দুটি হাতই অচল, পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মানিক

মানিক রহমান
পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মানিক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনাই তার ধ্যানজ্ঞান। আর তাই শত প্রতিবন্ধকতাও দমাতে পারেনি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর মানিক রহমান (১৬)কে। জন্ম থেকে তার দুটি হাতই অচল। ডান পা সচল থাকলেও বাম পা তেমন কাজ করে না। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলেই এগিয়ে যাচ্ছেন এই অদম্য কিশোর। পা দিয়ে লিখে পড়াশোনা করছেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার প্রথমদিন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছেন মানিক।

মানিকের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। তার বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী আর মা মরিয়ম বেগম গৃহিনী। তাদের দুই ছেলে। মানিক বড়, ছোট ছেলে মাহিম ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

স্কুলে বরাবরই ভালো ফল করেছেন মানিক। ২০১৬ সালে জছি মিঞা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস এবং ২০২০ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তার ছেলে মানিক বড় হয়ে উঠছে। মানিকের দুটো হাত না থাকলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়ের মতোই পা দিয়ে সব কাজ করে। বাড়িতে পা দিয়েই কম্পিউটার টাইপ করে।

'আমাদের ছেলে মানিক সত্যিই আমাদের কাছে 'মানিক'। সে কঠোর পরিশ্রমী। পড়াশুনায় খুবই আগ্রহী,' তিনি বলেন।

'সংসারে দারিদ্র্যতা আছে। তারপরও মানিক যতদূর ইচ্ছা পড়াশুনা করবে। আমরা তাকে যতটা পারি সহযোগিতা করে যাব,' বলেন মিজানুর।

মানিকের মা মরিয়ম বেগম ডেইল স্টারকে বলেন, মানিক পা দিয়েই খাবার ও পানি খেতে পারলেও জামা কাপড় একা পড়তে পারে না। জামা-কাপড় পরানো ও গোসলের সময় একটু সাহায্য করতে হয়।

'মানিক একদিন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এটাই আমি বিশ্বাস করি,' তিনি বলেন।

মানিকের সহপাঠী সিফাত ইসলাম বলেন, মানিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে অনুপ্রেরণা। পা দিয়ে যত সুন্দর ও ঝকঝকে লিখতে পারে অনেকেই হাত দিয়েও তা পারে না। মানিক তাদের ক্লাসে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে বরাবরই ভালো রেজাল্ট করছে। এসএসসি পরীক্ষাতেও আশানুরূপ ভালো রেজাল্ট করবে। 

পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাইলে মানিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দুটো হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখেই পড়াশুনা করছে। পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছি।'

'পা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি এসএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফলের প্রত্যাশা করছি,' মানিক বলেন।

পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশুনা করার স্বপ্ন দেখেন মানিক।  

ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানিক রহমান আমাদের বিদ্যালয়ের সম্পদ। মানিককে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে থাকি। অনেক শিক্ষার্থী মানিককে দেখে পড়াশোনায় মনোনিবেশও করেছে।' 

বরাবরের মতোই মানিক এসএসসি পরীক্ষাতেও সন্তোষজনক রেজাল্ট করতে পারবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

ফুলবাড়ী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানিক তার দুটো হাতই অচল হওয়ায় পা দিয়ে লিখে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছে। তার লেখার ধরনও একেবারে আলাদা। মানিকের পা দিয়ে লেখা খুবই সুন্দর ও স্পষ্ট। মানিক তার পরিশ্রমের ফলে একদিন তার স্বপ্নে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Once a lifeline, Labondaho now a curse

Abdul Aziz once harvested rice in abundance from his fields next to Labondaho, once a picturesque river located in Indrapur, Gazipur’s Sreepur. Today, he stands on cracked earth, nursing losses and lamenting poisoned waters.

14h ago