২ বছরে বন্ধ হলো ১৮ হাজার ৪৬৫ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে ২০২১ ও ২০২২ সালে অন্তত ১৮ হাজার ৪৬৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে।

মালিকপক্ষ খরচ চালাতে না পারার কারণে এসব বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই ২০২১ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়।

বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) ২০২২-এর চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা গেছে, ৪ হাজার ৩৫২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে গত বছর।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৬ হাজার ৪২ জন। যার অর্থ ২০২০ সালের পর থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২৯ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন।
   
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার বিষয়ে আমরা আগেই কথা বলেছি। সরকারি তথ্যে তার বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতো এবং তারা সার্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিতে ভূমিকা পালন করতো।'

'যেহেতু এখন বিষয়টি পরিষ্কার, তাই সরকারের উচিত এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া', বলেন তিনি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কয়েকদিন পর, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সরকার বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে অনলাইনে পাঠদানের নির্দেশ দেয়। এর ১৮ মাস পর আবার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়।

তবে নতুন করে করোনভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২২ সালে প্রথম দিকে আবারও প্রায় ১ মাস বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসে।

গত বছর দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা এবং অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি।

ডিপিইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি এবং ২০২১ সালে ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি।
 
এনজিও পরিচালিত স্কুলের সংখ্যা ২০২০ সালে ৪ হাজার ৬১৯ থেকে ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭৫৩ এবং ২০২২ সালে ২ হাজার ৯১১-এ নেমে আসে।

কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ২০২০ সালের ২৯ হাজার ৮৯৭ থেকে ২০২১ সালে ২৮ হাজার ১৯৩ এবং ২০২২ সালে ২৬ হাজার ৪৭৮-এ নেমে আসে।

২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৯১ জন এবং এটি ২০২১ সালে নেমে আসে ২ কোটি ৯০ হাজার ৫৭ জনে এবং ২০২২ সালে সেটা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জনে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহামারি চলাকালীন অনেক শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উপবৃত্তি কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করার কারণে মূলত এটি ঘটেছে।'

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'এতগুলো স্কুল বন্ধ হওয়ার অর্থ হলো আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষিত মানুষ বেকার হয়েছে।'

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, বন্ধ স্কুলগুলো আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, 'মহামারি চলাকালীন মালিকরা আর্থিক সহায়তা, সফট লোন এবং ইউটিলিটি চার্জ মওকুফ চেয়েছিলেন, কিন্তু কোনোটি পাননি।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু সরকারি প্রণোদনাই এই বিদ্যালয়গুলোকে পুনরায় চালু করতে পারে।'

তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেনগুলোকে প্রণোদনা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলো যদি আবারও তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে চায়, তাহলে ডিপিই কোনো বাধা দেবে না।'

পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০২০ সালে ৩৯ দশমিক ৫০ লাখ, ২০২১ সালে ৩১ দশমিক ৩৬ লাখ এবং ২০২২ সালে ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ লাখ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Mob violence now alarmingly routine

Rights groups say the state's failure to act swiftly and decisively has to some extent emboldened mobs and contributed to a climate where vigilante justice is becoming commonplace.

10h ago