লালমনিরহাটে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম

১৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকরা

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রায়পাড়া দূর্গা মন্দিরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন এক শিক্ষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় লালমনিরহাটে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছেন।

লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলায় ৭৭টি মন্দিরে ৭৭টি মন্দিরভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান চলছে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ৩০-৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা করে এই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান করা হয়।

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ৩ বছর মেয়াদি মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকে সরকারি অর্থায়নে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১১ সাল থেকে লালমনিরহাটে জেলায় এ প্রকল্পের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এসব বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকের মাসিক বেতন ৫ হাজার টাকা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রায়পাড়া দূর্গা মন্দিরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাপলা রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এমএ পাস করে তিনি মন্দিরভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু গত ১৮ মাস ধরে তিনি বেতন পাচ্ছেন না।

শাপলা রায় বলেন, 'আমাকে এখন ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। কিন্তু আমি শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছি। নিয়মিত করছি।'

সদর উপজেলার মেঘারাম দূর্গা মন্দিরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রশান্ত সেনের ভাষ্য, বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা থাকায় তিনি কোনোভাবে দিন চালাচ্ছেন। কিন্তু যেসব শিক্ষক কেবল এই প্রকল্পের বেতনের ওপর নির্ভরশীল তারা চরম সংকটে পড়েছেন।

প্রশান্ত সেন বলেন, 'কবে থেকে আবার বেতন পাবো তাও জানি না। অফিসে যোগাযোগ করলে বলে খুব দ্রুত ব্যবস্থা হচ্ছে।'

এই বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অনিল চন্দ্র বর্মণের পর্যবেক্ষণ হলো, এই বিদ্যালয়ে এসে তাদের শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারছে। নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তারা ধর্মশিক্ষার সুযোগও পাচ্ছে এখানে।

এই অভিভাবক বলেন, 'কিন্তু নিয়মিত বেতন না পেয়েও এখানকার শিক্ষকরা যেভাবে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন তা অসাধারণ। একইসঙ্গে এটি অমানবিকও বটে।'

এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা মন্দিরভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সহকারী পরিচালক (এডি) আতাউর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, শুধু শিক্ষকরাই নন। এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কেউই বেতন পাচ্ছেন না। তিনি নিজেও ১৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

আতাউর রহমান বলেন, 'আমি শুনেছি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কাজ করছেন। আশা করি শীঘ্রই আমরা বেতন পাবো।'

তার ভাষ্য, মন্দিরভিত্তিক এই শিক্ষা কার্যক্রম সনাতন ধর্মাবলম্বী শিশুদের জ্ঞান বিকাশে ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘদিন থেকে বেতন নেই, তারপরও এখানকার শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি।'

আতাউর রহমানের কাছ থেকে জানা যায়, সারাদেশে মন্দিরভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬ হাজার ৪০০টি। সমসংখ্যক শিক্ষক পাঠদান করছেন এই বিদ্যালয়গুলোতে। কিন্তু তাদের কেউই এই মুহূর্তে বেতন পাচ্ছেন না।

Comments

The Daily Star  | English

Complete reforms in 2yrs after polls

Parties urged in draft July Charter; opinions sought

6h ago