যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দেখতে চাই: ছাত্রলীগ সভাপতি

সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'আমি বাংলাদেশের নাগরিক আমি যেকোনো ক্যাম্পাসেই যেতে পারি। আমি সেদিন বুয়েটের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি।'
সাদ্দাম হোসেন। ফাইল ছবি

'আমরা যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দেখতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলার কারণে, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার কারণে আজকে বুয়েটের একটি পক্ষ শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানি করছে, নিপীড়ন করছে, মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। তাদের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।'

গভীর রাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশের ব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাত দেড়টায় বুয়েটের মূল ফটক দিয়ে মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন ছাত্রলীগের অন্তত ৭০-৮০ জন নেতাকর্মী। সাদ্দাম হোসেনও সেখানে ছিলেন। তারা ক্যাফেটেরিয়ার সেমিনার কক্ষে বৈঠক করেন, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। মোটরসাইকেল, গাড়ি নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পাসে 'শোডাউন' করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েটে ঢোকার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, গভীর রাতে সেমিনার কক্ষে বসে রাজনৈতিক কর্মসূচির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'সেমিনার কক্ষ কি রাতে খোলা থাকে? রাতে সেমিনার কক্ষে গিয়ে মিটিং করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি বাংলাদেশের নাগরিক আমি যেকোনো ক্যাম্পাসেই যেতে পারি। আমি সেদিন বুয়েটের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা বাংলাদেশের সংবিধান প্রদত্ত আমার নাগরিক অধিকার, মৌলিক অধিকার। যারা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে, আমি জানি না তারা কোন দেশের আইনে কথা বলছে, তারাই ভালো বলতে পারবে।'

'এটি নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, এটাকে যে ইস্যু বানানোর চেষ্টা হচ্ছে এটা খুবই হাস্যকর বিষয়। আমি যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই যেতে পারি। অক্সফোর্ডে যাই, ক্যামব্রিজে যাই সেখানে গিয়ে যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি এটা কোন আইনে অপরাধ হয়? রাজনৈতিক নেতারা তো পৃথিবীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যায়। বুয়েটে সেদিন আমি রাজনৈতিক কোনো কারণে যাইনি। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আরেকজন শিক্ষার্থীর, বাংলাদেশের একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের সামাজিক সৌজন্যমূলক সম্পর্ক থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক,' বলেন তিনি।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির নিষিদ্ধের নামে 'অন্ধকার রাজনীতি' শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দেখতে চায়।

তিনি বলেন, 'নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে। বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর যেমন রাজনীতি না করার অধিকার আছে, তেমন রাজনীতি করারও অধিকার আছে। রাজনীতি করার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

'আমরা যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি দেখতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলার কারণে, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার কারণে আজকে বুয়েটের একটি পক্ষ অনেক শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে, নিপীড়ন করছে, মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। তাদের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে আমরা অনেকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। উনারা ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি,' বলেন তিনি।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রতিবাদসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হিজবুত তাহারির লোকজন বুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের মেইলে প্রচারপত্র পাঠিয়েছে সেগুলো নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। টাঙ্গুয়ার হাওরে ইসলামি ছাত্র শিবিরের মিটিংয়ে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে পর যারা জামিনে ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের নিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য নেই। অথচ একটি নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনে যুক্ত থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে মানসিকভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যারা এসব অপরাজনীতি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর যারা ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি জানাচ্ছে আমি মনে করি তারা ফৌজদারি অপরাধ করছে।'

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করতে দেওয়ার দাবিতে আগামীকাল সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রলীগ। 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে এর প্রতিবাদে টানা দুদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে আগামীকালও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে বুধবার মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার; তার সঙ্গে জড়িত পাঁচ শিক্ষার্থীকে (এ এস এম আনাস ফেরদৌস, হাসিন আরমান নিহাল, অনিরুদ্ধ মজুমদার, জাহিরুল ইসলাম ও সায়েম মাহমুদ) বুয়েট থেকে স্থায়ী—একাডেমিক ও হল থেকে বহিষ্কার, জড়িত অন্যদের অবিলম্বে শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া; ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে প্রশাসনের লিখিত নোটিশ ও বাস্তবায়ন; দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ; আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি।

Comments

The Daily Star  | English

US campus protests over Gaza war erupt into clashes between rival groups

Violent clashes erupted early on Wednesday morning on the campus of the University of California in Los Angeles between pro-Palestinian protesters and a group of counter-demonstrators supporting Israel

16m ago