কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে আবেদনের জন্য যা যা দরকার
আধুনিক ও উদ্ভাবনী সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে ১৮৮৩ সাল থেকে বিশ্বসেরা গবেষণায় ভূমিকা রেখে আসছে যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা পর্যায়ে অভাবনীয় অবদানের জন্য দ্য টাইমস এবং সানডে টাইমস গুড ইউনিভার্সিটি গাইড-২০২৩-এর তালিকায় ২৫তম স্থান অর্জন করেছে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি।
প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে অন্যদের থেকে নিজেকে অনন্য হিসেবে তুলে ধরতে এখানে পড়ার সুযোগ লুফে নিতে পারেন।
কার্ডিফ শহর ও ক্যাম্পাসের সুবিধা
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় বহুসংস্কৃতির ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। নিরাপদ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে থেকে কার্ডিফের বৈচিত্র্যের স্বাদ নেওয়ার সুবিধা মেলে এখানে। ক্যাম্পাসটি ১৬টি লাইব্রেরি, ২৫টি আইটি সুইট এবং একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দিয়ে সজ্জিত। এখানকার শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল অপরচুনিটিস টিমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পড়াশোনা, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ এবং কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এ ছাড়া এখানে বিনামূল্যে একটি ভাষা শেখার সুযোগের পাশাপাশি জীবনযাপনের খরচও বেশ কম।
বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রাম
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে যেসব বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে- ব্যবসা; ইংরেজি; যোগাযোগ এবং দর্শন; আধুনিক ভাষা; রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব এবং ধর্ম; সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন; গণিত; সঙ্গীত; সামাজিক বিজ্ঞান; ওয়েলশ; স্থাপত্য; জীববিজ্ঞান; রসায়ন; কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যবিজ্ঞান; ডেন্টিস্ট্রি; আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস; ভূগোল এবং পরিকল্পনা; স্বাস্থ্য বিজ্ঞান; মেডিসিন; অপটোমেট্রি এবং ভিশন সায়েন্সেস; পদার্থবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি।
আবেদনের যোগ্যতা
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট
- আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে।
- কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত জিসিই এ-লেভেলে ৩টি বিষয়ের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরাও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারেন।
পোস্টগ্রাজুয়েট
পোস্টগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সফলভাবে ৪ বছরের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি সম্পন্ন করা আবেদনকারীদের বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া এক বা দুই বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্নকৃত শিক্ষার্থীরাও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে একই বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ২ থেকে ৪ বছর মেয়াদে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। সাধারণত সিজিপিএ ৩.০০ হলেই আবেদন করা যায়। তবে ভর্তির আবেদনের সময় এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
পোস্টগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ কোর্স
পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ কোর্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ বছরের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি এবং এক বা ২ বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে।
তবে ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকলে ২ বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। আর ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকলে কমপক্ষে এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্নকৃত শিক্ষার্থীরাও পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ কোর্সের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
কিছু ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করা আবেদনকারীরা সরাসরি পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে পিএইচডি শুরু করার আগে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মাস্টার্স প্রোগ্রাম সম্পন্ন করতে হবে।
ইংরেজি ভাষা দক্ষতা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস (একাডেমিক)-এ নূন্যতম ৬.৫ স্কোর থাকতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি স্কোর প্রয়োজন হতে পারে।
তবে আবেদনপত্রের প্রাধান্য পেতে টোফেল (আইবিটি) স্কোর ৯০ এবং রাইটিং ১৭, লিসেনিং ১৭, রিডিং ১৮, স্পিকিং ২০; পিটিই (একাডেমিক) ন্যূনতম স্কোর ৬৯ এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে ৫৯ থাকলে ভালো হয়।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- পূরণকৃত আবেদনপত্র
- ডিগ্রি সার্টিফিকেট
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- লেটার অব রেকমেন্ডেশন
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর
- সিভি (প্রয়োজন সাপেক্ষে)
- বৈধ ভিসা ও পাসপোর্ট।
আবেদন করবেন যেভাবে
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টারের মাধ্যমে অনলাইনে বা স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। অনলাইন আবেদন ফর্ম ব্যবহার করে আবেদন করলে তথ্য সেইভ করে যেকোনো সময় পূরণ করা যায়। আবেদনপত্র অনলাইনে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহায্য করবে।
