মানববন্ধন হয়।

এ ৪ দফা দাবি হচ্ছে- ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বিচার করা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা এবং আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের হাতে দেওয়া।

মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক জহির ফয়সাল বলেন, 'ছাত্রলীগ যদি হলের সিট দেয় তাহলে প্রশাসনের দায়িত্ব কী? এই প্রশাসন গণ্ডারের চামড়ার মতো হয়ে গেছে। জাতির বিবেক সাংবাদিক। তাদেরও বিচারের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হয়, এটা লজ্জাজনক।'

সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম বলেন, 'বাংলাদেশে যে বিচারহীনতার চর্চা আছে, সাংবাদিক নির্যাতনের এই ঘটনার বিচার না হওয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। হলগুলো চালাচ্ছে মূলত ছাত্রলীগ। প্রশাসনকে দাপ্তরিক কাজ ছাড়া কোনো কিছুতেই পাওয়া যায় না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি বন্ধ করা হোক।'

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, 'সাংবাদিকরা প্রশাসনের বা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অপকর্ম তুলে ধরেন বলেই তাদের ওপর প্রশাসনের বা ক্ষমতাসীন সংগঠনদের ক্ষোভ। তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে স্পষ্টতই সাংবাদিকের দোষ খোঁজা হয়েছে, যা ন্যাক্কারজনক। অভিযুক্ত প্রত্যেককে বহিষ্কার করতে হবে। সাংবাদিকদের মুক্ত সাংবাদিকতা এবং মুক্তমত প্রচারের অধিকার দিতে হবে।'

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, 'এর ভেতর অন্যান্য অভিযোগের বিচার হলেও এটার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে তা হাস্যকর। সেখানে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য নেই। পক্ষপাতিত্বমূলক একটা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে৷ এই অগ্রহণযোগ্য প্রশাসন যেভাবে কাজ করছে তা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।'

সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্যে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক শুভ আনোয়ার, শাহাদাত হোসেন, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কনৌজ কান্তি রায়।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফীর মোবাইলে কল করা হলে তিনি কল ধরেননি।

গত ২ আগস্ট মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।  নির্যাতিত সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল প্রাথমিকভাবে 'ক্রস চেক' করে নির্যাতনকারী হিসেবে ৮ জনের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন ৪৬তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্ ও ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

তাদেরকে ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে স্বীকার করে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Shows ASK data; experts call for stronger laws, protection

1h ago