জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় দরকার কার্যকর দক্ষতা
মনে হচ্ছে একটি হতাশাজনক অধ্যায় হিসেবে আবারও লোডশেডিংয়ের যুগ ফিরে আসতে চলেছে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে, ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং (বেশ কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইটে লোডশেডিংয়ের সময়সূচিও দেওয়া হয়েছে) এবং অস্থায়ীভাবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া, যা দেশের ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার মাত্র ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ পূরণ করে।
সহজ কথায় বলতে গেলে, আমরা বিদ্যুৎ, ডিজেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ঘাটতি মোকাবিলা করছি (উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি স্থগিত এবং অজানা কারণে যথাযথভাবে গ্যাস অনুসন্ধান না করার জন্য)। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর ব্যবস্থাপনা গুরুতর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে অন্ততপক্ষে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট (কিউআরপিপি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শর্তগুলোর বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করার সময় এসেছে। এই পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো অলসভাবে পড়ে থাকলেও সরকারের ব্যয় বাড়তে থাকে। যেমন- বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে (বিপিডিবি) দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পরিচালকদের ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
যাই হোক, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তা এই মুহূর্তে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য আরও দরকারি। এই ঋণকে আপাতত সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় বেশ কয়েক ধাপ নিচে রাখা উচিত।
যদিও এটা বোধগম্য যে, এলএনজি ও ডিজেলের উচ্চ মূল্যের কারণে সাময়িকভাবে আমদানি স্থগিত করা হয়েছে। তবে, সরকারের কম দামে এসব পণ্যের বাজার অনুসন্ধান বন্ধ করা উচিত নয়– যদি সেটা কম দামে পাওয়া যায় অথবা সরকার ভালো কোনো চুক্তিতে সেটা পেয়েও যেতে পারে। তা ছাড়া এর ফলে সরকারের আলাপ-আলোচনার দক্ষতারও প্রমাণ পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে, সরকারকে আমাদের সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে যথাসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের ওপর এবং জনসাধারণের ওপর যতটা সম্ভব কম পরিমাণে বোঝা চাপানোর বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ বেশ কয়েক মাস ধরে ভুগছে। অফিসের কাজের সময় কমিয়ে, পেট্রোল পাম্পগুলো একদিন করে বন্ধ রেখে এবং দৈনিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কঠোরতা সবই বোধগম্য। কিন্তু সরকারকে অবশ্যই জ্বালানি সংকটের পরবর্তী ধাক্কা থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী ও দক্ষ হতে হবে।
Comments