অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত: অচলাবস্থায় চিতোষী ডিগ্রি কলেজ

ছবি: স্টার

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাতে প্রায় অচলাবস্থায় শাহরাস্তি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিতোষী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা। গত ৮ মাস ধরে সভাপতি ও অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করে কলেজে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে।

নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগের অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে দুটি রিট করেছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ কামরুল আহছান চৌধুরী। তিনি বলেন, '২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরজনিত কারণে অধ্যক্ষর পদটি শূন্য হয়। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ৮ জুলাই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেন। আমার জুনিয়র কামরুন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। তিনি পরে অধ্যক্ষও নিয়োগ দেন। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপন্থী মনে করে আমি হাইকোর্টে রিট করি।'

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ৩ মাসের মধ্যে উপাধ্যক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে নির্দেশ না মানায় চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি চাঁদপুরের শাহরাস্তি আমলী আদালতে সভাপতি জাহাঙ্গীরকে বিবাদী করে ফৌজদারী মামলা করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ কামরুল আহছান চৌধুরী।

এদিকে কলেজের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সভাপতি জাহাঙ্গীর ও বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১২ জুলাই চাঁদপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন শিক্ষক প্রতিনিধি সামছুন্নাহার বেগম। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।

অভিযোগ উঠেছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার ও তার নিয়োগ দেওয়া নতুন অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চিতোষী শাখার কলেজ হিসাব থেকে ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া, অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আরও কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন তারা, যার হিসাব এখন পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা পাননি।

এসব মামলা ঘিরে কলেজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাত বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ বছরের ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থগিত করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়।

গত ২৮ মে কলেজের ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও ৫১১ জন শিক্ষার্থী লিখিতভাবে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সভাপতি ও অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে প্রশাসনের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। গত ১২ জুলাই দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। কলেজের এমন পরিস্থিতিতে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

জানতে চাইলে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ বলেন, 'এসব অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে তা তদন্ত করে পরপর ২ বার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অভিযোগ তোলার মতো কোনো কাজ করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা প্রমাণ করুক।'

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার বলেন, 'আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি না। কারণ আদালতে মামলা চলমান।'

Comments

The Daily Star  | English

Ex-ACC chairman, 3 others sued over 'false cases' against Khaleda, Tarique

Lawsuit alleges Hasan Mashhud filed fabricated cases to harass the BNP leaders

16m ago