‘নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পরে কোচিং সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না’

নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে প্রি-প্রাইমারি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত কোচিং সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ছবি: সংগৃহীত

নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে প্রি-প্রাইমারি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত কোচিং সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর একটি এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টারের চাহিদা তো থাকবেই! কারণ সব শিক্ষার্থী এক পর্যায়ে থাকে না। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ক্লাস রুমে যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। তাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া বা যার যতটুকু প্রয়োজন তাকে ততটুকু মনোযোগ দেওয়ার জায়গায় আমরা যেতে পারিনি। সত্যিকার অর্থে তার থেকে আমরা অনেক দূরে আছি। কাজে কিছু ক্ষেত্রে তো কোচিংয়ের প্রয়োজন আছেই। কেউ হয়তো সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না ক্লাসে, সে কোচিংয়ে যাচ্ছে। কারো হয়তো বাড়িতে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই বা থাকলেও তারা হয়তো ব্যস্ত থাকেন, তাদের কোচিংয়ের দরকার হয়। আর বিশ্ব এখন এমন প্রতিযোগিতার হয়েছে, যে বাচ্চা ভালো পারছে...বাবা-মায়েদের জিপিএ-৫ এর একটা উন্মাদনা আছে, তার জন্য দেখা যায়, দরকার থাকুক বা না থাকুক কোচিংয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে কোচিং আছে এবং চলছে।

আমরা নতুন যে শিক্ষাক্রমে গেছি, সেখানে হয়তো কোচিংয়ের প্রয়োজনই সেভাবে থাকবে না। কারণ শিক্ষার্থীরা করে করে শিখবে। কাজেই কোচিংয়ে যাওয়ার আমার মনে হয় না আর প্রয়োজনীয়তা থাকবে। আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়তো এটা পরিবর্তন করতে পারবো। এটা এমনিতে বলে, আইন করে, বাধ্য করে বন্ধ করা যাবে না। নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩ থেকে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হচ্ছে। পরের বছর অষ্টম-নবমে যাবে, তার পরের বছর দশম শ্রেণিতে যাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাক্রম চালু হবে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, কোচিংগুলো বন্ধের নির্দেশনা আছে। তারপরও একই কোচিং সেন্টারে যেহেতু অনেক ধরনের কোচিং চলে, কোচিং যারা করান ১ মাস তারা এই ক্ষতিটা নিতে চান না। এ জন্য নানা ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নেন তারা। এটি বন্ধ করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়, শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষেও সম্ভব নয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি-এইচএসসি কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। তবে বিদেশি যে পরীক্ষাগুলো আছে; আইইএলটিএস, জিআরই, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং, বিসিএস পরীক্ষার জন্য কোচিং আছে। আমাদের কোচিংয়ের তো কোনো শেষ নেই। অন্য ধরনের কোচিং হয়তো থাকবে। আমরা আশা করি, ২০২৫ এর পরে প্রি-প্রাইমারি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত কোচিংয়ের আর প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কাজ করবে, সেখানেই হয়ে যাবে।

অভিভাবকের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি দেখলাম কেন্দ্রের সামনে অভিভাবকের প্রচণ্ড ভীড়। যারা আগে এসেছেন তারা তাদের সন্তানকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরেই অপেক্ষা করছেন। বাকি পরীক্ষার্থীদের আসতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। সব অভিভাবককে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনার সন্তানকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নামিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থান ত্যাগ করবেন। অন্য পরীক্ষার্থীরাও আপনাদের সন্তানতুল্য। আপনার সন্তানকে পৌঁছে দিয়েছেন, আরেকজন তার সন্তানকে পৌঁছাতে পারছে না বা পরীক্ষার্থী একা এলেও কেন্দ্রে পৌঁছাতে তার দেরি হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জমায়েত এমনিতেই নিষিদ্ধ, তারপরও অভিভাবক যেভাবে জমায়েত করছেন এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সময় আমরা দেখেছিলাম একটি জায়গায় অভিনব কায়দায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা হয়েছিল। সারাক্ষণ আমরা সজাগ আছি, কোনো ধরনের নতুন কোনো পদ্ধতি কেউ বের করে কি না। আমরা কী করে সেগুলো প্রতিরোধ করবো। সেই চিন্তাগুলো থেকেই আমরা গত এসএসসি পরীক্ষার যেখানে যেখানে যেটুকু ব্যত্যয় ঘটেছে, সেগুলো প্রত্যেকটি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি আশা করি, সেগুলো কার্যকর থাকবে। তারপরও যদি কেউ অপচেষ্টা করে, আমরা নিশ্চয়ই সবাই মিলে প্রতিরোধ করবো। যারা এগুলো করছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

Comments