স্কুল ক্রিকেটে খেলছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা?

গত রোববার সিলেটে জেলা ভিত্তিক ফাইনালে সৈয়দ হাতিম আলি উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৩৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এমসি একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ। শিরোপা জেতা দলটির একাদশের বেশ কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া বলে অভিযোগ তুলেছে প্রতিপক্ষ
শিরোপা জেতা গোলাপগঞ্জের এমসি একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ। যাদের বিপক্ষে অনিয়মের অভিযোগ।

জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, অথচ সিলেট জেলায় এই আসরে কলেজ শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত রোববার সিলেটে জেলা ভিত্তিক ফাইনালে সৈয়দ হাতিম আলি উচ্চ বিদ্যালয়কে ১৩৫ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এমসি একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ। শিরোপা জেতা দলটির একাদশের বেশ কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া বলে অভিযোগ তুলেছে প্রতিপক্ষ। কলেজ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজনের নাম দিয়ে আরেকজনকে খেলানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সিলেট সদরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোলাপগঞ্জের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা থাকলেও জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার নিয়ম ছিল কেবল স্কুল পড়ুয়াদের। কিন্তু তারা নিয়ম না মেনে কলেজ শিক্ষার্থীদেরই খেলতে নামিয়ে দেয়।

দলটির খেলোয়াড় তালিকায় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকা নাবিল আবসার গত বছরই জিপিএ ৪.৬৭ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন। তিনি বর্তমানে এমসি একাডমির কলেজ শাখার একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান শাখায় অধ্যয়নরত। তার এসএসসির মার্ক শিটের একটি কপি পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

বিসিবির তৈরি করা নিয়ম অনুযায়ী কোন দলে অন্য প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন অংশ নিতে পারে। তবে সবাইকেই হতে হবে স্কুল পড়ুয়া।

একাদশে খেলেছেন মুন্না আহমেদ নামের আরেক ক্রিকেটার। ফেসবুকে মুন্না তার ব্যবহৃত আইডি থেকে  টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচে সেরা হওয়ার ছবি আপলোড করেন। তবে দলটির স্কোয়াডে মুন্না নামে কোন খেলোয়াড়ই নেই। প্রতিপক্ষ হাতিম আলির অভিযোগ, ভিন্ন নাম নিয়ে স্কুলে পড়েন দেখিয়ে খেলানো হয়েছে তাকে।

ফাইনালে ম্যাচ সেরা হয়েছেন শান্ত দে। কিন্তু প্রতিপক্ষের অভিযোগ তার প্রকৃত নাম শুভ দে। মূলত তার ছোট ভাইয়ের নাম শান্ত। দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের নাম ও তথ্য দিয়ে ম্যাচ খেলেছেন কলেজে পড়ুয়া বড় ভাই শুভ।

সাকিব আহমেদ নামের দলটির এক খেলোয়াড় ফেসবুকে নিজের খেলার ছবি প্রকাশ করেন। তবে সাকিব নামে কেউ ছিল না খেলোয়াড় তালিকায়। তিনি রিফাত নাম নিয়ে ভুয়া পরিচয়ে খেলেছেন বলে অভিযোগ। রুবাইয়েত খান রিফাত ও তাহমিদ আহমেদ রিফাত দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনি কার নাম নিয়ে খেলেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

সৈয়দ হাতিম আলী হাই স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক আব্দুল মজিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্কুল শিক্ষার্থীদের দিয়েই দল গঠন করেছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ দল কলেজের ছাত্রদের নিয়ে খেলেছে। ভুয়া নামেও খেলিয়েছে। অথচ আমাদের একজন খেলোয়াড়ের জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালের পরবর্তীতে। সে দশম শ্রেণীতেও পড়ে। কিন্তু শারীরিক গড়ন  একটু বড় হওয়াতে বিভাগীয় কোচ  মাহমুদ ইমন  অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তার প্রতি সম্মান রেখেই প্রকৃত শিক্ষার্থী হওয়ার পরও আমরা তাকে দল থেকে বাদ দেই। অথচ প্রতিপক্ষ দল নিয়ম মানেনি, এটা খুবই হতাশাজনক। আশা করছি কর্তৃপক্ষ এর সুষ্ঠু বিচার করবেন।'

এরকম অভিযোগের ব্যাপারে অবহিত থাকার কথা জানান জেলা ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক সৈয়দ তকরিমুল হক কাবী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন লিখিত অভিযোগ পেলে তারা বিষয়টা দেখবেন, 'গ্রুপ পর্যায়ে তারা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম লিখিত দেওয়ার জন্য। কারণে এবার অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, বিসিবির অ্যাপের মাধ্যমে।  আমরা বাছাই প্রক্রিয়ায় ছিলাম না। প্রত্যেক বছর আমরা যাচাই বাছাই করে তালিকা দিয়ে দেই যে কারা কারা খেলতে পারবে। আমরা তো এটার যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছি না। যদি তারা লিখত দেন, তাহলে আমরা বিসিবির কাছে পাঠিয়ে দিব, তারা বিষয়টি দেখবেন।'

কাবি জানান, এর আগেও পরিচয় গোপন করে স্কুল ক্রিকেটে খেলার সংস্কৃতি তারা লক্ষ্য করেছেন। তবে গত দুই বছরে এই হার একদম শূন্যতে নামিয়ে আনা গিয়েছিল, 'এরকম অভিযোগ নতুন না, আগেও আমরা পেয়েছি। ৬৪ জেলাতেই এই সংস্কৃতি কম বেশি আছে। কিন্তু তখন আমরা যখনই এমন পেয়েছি শুরুতেই সেটা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। এসবের হার আমরা শূন্যে নামিয়ে এনেছিলাম। এই বছর যখন বিষয়টা আবার নিয়ে গেল বিসিবি, তারাই নিয়ন্ত্রণ করেছে।'

'গত দুই বছরে কোন অভিযোগ ছিল না। এই বছরে প্রথম থেকেই দুশ্চিন্তা করছিলাম এরকম কিছু হয় কিনা, যেহেতু আমাদের কাছে নিয়ন্ত্রণ নেই। রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া যেহেতু আমাদের হাতে নেই আমাদের পক্ষে তো বোঝা সম্ভব না আসলে।'

'তবে খেলার আগে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতাম।'

এমসি একাডেমির অধ্যক্ষ সুজিত কুমার তালুকদার জানান, তার জানা মতে এমনটা হওয়ার কোন কথা না,  'আমার জানামতে এই ধরণের কিছু হওয়ার কথা না। এটা খেলার আগেই তাদের লিখিত দেওয়া উচিত ছিল তাদের। আমি দেখেন খেলাতেও যাইনি, আমাদের গেম টিচার বিষয়টা দেখেছেন। এরকম হওয়ার কথা না। '

'পরিচয় গোপন করে প্রথম হওয়াতে আমরা বিশ্বাসী না। কেন করব? যদি কিছু হয়েও থাকে সেটা আমার কনসার্নের বাইরে। হয়ে থাকলে সেটা সাংঘাতিক ব্যাপার। আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখব। তবে প্রতিপক্ষের উচিত ছিল আগেই লিখিত অভিযোগ জানানো।'

যোগাযোগ করা হলে বিসিবির বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান ওবেদ নিজাম জানান, বিস্তারিত জানার পর বিষয়টি তলিয়ে দেখবেন তিনি, 'এইগুলো তো পরিচালনার ভার স্থানীয়ভাবে জেলাদের কাছে দেওয়া আছে। আমি এখন দেশের বাইরে। কাল ফিরে বিষয়টা তলিয়ে দেখব।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

1h ago