কুয়েটের ঘটনা তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব: ছাত্রদল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) গতকালের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, 'ঘটনাটি তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এর নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি মনিটরিং করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।'
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গতকাল বিকেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) একটি চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে প্রথমে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব ন্যক্কারজনক হামলায় ও হামলার উসকানিতে জড়িত যে-ই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের ছাত্র রাজনীতিকে চরমভাবে কলুষিত করেছে এবং যার ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এদের অবৈধ হুকুমদাতা খুনি হাসিনাসহ চিহ্নিত শীর্ষ অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিগত সময়ের সেই ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে এবং হাজারও শিক্ষার্থী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
'সর্বশেষ জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে একক ছাত্র সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। গুম-খুন ও শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অতীতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও জবরদস্তিমূলক রাজনীতির বিপরীতে গিয়ে মেধা, সৃজনশীলতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে এবং নিরাপদ ও ভীতি মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে ছাত্রদল সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের সদস্য ফরম বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করছে। ছাত্রদলের এই গণতান্ত্রিক ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে দেশবিরোধী অপশক্তি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে ব্যাপকভাবে মিথ্যা প্রপাগান্ডার মাধ্যমে বহুমুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।'
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি এবং ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী সময়ে যারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবে তাদের সব অপকর্মের বৈধতা প্রদানে ভূমিকা রেখেছিল, সেসব শিক্ষার্থী নামধারী অপশক্তি বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধাগ্রস্ত করে মব সংস্কৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করছে এবং নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে অতীতের ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠনের ন্যায় অগণতান্ত্রিক আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।
'এসব ঘটনার ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে সেটি নিয়ে অনলাইনে ও অফলাইনে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপপ্রচারের মাধ্যমে ছাত্রদলের নামে মিথ্যা অপবাদ চারিদিকে ছড়ানো হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন, ছবি ও ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে কিছু ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিল থেকেই ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুকের প্রত্যক্ষ উসকানিতে কিছু মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিতভাবে তেড়ে গিয়ে হামলার সূচনা করে।
'ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী, তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্থা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কিছু স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।'
প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গতকাল প্রথম আলো অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত 'কুয়েটে প্রথম হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ছাত্রদলের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রদলের ফরম বিতরণ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ (মঙ্গলবার) সমাবেশ ডেকেছিলাম। আমরা উপাচার্যের কাছে একটি আবেদন করার কথা ভেবেছিলাম যে, এই ফরম বিতরণের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেন বহিষ্কার করা হয় এবং ভবিষ্যতে যেন কুয়েটে কেউ কোনো ছাত্রসংগঠন না করতে পারেন।
'কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ওই সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তারাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারের আড়ালে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারকবাহক ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা এবং ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ওই মব মিছিলটি শুরু করার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়।'
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, উল্লেখ্য যে, সহিংসতায় ছাত্রদলের ওই সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে 'ছাত্রদলের হামলা' শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।
'আর এসব উসকানিমূলক বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই গত ২৮ ডিসেম্বর ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির নেতা এবং সেই কমিটির আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুকই ছাত্রদলের সেই তিনজন সমর্থককে ধর! ধর! বলে প্রথম তেড়ে যান। কুয়েট ক্যাম্পাসে গত ১১ আগস্ট থেকে প্রশাসনিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে আসছে, যার বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে কোনো মবও তৈরি হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, আবার এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনো রূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সঙ্গে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যক্কারজনক সহিংসতাকে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদলের হামলা বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ন্যক্কারজনক এই ঘটনাটির প্রকৃত সত্য রূপ যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা হতে সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন।
