প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে ভয়াবহ চিত্র সরকারি জরিপে

প্রাথমিক শিক্ষার মান
প্রতীকী ছবি।

তৃতীয় শ্রেণির প্রায় ৬১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর গণিতের দক্ষতায় দুর্বল। তাদের গণিতের দক্ষতা তৃতীয় শ্রেণির উপযোগী না।

এক সরকারি জরিপে আরও উঠে এসেছে, তৃতীয় শ্রেণির ৫১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায়ও দুর্বল। তাদের মানও তৃতীয় শ্রেণির উপযোগী না।

শিক্ষা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের 'ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট ২০২২' এ আরও উঠে এসেছে যে, যারা এনজিও পরিচালিত স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ে, তাদের তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে ভালো করছে।

১ হাজার ৪৮৩টি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ২৫ হাজার ৪৮০ ও পঞ্চম শ্রেণির ২৮ হাজার ৭৫২ শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, যে শিশুরা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ে, তাদের দক্ষতা তুলনামূলক ভালো হয়ে থাকে।

গতকাল শনিবার কক্সবাজারের এক হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ইমেরিটাস মনজুর আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই জরিপের ফল আমাদের দেশের শিক্ষার মানের একটি হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরেছে। শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে কথা বললেও কিছুই পরিবর্তন হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের অভাব, শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যার অনুপাত কম, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব এবং অপর্যাপ্ত তহবিল প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী।

মূল্যায়নে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ১২ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাংলায় খুবই ভালো দক্ষতা রয়েছে। এই হার গণিতে যথাক্রমে ১১ ও ৯ শতাংশ।

ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। তবে সিলেটের শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর যাবৎ ভালো করতে পারছে না।

সমতল, উপকূল ও সীমান্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা হাওর, প্রত্যন্ত ও দ্বীপাঞ্চলের শিশুদের চেয়ে ভালো করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণের অর্থ হচ্ছে, ওই শিক্ষার্থী তার শ্রেণির পাঠ্য থেকে শিখেছে এবং তা প্রয়োগ করতে সক্ষম।

সরকারি এই জরিপের জন্য করা মূল্যায়ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা খারাপ করে। কারণ, শিক্ষার্থীরা সাধারণত তাদের পাঠ মুখস্থ করে এবং সেই অনুযায়ী পরীক্ষা দেয়।

কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিভিশন কোর কমিটির (সিডিআরসিসি) সদস্য তারিক বলেন, 'ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার কিছু দিন পর অনেক কিছু ভুলে যায়।'

শিক্ষার্থীরা গণিত শিখছে, কিন্তু বাস্তব জীবনে এর ব্যবহার তারা জানে না। ফলে, তারা যা শিখেছিল তা পরীক্ষার পর ভুলে যায়।

তিনি আরও বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রে একটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি থাকে যে একজন শিক্ষক আলাদাভাবে সব শিক্ষার্থীর প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই, দুর্বল শিক্ষার্থীরা কোনো বাড়তি যত্ন পায় না।'

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

43m ago