কেন চিকিৎসক হতে চান—প্রশ্ন করুন নিজেকেই

ভাবতে হবে, একজন চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে ১৩ বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতাও আপনার আছে কি না।
কেন চিকিৎসক হতে চান—প্রশ্ন করুন নিজেকেই
ছবি: অর্কিড চাকমা

চিকিৎসাসেবা একটি মহৎ পেশা; এ নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই। তবে মনে রাখতে হবে, এই কঠোর পরিশ্রমের পেশাতে আসার পথটা মোটেও সহজ নয়। আর এ জন্যই ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এই পেশা বেছে নেওয়ার আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা প্রয়োজন। 

প্রথমেই ভাবতে হবে চিকিৎসাবিদ্যায় যে সব বিষয় পড়তে হয় তার প্রতি নিজের আসলেই আগ্রহ রয়েছে কি না। জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব কিংবা ব্যবহারিক— এর কোনোটির প্রতি যদি কোনো খারাপ অনুভূতি থেকে থাকে তখন এই পেশায় যাবার চিন্তা ছেড়ে দেওয়া উচিত।

এরপর ভাবতে হবে, একজন চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে ১৩ বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আপনার আছে কি না। অনেকের মাঝেই এই ভুল ধারণা কাজ করে যে চিকিৎসাবিদ্যার পড়াশোনা শুধুমাত্র এমবিবিএসের ৫ বছর। কিন্তু বাস্তবতা হলো একজন পূর্ণাঙ্গ ডাক্তার হতে গেলে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ, বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। এবং এরপরেই একজন চিকিৎসক এই পেশায় সফলতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রত্যাশা করতে পারেন।

এ ছাড়া আপনার ডাক্তার হতে চাওয়ার ইচ্ছার পেছনে কোন কারণটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তা চিন্তা করা প্রয়োজন।

আপনার প্রথম কারণ ভালো বেতন বা আর্থিক স্বচ্ছলতা হতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে এই পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কেন না এই পেশায় ভালো অংকের অর্থ আয় করতে করতে ক্যারিয়ারের অনেকগুলো বছর কেটে যায়। আর একবার ডাক্তার হতে পারলেই যে আর্থিক সফলতার দেখা মিলবে এমন ধারণাও পুরোপুরি ঠিক নয়।

এর কারণ, বাংলাদেশে সব ডাক্তারের আয় একই সমান হয় না। ডাক্তারদের আয় নির্ধারণে বেশ কিছু বিষয়ের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির ধরন, পরীক্ষার নম্বর, নির্ধারিত বেতনে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে চাকরির সুযোগ, কিংবা রোগীর সংখ্যা; এই সব বিষয়ের ওপরই একজন ডাক্তারের আয় নির্ভর করে থাকে।

এই পেশায় সফলতার মুখ দেখার জন্য ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যাদের খুব শিগগিরই পরিবারের আর্থিক দায়-দায়িত্ব নিতে হবে তাদের জন্য এই পেশা বিপজ্জনকও বটে। শুধু ভালো অংকের টাকার জন্য যারা এই পেশায় আসেন তাদের মধ্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
 
তবে, চিকিৎসাবিদ্যা একটি মহান পেশা৷ আপনি যদি সমাজের কল্যাণে অর্থপূর্ণ কোনো কাজ করতে চান তখন এই পেশা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আপনি চাইলে স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কিংবা সামাজিক পরিষেবা এবং অলাভজনক সংস্থাগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সমাজের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে পারেন।
 
তবে, চিকিৎসাবিদ্যার দীর্ঘমেয়াদী কঠিন পড়াশোনার চাপ সামলানোর জন্য আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম কি না তা অবশ্যই ভাবতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ডাক্তার হয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে পারার আগে একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। তবে এমবিবিএস ডিগ্রির তৃতীয় বর্ষ থেকে রোগীদের কাছে গিয়ে ব্যবহারিক বিষয়বস্তু শেখার সুযোগ মেলে। প্রথম ২ বছর কেটে যায় তাত্ত্বিক পড়াশোনা আর বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েই।
  
দিনশেষে, একজন ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে কি না তা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। 

অনুবাদ করেছেন নাফিসা ইসলাম মেঘা 

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago