১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেল জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড

জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড
সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে আজ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ছবি: বাসস

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মো. আসাদুজ্জামান পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও নিজের লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি 'মিলন স্মৃতি পাঠাগার' নামে ১৬টি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। স্বপ্ন রয়েছে সরিষাবাড়িতে একটি 'লাইব্রেরি ভিলেজ' গড়ে তোলার, যেখানে সব মানুষ এসে বিনামূল্যে যেন বই পড়তে পারেন।

তার এই স্বপ্নপূরণে বড় অগ্রগতি হয়েছে শনিবার। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) 'ইয়াং বাংলা' ক্যাম্পেইন খুঁজে বের করেছে আসাদুজ্জামানকে। অসামান্য অবদানের জন্য তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে 'জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড' ।

সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে আজ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয় আসাদুজ্জামানকে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'আমি নিজে রাজমিস্ত্রীর কাজ করি। লেখাপড়ার ও পাঠাগারের খরচ চালাই। এ পর্যন্ত ১৬টি গ্রামে আমি পাঠাগার স্থাপন করেছি। ভবিষ্যতে একটি 'লাইব্রেরি ভিলেজ' স্থাপন করারও পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে প্রত্যেক গ্রামের ছেলেমেয়েই বিনামূল্যে বই পড়তে পারে।'

আসাদুজ্জামান এই মিলন স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। যুব সমাজকে বই পড়ায় উৎসাহিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় মোট ১৬টি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছে। যার মধ্যে ১টি শিশু পাঠাগার, ৪টি রাস্তার পাশের পাঠাগার এবং ৩টি রেলস্টেশন পাঠাগার রয়েছে।

আসাদুজ্জামানসহ এদিন ৬টি বিভাগে ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে 'জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে' দেয়া হয়। এছাড়া আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন দেশের আইকনিক প্রকাশনা উন্মাদ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আহসান হাবীব এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দূরের অন্ধকারে এক আলোকরশ্মি ইয়াংগুয়াং ম্রো।

পুরস্কার বিজয়ী ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেন- রোবোলাইফ টেকনোলজিস: জয় বড়ুয়া লাবলু, বিকে স্কুল অব রিসার্চ: বিজন কুমার, বোসন বিজ্ঞান সংঘ: মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান, উচ্ছ্বাস: প্রসেনজিৎ কুমার সাহা, ইয়ুথ প্ল্যানেট: এ বি এম মাহমুদুল হাসান, বিজ্ঞানপ্রিয়: মুহাম্মদ শাওন মাহমুদ, মজার ইশকুল: আরিয়ান, মিলন স্মৃতি পাঠাগার: আসাদুজ্জামান, সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন: মো. মুইনুল আহসান, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠন: জান্নাতুল মাওয়া।

ছয় বছর আগে শুরু হওয়া জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের জন্য এবার ৬০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে ৩০ প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হয়।পুরস্কার দেয়ার পর সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেম, পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে। নিজের মধ্যে যদি দেশপ্রেম আর স্বাধীনতার চেতনা না থাকে তাহলে দেশের ভালো কীভাবে করবে- সে প্রশ্নও তিনি তুলে ধরেন। 

যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বর্তমান বিশ্বে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা বাংলাদেশের তরুণরা সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

মঞ্চে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পুরস্কার নেয়ার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন বিজয়ীরা। কার্টুন ম্যাগাজিন উন্মাদের প্রধান সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। আমাদের উন্মাদের বয়স ৪৫ বছর। এত বছরে এসে আমরা এরকম একটি অ্যাওয়ার্ড পেলাম, এটা আমাদের কার্টুনিস্টদের খুবই উপকৃত করবে। বোসন বিকাশ সংঘের মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ তৈরি করার লক্ষ্যে। এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে মানুষ বিজ্ঞানমনস্ক হবে।

শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান শিখতে অনুপ্রাণিত করতে বোসন বিজ্ঞান সংঘ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে তারা নারীদের বিজ্ঞান এবং গণিত শিখতে অনুপ্রাণিত করতে একটি বিজ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কাছ থেকে সেরা গণিত ক্লাব পুরস্কারে ভূষিত হয়। পুরস্কার জয়ের পর বিকে স্কুল অব রিসার্সের মিতুল দাশ বলেন, ভবিষ্যতে সুন্দর একটি বাংলাদেশ উপহার দিতে কাজ করতে চাই।

বিজ্ঞানপ্রিয়র প্রতিনিধি শাওন মাহমুদ বলেন, এই পুরস্কারের জন্য সিআরআই ও ইয়াং বাংলাকে ধন্যবাদ। আমরা যখন কাজ করি তখন অনেক বাধা থাকে। কিন্তু এই ধরণের স্বীকৃতি আমাদের চলার পথকে অনেক সহজ করে দেয়। উচ্ছ্বাসের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার সাহা বলেন, এই সম্মাননা আমাদের আগামীর কাজগুলো করার ক্ষেত্রে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং আশা করি আমাদের সামনের কাজগুলোও অব্যাহত থাকবে। ইয়ুথ প্লানেটের প্রতিনিধি এ বি এম মাহমুদুল হাসান বলেন, সম্মাননা কাজের পরিধি বাড়ায়। দায়িত্ব বেড়ে যায়। বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠনের জান্নাতুল মাওয়া বলেন, আমরা একঝাঁক তরুণ নারী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ুর নায্যতা নিয়ে কাজ করছি। সবাই যেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ন্যায্যতা পায়, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রোবোলাইফ টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জয় বড়ুয়া লাবলু বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে মূলত হাতবিহীন মানুষদের কৃত্রিম হাত ও রোবোলাইফ টেকনোলজিস সরবরাহ করে। এর সাহায্যে ব্রেইন কন্ট্রোলের মাধ্যমে হাত নাড়াতে বা ব্যবহার করতে পারা যায়। মজার ইশকুলের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আরিয়ান আরিফ বলেন, মজার ইশকুল ২০১৩ সাল থেকে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছি। ২০০০ এর বেশি পথশিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা, খাদ্য ও প্রযুক্তি মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুইনুল আহসান ফয়সাল বলেন, সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন থেকে মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করছি। চারশ এর বেশি ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছি। বিশেষ করে আগামী দিনের নেতৃত্ব হিসেবে তাদের গড়ে তোলাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

49m ago