মতামত

ধর্মীয় উৎসব আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি

নদীতে বিজু ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু উৎসব শুরু হয়। ছবি: অর্কিড চাকমা

শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ পেছাতে চায়, এটা সার্বজনীন প্রবণতা। আমার সেই ব্যাচটিও আলাদা ছিল না। কিন্তু আমিও অনড় এবং শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়। নির্ধারিত সময়েই মিডটার্ম হবে।

ক্লাস শেষে একটা মেয়ে আমার কাছে এসে খুব বিনয়ের সঙ্গে বলে মিডটার্ম পিছিয়ে দিতে। আমি আমার অবস্থানে অনড়। কিন্তু তারপরও মেয়েটির অনুনয়ে আমি মন পরিবর্তন করতে বাধ্য হই। আমি বলি, 'আপনি যদি একটি ভালো কারণ বলতে পারেন, তাহলে পরীক্ষা পেছাতে পারে।'

মেয়েটি বলেন, 'স্যার, গত ৪ বছরে আমি কখনই আমার গ্রামে যেতে পারিনি, আমার দাদা-দাদির সঙ্গে দুর্গাপূজা পালন করতে পারিনি।'

তার কথাগুলো মনে তীরের মতো বিঁধেছিল। তাকে থামিয়ে বললাম, 'আপনার কারণ যথার্থ বিবেচিত হয়েছে।'

ক্লাসের আর কেউই কখনোই জানতে পারেনি কেন সেই মিডটার্ম পেছাল। জানি শুধু আমি আর সেই মেয়েটি।

সেশনজট কমাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রি-সেমিস্টার পদ্ধতি নিঃসন্দেহে ভালো। তারা সময়মতো শুরু করে এবং শেষ করে। তবে, যেখানে কুপির আলো আছে, সেখানে কুপির নিচের অন্ধকারও আছে।

ত্রি-সেমিস্টারে সবকিছু ১২ থেকে ১৩ সপ্তাহে শেষ করে। ফলে, যথাযথ ছুটি নেই, দম ফেলার ফুসররতই নেই।

সময় বাঁচানোই মূল উদ্দেশ্য হওয়ায় শুধুমাত্র সরকারি ছুটিই পান শিক্ষার্থীরা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সময় বাঁচাতে গিয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের সময়েও যথাযথ ছুটি পান না তারা।

ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক না কেন, বাংলাদেশিরা ধর্মীয় উৎসবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে উদগ্রীব থাকে। দাদা-দাদি অপেক্ষায় থাকেন তাদের নাতি-নাতনিদের দেখতে। ভাই-বোনরা এক হয়ে আত্মিক আনন্দে মেতে উঠেন।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ এই সুযোগ পান না। এটা যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, তেমনি শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্যও। সব ধর্মের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সময় যথাযথ ছুটি নির্ধারণ করা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঐচ্ছিক ছুটির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সৌন্দর্য হলো, তারা প্রধান ধর্মীয় উৎসবের স্বীকৃতি দেয়। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে ধর্মীয় উৎসবে ছুটির ব্যবস্থা করতে। বলতে পারেন, বছরে দুটি সেমিস্টার বা বার্ষিক পরীক্ষার কারণে তারা এই সুযোগ পায়। সবসময় সফল না হলেও তারা অন্তত এর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে, চেষ্টা করে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঈদ, দুর্গাপূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা, বড়দিন, বিজুর মতো উৎসবে যথাযথ সংখ্যক ছুটি দিতে পারছে না।

ত্রি-সেমিস্টারের মধ্যেও ধর্মীয় উত্সবে কীভাবে ছুটির ব্যবস্থা করা যায়, তা চিন্তা করার সময় এসেছে। ত্রি-সেমিস্টার পদ্ধতিতে সময়ের অভাব থাকে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে শিক্ষার্থীদের এসব নীরব ইচ্ছা পূরণ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নৈতিকভাবে বাধ্য।

অধ্যাপক আসরার চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]; [email protected]

অনুবাদ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

6h ago