আর এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
আবেদনপত্রে প্রথমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের বিষয় বাছাই করতে হবে। তারপর একাডেমিক এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর দিতে হবে। ফর্ম পূরণ করার সময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে বা পরবর্তী তারিখ দিলে সে অনুযায়ী জমা দিতে হবে। এনরোল করার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একজন উপদেষ্টার কাছ থেকে বার্তা পেলে পুরো প্রক্রিয়ায় সরাসরি সাহায্য পাওয়া যাবে।
স্কলারশিপ
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে একজন ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীর বাৎসরিক খরচ হবে ১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার পাউন্ড। এ ক্ষেত্রে স্কলারশিপ পেলে আংশিক থেকে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যেসব স্কলারশিপের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে
ভাইস চ্যান্সেলর ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ
যেসব ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী কার্ডিফ ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করতে চান তাদের জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপের আওতায় ২ হাজার পাউন্ডের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য প্রযোজ্য। পোস্টগ্রাজুয়েট সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড এটির অন্তর্ভুক্ত নয়।
এটি পেতে শিক্ষার্থীদের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেটার পেতে হবে। কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির আবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই স্কলারশিপের জন্য বিবেচনা করা হয়। তবে এ জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে। এ জন্য কোনো স্কলারশিপ আবেদনপত্রের প্রয়োজন হয় না।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যা যা থাকতে হবে
- একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
- ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ও অন্যান্য পরীক্ষার স্কোর
- একাডেমিক রেফারেন্স
- সিভি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থের পরিবর্তে টিউশন ফি ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।
ইউসিএএস সময়সীমার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কার্ডিফ ইউভার্সিটিতে পড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ছাড়াও অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম হতে হবে। যে বছরের জন্য এই স্কলারশিপ পাওয়া যাবে, তা অন্য বছরের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। ভবিষ্যতে অন্য ফান্ডের জন্য অনুরোধ বাতিল করা হবে।
আন্ডারগ্রাজুয়েট ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ
ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করার জন্য এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজ অর্থায়নে পড়া এবং বিকল্প ফান্ড থেকে অপ্রদেয় তহবিল গ্রহণ না করার শর্ত পূরণ করতে হবে।
স্কলারশিপের আবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট বছরে স্নাতক ডিগ্রির জন্য অফার লেটার থাকতে হবে। ইউসিএস সময়সীমার মধ্যে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে।
আরও তহবিলের জন্য ভবিষ্যতে আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হয় না। আবেদনকারী অন্য কোনো বার্সারি, তহবিল বা ডিসকাউন্ট, স্কলারশিপ পেলে এই স্কলারশিপের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। শুধু ফুলটাইম এবং ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
গ্রেট স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্য সরকারের গ্রেট ব্রিটেন ক্যাম্পেইন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের যৌথ অর্থায়নে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের গ্রেট স্কলারশিপ প্রদান করে। এই স্কলারশিপের আওতায় ১০ হাজার পাউন্ড টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। এ জন্য আগে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
- আবেদনপত্রে ২০০ শব্দে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে
- নির্বাচিত প্রোগ্রামে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাওয়ার কারণ কী?
- শিক্ষাজীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন বা কর্মজীবনে আজ পর্যন্ত কী কী করেছেন তার বর্ণনা এবং অন্য ব্যক্তি বা সংস্থার ওপর এটির প্রভাব ব্যাখ্যা করা।
- কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার করবেন কীভাবে?
যে কোর্সে আবেদন করেছেন তার বাইরে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যের বর্ণনা করা, আগামী ৫ বছরে আপনি কী করতে চান এবং আপনি যে কোর্সে পড়তে আগ্রহী তা আপনার লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সাহায্য করবে?
ইউসিএএস সময়সীমার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে এবং ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়াদি জমা দিতে হবে। যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম হতে হবে। যে বছরের জন্য এই স্কলারশিপ পাওয়া যাবে, তা অন্য বছরের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। ভবিষ্যতে অন্য ফান্ডের জন্য অনুরোধ বাতিল করা হবে।
Comments