প্রশাসন ব্যর্থ, শুধু শিক্ষার্থী নয় শিক্ষকরাও এখানে নিরাপদ না: অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান

‘কোটা সংস্কার আন্দোলন একান্তই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আমাদের মূল উদ্বেগ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা।’
শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাতে আমরা তো চুপ থাকতে পারি না
২০১৮ সালের ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের লাঞ্ছনার শিকার হন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ' ডেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর এরকম আঘাত আসছে, আমরা তো চুপ করে থাকতে পারি না। শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েরা তো আমাদের কাছেই ছেলেমেয়েদের রেখেছে। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় তারা থাকবে, এটা তো আমাদেরও দায়।'

'যদিও আমরা দেরি করে ফেলেছি, আরেকটু আগে করতে পারলে ভালো হতো। সংগঠিত হতেও আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে,' বলেন তিনি।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। তখনো শহীদ মিনারে 'নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ'র ব্যানারে একটি মানববন্ধন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

২০১৮ সালের ১৫ জুলাই শহীদ মিনারের ওই মানববন্ধনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্চনার শিকার হন শিক্ষকদের একাংশ। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নাজেহাল হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এবারও এ ধরনের কোনো আশঙ্কা করছেন কি না—জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, 'সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন একান্তই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। আমাদের মূল উদ্বেগ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা। শুধু শিক্ষার্থী না, আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাস করছি, তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।'

'আশঙ্কা করে যদি আমরা নাও দাঁড়াই, তাও আমরা ঝুঁকিমুক্ত না, বিপদমুক্ত না। আমাদের এখন আর অন্য কোনো উপায় নেই। শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো শিক্ষকদের দায়িত্ব। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে ওরা কোনো পাপ করেনি। ওরা ওদের নায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ভূমিকাটা পালন করল, বাইরে থেকে লোকজন এনে যেভাবে পেটানো হলো, এটা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে বর্বরোচিত একটা ঘটনা হয়ে থাকলো। কোনো শিক্ষকই এখানে নিরাপদ না। শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থী না, এখানে শিক্ষকদের পরিবার ও তাদের ছেলেমেয়েরাও থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো রকম নিরাপত্তা আমাদের দিতে পারছে না। যার ফলে আমাদের নীরবতা ভাঙা সবার নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজন,' বলেন তিনি।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের দেওয়া বিবৃতিতে চারটি দাবি জানানো হয়।

১. শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যারা হামলা করেছে, গুলি করেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

২. শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। সংবিধানের আলোকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কোটা সংস্কারের রূপ নির্ধারণ করতে হবে।

৩. ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ও ত্রাস সৃষ্টির ঘটনার প্রতি আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং আর কোনো বহিরাগত যেন ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদে ছাত্রাবাসে থাকতে পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Comments