আরও ১৫ পাটকল বেসরকারি খাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে: পাটমন্ত্রী

আরও ১৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
রাঙ্গুনিয়ায় বেসরকারি খাতে বরাদ্দ দেওয়া কেএফডি জুট মিল পরিদর্শনের পর মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন পাটমন্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

আরও ১৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বেসরকারি খাতে বরাদ্দ দেওয়া কেএফডি জুট মিল পরিদর্শনের পর মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, 'টেন্ডার করেছি। আগামীকাল বুধবার জমা দেয়ার শেষদিন। ১৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫৩টি প্রস্তাবনা পাওয়া গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তাবনা যাচাইবাছাই করে আমরা এই ১৫টি মিলও প্রাইভেটে দিয়ে দেবো।'

'প্রাইভেটে সেগুলো ভালো চলবে। এখানে আমাদের কোনো দায় থাকবে না। সরকার ব্যবসা করে না। সরকার ব্যবসা রক্ষা করে, পলিসি নির্ধারণ করে,' বলেন তিনি।

মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, 'কৃষক যখন একেকটি পাটগাছ রোপণ করে, সেগুলো শুধু একেকটি পাটগাছ নয়, সেগুলো একেকটি ডলার। পাট এখন আমাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য। যত পাটপণ্য রপ্তানি হবে, তত মার্কিন ডলার দেশে আসবে।'

পরিদর্শন শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের পাটমন্ত্রী বলেন, 'সারা পৃথিবী এখন পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশেও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চুরিচামারি করে যারা ব্যবহার করছে, কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন আমরা পাটের তন্তু দিয়ে ব্যাগ, কার্পেট বানাচ্ছি। পাটের পণ্য রপ্তানি করছি। করোনার সময় ২ বছর আমাদের গ্রোথ ছিল ২০ শতাংশ অর্থাৎ তখনো আমরা ২০ শতাংশ পাটপণ্য রপ্তানি করেছি। তখন কিন্তু গার্মেন্টস একেবারে বন্ধ ছিল। এখন পুরোদমে কারখানাগুলোতে কার্যক্রম চলছে। সুতরাং পাটের সুদিন ফিরছে।'

পরে কারখানা প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী বলেন, 'পাট থেকে সুতা তৈরি হচ্ছে। সেটা আমরা রপ্তানি করছি। পাটখড়ি থেকে চারকোল উৎপাদন করে সেটা চীনে রপ্তানি করছি। পাটের তন্তু এবং পাটখড়ি দুটোই আমরা রপ্তানি করছি। এভাবে পাটখাত এগিয়ে যাবে। পাকিস্তান আমলে পাট ছিল প্রধান আয়ের উৎস। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর পাটখাতে আবারও একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে।'

বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার পর কেএফডি জুটমিলে কর্মচাঞ্চল্য দেখেছেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, 'শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করেছি কেমন আছেন। উনারা বললেন খুব ভালো আছি। শ্রমিকরা মালিকবান্ধব হলে এবং মালিকরা শ্রমিকবান্ধব হলে সেই কারখানাগুলো খুব ভালো চলে। শ্রমিককে ভালোবাসতে হবে। শ্রমিক মনের সুখে কাজ না করলে তারা কাজে অবহেলা করবে। তখন মেশিন নষ্ট হয়ে যাবে। মেশিন মায়ের সমান, মেশিনকে আদর করতে হবে। একটি বেয়ারিং ভাঙলে দ্রুত না বদলালে পুরো মেশিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন করতে হবে।'

বন্ধ ঘোষিত পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করেছি। আইডি কার্ড, মামলাজনিত সমস্যার কারণে কিছু শ্রমিক টাকা পাননি। মামলা নিরসন হলে টাকা পেয়ে যাবেন। টাকা মিলে দিয়ে রেখেছি। বদলি শ্রমিকদের হিসাব, পাট বিক্রির টাকা সব মিলে পাঠিয়ে দেব। সরকার চায় শ্রমিকদের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দিতে।'

সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ বলেন, 'বিজেএমসির অধীনে থাকা ২৫টি পাটকলের মধ্যে ১৭টি ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম আমরা শুরু করেছিলাম। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে একটি এবং নরসিংদীতে একটি আমরা বেসরকারি খাতে ইজারা দিয়েছি। প্রাইভেটে দেওয়ার পর পাটকলগুলো ভালোই চলছে। সরকারিভাবে কারখানা চালাতে গেলে আমাদের অনেক সমস্যা হয়।'

তিনি বলেন, 'ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বা কমে গেছে, সেটার সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য আমার দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগছে ১ মাস। তখন বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি আরেকরকম হয়ে গেছে। এভাবে কারখানা চালানো যায় না। প্রাইভেটে তো সেই সমস্যা নেই, সেজন্য তারা ভালোভাবেই চালাতে পারে।'

কর্ণফুলী জুট মিল, ফোরাত কার্পেট কারখানাসহ ৩টি কারখানা নিয়ে কেএফডি জুটমিল ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে বেসরকারি ইউনিটেক্স গ্রুপকে। কারখানার নতুন নামকরণ করা হয়েছে 'ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড'। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ইউনিটেক্সকে কারখানাটি হস্তান্তর করা হয়। সংস্কার শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি।

ইউনিটেক্স গ্রুপের চিফ ফাইন্যান্স অফিসার মোহাম্মদ আরিফ সভায় বলেন, 'কেএফডি জুটমিলে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২ থেকে ৫ টন। সেটাকে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দৈনিক ১০ টনে নিয়ে গেছি। চীন, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে ২০০ টনের বেশি পাট থেকে তৈরি সুতা রপ্তানি করেছি। আরও প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্য রপ্তানির কার্যাদেশ আমরা পেয়েছি। এই পাটকলে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আমাদের আছে। সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান এখানে হবে।'

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, ইউনিটেক্স গ্রুপের কর্মকর্তা  সাকিব আহমেদ সিদ্দিকী মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।

Comments