বহু চেষ্টায় ভাঙা যায়নি বিএনপি, শাহজাহান ওমরের ঘটনায় অনেক কিছু ‘উন্মোচিত’

‘এটা বিএনপির জন্য বড় জয়’
বিএনপির অবরোধ
বিএনপির লোগো | সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ বিএনপিতে বড় ধরনের বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকে কারাবন্দি করে এবং বিএনএম ও বিএসপির মতো নতুন দল গঠন করে সরকার বিএনপি নেতাদের দল ত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে।

দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অনেকের মালিকানাধীন সম্পত্তির ওপর হামলাও করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তারা।

কিন্তু নিপীড়নের মুখে ও সংসদ সদস্য হওয়ার প্রলোভন উপেক্ষা করে বিএনপি নেতারা দলের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

'এটা বিএনপির জন্য বড় জয়', বলেন তিনি।

একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা দল ত্যাগ করলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হতো উল্লেখ করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, এটা বিএনপির জন্য স্বস্তির বিষয় যে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং বিএনপি নেতারা আর নির্বাচনে অংশ নিতে প্রলুব্ধ হবেন না।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর।

জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শাহজাহান ওমরের এই ঘোষণা আসে। ক্ষমতাসীন দল থেকে তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ক্ষমতাসীন দলের তাকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া—সবই হয়েছে খুব দ্রুত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'শাহজাহান ওমরের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, সরকার কীভাবে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমে বিএনপিকে বিভক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টিও উন্মোচিত হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাদের এই দাবি এখন ফাঁকা বুলি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

বিএনপি বলছে, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পাঁচ শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'এটা পরিষ্কার যে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। জনগণ নিপীড়নকে অগ্রাহ্য করছে এবং বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালাচ্ছে।'

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, শাহজাহান ওমরসহ ১৪ জন নেতা দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ছয়জন নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাকিরা স্থানীয় নেতা।

বিএনপির সাবেক দুই নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও শমসের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পদ পেয়েছেন। কিন্তু তারা দুইজনই অনেক আগেই বিএনপি থেকে আলাদা হয়ে গেছেন।

বিএনপি নেতা শাহ জাফর দল ছেড়ে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। বিএনপির সমমনা দুটি দলও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতার ভাষ্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে, অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপি দলের মধ্যে একতা রাখা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

'আমরা সফলভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। আমাদের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে। এটাও আমাদের কৌশলের অংশ ছিল। তারা গ্রেপ্তার না হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য না হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন', বলেন তিনি।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চাপ যেহেতু নেই, তাই আত্মগোপনে যাওয়া নেতারা ফিরে আসবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, আজ বা আগামীকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে।

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

8h ago