হলে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ পাচ্ছে চবি শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: স্টার

রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে অনেকটা সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে মূলত সেখানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। দীর্ঘ ৭ বছর পর চবির বিভিন্ন হলে মেধার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে আসন বরাদ্দ।

তবে হলগুলোতে পানি, খাবার, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এখনো অভিযোগ আছে। প্রশাসন বলছে, এই সমস্যাগুলো সমাধানেও কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই সমাধান করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের দখলে থাকা হলগুলোতে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রায় না থাকার মতো। ছাত্ররাজনীতির ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে সিট দখল করে রাখা হতো, যেখানে বহিরাগতরাও থাকত। ২০১৭ সালের পর আনুষ্ঠানিকভাবে হলে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সুযোগ নেয় ছাত্রসংগঠনগুলো। শিক্ষার্থীরা নিজ ইচ্ছায় হলে উঠতে পারত না—চলতো নাম লেখানোর রাজনীতি। অনেক সময় ছাত্রলীগে যুক্ত না হলে সিট পাওয়া সম্ভব হতো না। এমনকি অভিযোগ ছিল, বহু অছাত্র দীর্ঘদিন ধরে হলে থেকে বিনা মূল্যে ডাইনিংয়ে খাওয়াসহ নানা সুযোগ ভোগ করতেন।

কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্ররাজনীতির আগ্রাসী প্রভাব কমে এসেছে। প্রশাসন পুনরায় কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে ফিরেছে শৃঙ্খলা ও বসবাসযোগ্য পরিবেশ। বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রশাসন সিট বরাদ্দে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। এখন তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বস্তিতে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল রয়েছে ১৫টি। বর্তমানে ছেলেদের জন্য চালু রয়েছে ১০টি হল এবং মেয়েদের জন্য ৫টি। ছেলেদের হলগুলোতে মোট সিট সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং মেয়েদের হলে সিট সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধা রয়েছে ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য।

প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীদের হলে সিট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তারা সেই সুযোগটি পাচ্ছে না আবাসন সংকটের কারণে।

গিয়াস উদ্দিন রক্সি নামে এক অনাবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আবাসন সংকট চরমে। অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় চবিতে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পায়। একটি বিভাগের প্রতিটি সেশন থেকে মাত্র ৫ থেকে ৬ জন হলে সিট পায়। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। কারণ দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল তৈরি হচ্ছে না। তবে হলগুলোতে পূর্বের তুলনায় শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করছে।

শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের শিক্ষার্থী আলিমুল শামীম বলেন, 'হলের অবস্থা খুবই স্বাভাবিক। এখানে কোনো ধরনের ঝামেলা নেই। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো থাকছে রাজনৈতিক বা যেকোনো ধরনের চাপ ছাড়া।'

খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থী সাকিলা আখতার বলেন, 'আগে হলে সিট পেত যারা রাজনীতি করত বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা। এখন মেধার ভিত্তিতে সিট দেওয়া হচ্ছে। এতে হলের ভেতরের বিশৃঙ্খলাও কমে গেছে।'

সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ২০১৭ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো ছিল ছাত্রলীগের দখলে। মেধার ভিত্তিতে কাউকেও হলে সিট দেওয়া যেত না। নিজেদের দলের ছেলেদের হলে তুলত। বলা যায়, হলগুলোকে তারা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সে সময়ের প্রশাসনও এই বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখেনি। নতুন প্রশাসন আসার পর আমরা শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদাগুলো, যেমন: রিডিং রুম, ওয়াশরুম, চেয়ার-টেবিল সংস্কার করেছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন আবাসিক হলগুলো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দখলে থাকায় প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে আসন বরাদ্দ দিতে পারেনি। ওই গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্যে হলগুলোর পরিবেশ হয়ে উঠেছিল বসবাসের অনুপযোগী, পড়াশোনার পরিবেশও ছিল না।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ হল ছাড়ার পর প্রশাসন যখন আসন বরাদ্দ কার্যক্রম শুরু করে, তখন হলগুলো থেকে মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেগুলো সরিয়ে হলগুলোকে বসবাসযোগ্য করা হয়েছে। এখন অনেক শিক্ষার্থী হলে উঠতে আগ্রহী হলেও আসন সংকটে তা সম্ভব হচ্ছে না।

উপ-উপাচার্য জানান, চলতি বছরের মধ্যেই দুটি নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং পুরোনো হলের পরিত্যক্ত কক্ষগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এখন মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে হলে বসবাস করছে। আগের মতো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Engineer Mosharraf Hossain freed after getting bail in all cases

The former Awami League lawmaker was sent to jail on October 27 last year after being arrested in cases related to attacks on protesters during the July uprising last year

1h ago