জাবির ৮ ছাত্রী হলের ৬ প্রাধ্যক্ষই থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রাধ্যক্ষরা ক্যাম্পাসে না থাকার কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কোনো সমস্যার কথা জানানোর জন্য হলেও তাদের সময়মতো পাওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাবি,
ফাঁকা পড়ে আছে ‘এ’ টাইপ বাসা। ছবি: শেখ তাজুল ইসলাম তাজ/স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের ৮টি আবাসিক হলের মধ্যে ৬ হলের প্রাধ্যক্ষরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন।

এসব হলের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রাধ্যক্ষরা ক্যাম্পাসে না থাকার কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কোনো সমস্যার কথা জানানোর জন্য হলেও তাদের সময়মতো পাওয়া যায় না। এ ছাড়া প্রাধ্যক্ষরা হলে কম আসার কারণে আবাসিক ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের গতিও ধীর হয়ে পড়ে।

এদিকে গত ১২ মার্চ রাতে ছাত্রীদের ৩টি আবাসিক হলে ঢুকে ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও হেনস্তা করেন এক যুবক। চলে চুরির চেষ্টা। এর আগে ৭ মার্চও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার বিষয়টি ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার বোধকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

জানা গেছে, কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হল ও জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে থাকেন।

অন্যদিকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের মোহা. মুজিবুর রহমান, বেগম সুফিয়া কামাল হলের সদ্য পদত্যাগ করা মোতাহার হোসেন, প্রীতিলতা হলের আয়শা সিদ্দিকা, শেখ হাসিনা হলের হোসনে আরা, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের নাহিদ হক ও নবনির্মিত ১৮ নম্বর হলের ছায়েদুর রহমান ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। নৈতিকভাবে তারা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে থাকতে বাধ্য। এক্ষেত্রে এই পদে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত যারা সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন।

এর বাইরে উপাচার্য নূরুল আলমও সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হল প্রাধ্যক্ষদের বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারে থাকার কথা বলা হয়েছে। আর হলে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে কিংবা যেকোনো প্রয়োজনে আবাসিক শিক্ষকরা যেন দ্রুত উপস্থিত হন, সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

জাবির এস্টেট অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, আবাসিক শিক্ষকদের থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ, বি, সি এবং ডি টাইপের মোট ২৬৪টি বাসা আছে। এগুলোর মধ্যে ৫৮টি বাসা বর্তমানে ফাঁকা পড়ে আছে। ফাঁকা আছে সুফিয়া কামাল হল সংলগ্ন প্রাধ্যক্ষের জন্য বরাদ্দকৃত বাসভবনও।

আবাসনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার কারণ জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ হোসনে আরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখনই দরকার হচ্ছে তখনই আমাকে পাওয়া যায়। আমি তো দায়িত্বে অবহেলা করিনি।'

প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না- এমন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহিদ হকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন হলের ছাত্রীরা। তারপরও ক্যাম্পাসে থাকেন না তিনি।

এ বিষয়ে সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী রিতু রাবেয়া বলেন, 'ছাত্রীদের প্রয়োজনে বা সুবিধা-অসুবিধায় হলের প্রভোস্টকে পাওয়া অনেকটা অমাবস্যার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত ছাত্রীদের কোনো যৌক্তিক দাবিতে প্রভোস্ট বা হল প্রশাসনের সহযোগিতামূলক আচরণ আমরা দেখতে পাইনি।'

আবাসিক ছাত্রীদের ভাষ্য, যে প্রাধ্যক্ষরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তারা সচরাচর হলে কম আসেন। এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য সেগুলো শিক্ষকদের বিভাগীয় অফিস কিংবা বাসায় নিয়ে যান কর্মচারীরা। এতে করে প্রশাসনিক কাজেও ধীরগতি তৈরি হয়।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের জাবি শাখার সভাপতি ফারুক ইমতিয়াজের বক্তব্য, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ-পদবী যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয় না। বরং শিক্ষক রাজনীতি ও ক্ষমতাচর্চায় এগিয়ে থাকা ব্যক্তিরা এই পদগুলো দখল করে নেন। এ কারণে নির্ধারিত আবাসনে না থেকে প্রভোস্টদের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা, যেকোনো দুর্ঘটনার মোকাবিলায় তাদের অনুপস্থিতি, গেস্টরুম-র‍্যাগিং বন্ধে অনাগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কোনো ভূমিকা থাকে না। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের চেয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার সুবিধাগুলো আদায় করে নেওয়ার দিকে বেশি ঝোঁক থাকে তাদের।'

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাধ্যক্ষ হওয়ার জন্য তো এমন শর্তই থাকে যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকবেন। সেটাই যদি না হয় তাহলে দায়িত্ব নেওয়া কেন। প্রশাসন এমন ব্যক্তিদের কেন দায়িত্ব দিচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখবার বিষয়। হলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের ক্যাম্পাসের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। এসব পদে এমন শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত যারা ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক থাকতে পারবেন।'

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য গতকাল সোমবার উপাচার্য নূরুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার একান্ত সচিব ফোন ধরেন। বলেন, 'স্যার ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago