অবসরটুকু কাটুক পরিবারের সঙ্গে

শেষ কবে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে গল্প করেছেন? শেষ কবে কোনো আত্মীয়র বিয়েতে কেবল উপস্থিত থাকার চেয়ে বেশি কিছু করেছেন, বিয়ে বাড়ির কাজে অংশ নিয়েছেন? শেষ কবে বাসায় অতিথি আসার পর ড্রয়িংরুমে তাদেরকে সময় দিয়েছেন? শেষ কবে সবকিছু ভুলে শৈশবের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন?
পরিবারের সদস্যদেরকে দেওয়া ছোট্ট কোনো উপহার তাদের দিনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। ছবি: অর্কিড চাকমা

শেষ কবে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে গল্প করেছেন? শেষ কবে কোনো আত্মীয়র বিয়েতে কেবল উপস্থিত থাকার চেয়ে বেশি কিছু করেছেন, বিয়ে বাড়ির কাজে অংশ নিয়েছেন? শেষ কবে বাসায় অতিথি আসার পর ড্রয়িংরুমে তাদেরকে সময় দিয়েছেন? শেষ কবে সবকিছু ভুলে শৈশবের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন?

আমরা বড় হয়েছি। পরিবারের বাইরে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমাদের বন্ধু রয়েছে, সহপাঠী রয়েছে, সহকর্মী রয়েছে। দিন শেষে সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরি, তখন শরীর ক্লান্ত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাস, ল্যাব, টিউশন, অফিসের পর পাওয়া খানিকটা অবসর সময় একান্ত নিজের মতো করে কাটানোর বাইরে আর কিছুই চিন্তা করতেও চাই না। তবে, সেই অবসর সময়, সেই একান্ত সময়ে ঠাঁই পায় না পরিবার।

নিজেদেরকে দোষারোপ করার আগে হয়তো ভাবতে পারি যে আমাদের সঙ্গেও হয়তো এমনটাই হয়েছে। যখন বড় হয়ে উঠেছি, তখন চারপাশের কঠোর বাস্তবতা ধীরে ধীরে চোখে পড়েছে, বাবা-মায়ের সেই স্নিগ্ধ আদর হয়তো খানিকটা কমে কঠোরতায় রূপ নিয়েছে। হয়তো এখন মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে কেক নিয়ে এসে পরিবারের সবাই মিলে জন্মদিনের উৎসব করার বয়স আপনার পেরিয়ে গেছে। মনে হতে পারে, পরিবারের বড়দের জন্মদিন আবার পালন করে নাকি? জন্মদিনে উপহার পাওয়া, শীতকালে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া হয়তো এখন বেমানান। এখন হয়তো মনে হয়, জন্মদিনের কেকটা কাটা হবে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে, সেমিস্টার শেষে হঠাৎ কোথাও ঘুরতে যাওয়া যায় বন্ধুদের সঙ্গে।

কিন্তু, এই জটিল জীবন হাতরে আর শৈশবের সেই সময়টা আর খুঁজে পাবেন না, যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ের স্মৃতি আর পাবেন না, যখন আপনার জন্মদিনে চাচাতো-ফুফাতো-খালাতো-মামাতো ভাই-বোনরা বেড়াতে এসেছিল এবং আপনার জন্য নিয়ে এসেছিল অনেক অনেক উপহার ও আনন্দ। আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আপনার বন্ধুরা তাদের পরিবারের সাথে যখন দেখছেন আপনার কোনো বন্ধু তার পরিবারের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদযাপন করছে, তখন হয়তো নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ও এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল। তখন হয়তো দমিয়ে রাখছেন নিজের অনুভূতিগুলোকে।

কিন্তু, পরিবারের সঙ্গে কাটানো এই সময়টুকুই হয়তো হয়ে উঠতে পারে মন খুলে হাসার একটি সুযোগ, নিজেকে হালকা করে নেওয়ার একটি সুযোগ, পরিবারকে কাছে পাওয়ার একটি সুযোগ, পরিবারের বন্ধন আরও শক্ত করে তোলার একটি সুযোগ। হয়তো সেই শৈশবের আনন্দ আবার ভেসে উঠতে পারে আপনার চোখে, আপনার বাবা-মায়ের চোখে।

এমন কিছু পরিকল্পনা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজেদেরকে উপেক্ষিত বলে মনে করি। মনে হয়, বাবা-মা তাদের কাজ নিয়ে এতা ব্যস্ত বলে এটা হচ্ছে না। কিন্তু, এটাও মনে রাখা দরকার যে জন্মদিন বা কোনো বার্ষিকী উদযাপন কেবল প্রিয়জনকে একটি কেক বা উপহার দেওয়া নয়। এই উদযাপনের অর্থ হচ্ছে, নিজেকে এবং তাদেরকে মনে করিয়ে দেওয়া, ব্যস্ত জীবনের মাঝেও আমাদের ভালোবাসার কমতি নেই। মনে করিয়ে দেওয়া যে শত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা নিজেরা একটু সময় উপভোগ করার অপেক্ষায় থাকি। বয়স যাই হোক না কেন, বছরের অন্তত একটি দিনকে বিশেষ অনুভব করার বয়স কখনোই শেষ হয় না; সেটা আমাদের ক্ষেত্রেই হোক, আর আমাদের বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে।

চলুন আবার শুরু করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি, সম্ভব হলে এর কিছু খরচ আমরাই দেই। সেটা যদি সম্ভব নাও হয়, বাবা-মায়ের জন্মদিন ও বিবাহবার্ষিকীতে উৎসবের আয়োজন করি। পরিবারকে দোষারোপ না করে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি, আমরা কী হারিয়েছি, কী ফিরে পেতে চাই।

হাসিব উর রশিদ ইফতি; [email protected]

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Awami League journalist couple arrested

The indiscriminate arrests and murder charges

Reckless and unsubstantiated use of murder charges will only make a farce of the law, not bring justice to those who deserve it.

14h ago