মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী।

কুয়েটের রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সকালে স্যার টেলিফোন করে জানিয়েছেন যে, তিনি আজ সকালেই মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

সরকার চলতি বছরের ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এর আগে, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের বিরুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা না নেওয়ার অভিযোগে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দেয়। পরবর্তীতে সেই আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে রূপ নেয়।

সরকার গত ২৫ এপ্রিল রাতে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। এর পর অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. মো. হযরত আলী।

গত এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, ছাত্র-শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে শিক্ষকদের একাংশ ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীর প্রতি অনাস্থা জানান এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন।

একইসঙ্গে, একজন যোগ্য উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা। এই দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি।

আজ মানববন্ধন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, 'আমরা আশা করি, উনি যেহেতু দায়িত্ব নিতে পারছেন না, সেহেতু উনি সম্মানের সাথে সেটা সুরাহা করার জন্য সহযোগিতা করবেন। উনি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তিনি এটা করবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের কাছ থেকে এমন অবহেলা আশা করিনি, যার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা এবং সহযোগিতা ছিল। উনি এটার মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, ছাত্র-শিক্ষক সকলের দাবির প্রতি অবজ্ঞা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় কুয়েটের শিক্ষকবৃন্দ মনে করেন তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। এ কারণে আমরা তার দ্রুত পদত্যাগ দাবি করছি।'

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি। পরে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এসব সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়।

প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এটিকে কার্যত প্রহসন বলে আখ্যা দেন। এরপর তারা একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা, নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং পূর্বে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনকারীদের জানান, শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখা হবে। উপাচার্যের এই ঘোষণা শিক্ষক সমিতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলস্বরূপ, শিক্ষকরা আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আজ পদত্যাগ করলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

Meanwhile, fresh series of explosions were reported in the Iranian capital Tehran, as per AFP journalist

1d ago