ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উচ্চ-উৎপাদনশীল ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। মৎস্য অধিদপ্তর এই অঞ্চলের ৪টি চিংড়ি হ্যাচারিকে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: কক্সবাজারের উখিয়ার এম কে হ্যাচারি; কলাতলী এলাকার নিরিবিলি হ্যাচারি ও খুরুশকুল এলাকার মিডওয়ে সাইন্টফিক ফিসারিজ লিমিটেড ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ডাফা ফিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড।

অনুমোদন পাওয়া কক্সবাজারের নিরিবিলি হ্যাচারির স্বত্তাধিকারী লুৎফর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগদা চিংড়ি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আরও ৮-৯ বছর আগেই সরকারের উচিত ছিল অধিক উৎপাদনশীল ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমোদন দেওয়া। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এখন অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশে এখন পরীক্ষামূলক চাষের অনুমোদন পাচ্ছে। আর প্রতিবেশী দেশগুলো ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা শুধু বাগদা ও গলদা চিংড়ি রপ্তানি করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। সরকার ভেনামি চাষ উন্মুক্ত করে দিলে চিংড়ি রপ্তানি শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।'

ছবি: সংগৃহীত

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, এক বছর পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে অধিদপ্তর অনুমতি দিয়েছে। ১৩টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানই চট্টগ্রাম অঞ্চলের। এ সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক বছর পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হতে পারে চলতি মাসেই।

সরকারের পক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) প্রথম পক্ষ এবং উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) দ্বিতীয় পক্ষ হয়ে চুক্তি হবে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, খুলনা অঞ্চলে গত ২০২১ সালে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ি চাষে সাফল্য লক্ষ্য করায় অধিদপ্তর খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে।

চিংড়ি রপ্তানিকারকরা ডেইলি স্টারকে জানান, গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে চিংড়ি রপ্তানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। এক সময় হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এলেও এখন এই খাতটির অবস্থান সপ্তম। বর্তমানে বিশ্বের ৬২টি দেশে ভেনামি চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে এশিয়ায় রয়েছে ১৫টি দেশ।

বিশ্বে চিংড়ি বাণিজ্যের ৭৭ শতাংশ দখল করে আছে ভেনামি চিংড়ি। বাগদা চিংড়ির তুলনায় দাম কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং গ্লোবাল অ্যাকুয়াকালচার এলায়েন্সের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে সাড়ে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন, বাগদা উৎপাদিত হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন, গলদা উৎপাদিত হয়েছে ২ দশমিক ৪ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়া, অন্যান্য চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ মেট্রিক টন।

২০১৮ সালে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ভেনামি চিংড়ি উৎপাদিত হয় ২৩ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে এই দেশগুলোয় উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ১২ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান শূন্য।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda leaves London for Dhaka in air ambulance

Fakhrul urges BNP supporters to keep roads free, ensure SSC students can reach exam centres

6h ago