'আমরা মনে করি, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো যে, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমানে সারা দেশে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইতিবাচক কর্মপরিকল্পনা ও শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে অসংখ্য নবীন শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হচ্ছে ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে, ঠিক তখনই আন্ডারগ্রাউন্ড অপরাজনীতির অত্যুৎসাহী চর্চার মাধ্যমে প্রতিঘাতমূলক নানা গুপ্ত কার্যক্রম ও অপপ্রচারকে পুঁজি করে উসকানি ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে কিছু গুপ্ত সংগঠন ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগ যেমন অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের নানান অপকর্মের সাফাই দিতো, ঠিক সেভাবেই ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গুপ্ত সংগঠন শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামকে কলুষিত করছে এবং এই নাম ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাম্পাসসমূহে ভিন্ন রূপে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।'
ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, সংবিধানের ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আসিসিপিআর) ১৯, ২১ ও ২২ নম্বর ধারা অনুসারে বাকস্বাধীনতার চর্চা ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর স্বীকৃত অধিকার। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের চর্চা যখন অসম্ভব, তখন সেই ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের সংস্কৃতির ধারক-বাহক গুপ্ত ও নিষিদ্ধ সংগঠন শিবির ও ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত ও অবৈধ উপায়ে ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধরে গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের অঘোষিত দখলদারিত্ব জারি রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
'ছাত্রদল দেশব্যাপী সব ক্যাম্পাসে আমাদের সুস্থ-সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক রাজনীতির সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে এসব হীন ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।'
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল তার সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ আসলে কিংবা তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে কিন্তু তার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত ৭ জানুয়ারি কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে তারা যদি ছাত্র রাজনীতি করতে পারে এবং শিবিরের কমিটিও রয়েছে, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি; শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারে, তাহলে আমার সমর্থকরা যদি ছাত্রদলের সদস্য ফরম নিয়ে থাকে, সেটি কি তারা গুরুতর অপরাধ করেছে?
ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক, আমরা তাকে শিবিরের নেতা হিসেবেই জানি। গতকাল ক্যাম্পাসে যারা হামলা করেছে তাদের সবাইকে শিবিরের নেতা হিসেবে জানি। তারা যদি এই ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি চালু রাখতে পারে, সেখানে ছাত্রদল ছাত্ররাজনীতি কেন করতে পারবে না, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে এক এবং ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেছি, আমরা সেই ঐক্য বজায় রাখতে চাই। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী নামধারী অল্প কিছু গুপ্ত সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না বলে যে অপপ্রচার চালায় এবং সে জন্য তারা যে গ্রাউন্ড ওয়ার্কগুলো করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, পরবর্তীতে তারা যখন ব্যর্থ হয়, তখন তারা শিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।'
সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, '৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেকগুলো অপরাধ করেছে। তার মধ্যে জোর করে মিছিলে নেওয়া, গেস্টরুম নির্যাতন, মত প্রকাশে বাধা এবং অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়া। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি, দুটি সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটেছে—গেস্টরুম কালচার ও জোর করে মিছিলে নেওয়া। কিন্তু অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার সংস্কার এখনো চলমান, গতকাল কুয়েটে যেটি হয়েছে।'
'কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কমিটি আছে, যে কমিটি ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। শিবিরের কমিটি আছে কি না সেটি সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানে না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কমিটি আছে কি না সেটি শিবিরকে নিশ্চিত করতে হবে।'
গতকাল কুয়েটের ঘটনাকে তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'ঘটনাটি তৈরি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এর নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি মনিটরিং করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের মানুষকে জ্ঞান দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ওয়াজ-নসিয়ত করে থাকেন।
'আমরা জানতে চাই, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে মিটিং হয়েছে, সেখানে হাসনাত আব্দুল্লাহ কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন? নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোন প্রটোকলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গিয়ে মিটিং করেছেন সেটিও আমরা জানতে চাই।'
যে কোনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ছাত্রদলেরও এই অধিকার আছে। সেখানে ওমর ফারুক কীভাবে ছাত্রদলের তিনজন নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে, সেই প্রশ্ন আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাছে রাখতে চাই।'
গতকালের হামলার ব্যাপারে শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, 'যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা কারণে ছাত্রদলের সমর্থক ও কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে অবশ্যই দায় নিতে হবে।'
'যুবদলের একজনকে চিহ্নিত করা গেছে এবং তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও অন্যান্য নেতাদের যে ভূমিকা, সে ব্যাপারে আমরা এখন পর্যন্ত তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনো বক্তব্য পাচ্ছি না।'
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে দেশের কোনো ক্যাম্পাসে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে, এর পুরো দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বহন করতে হবে।
Comments