যে খাবারগুলো খেতে পারেন সেহেরি-ইফতারে

স্টার ফাইল ছবি

তীব্র গরমের এই সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি।

এ জন্য ইফতার ও সেহেরিতে বেশকিছু খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। আবার কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে রোজা রাখার সময়টা কিছুটা হলেও সহজ হবে বলে আশা করা যায়। রমজানে আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন, সেগুলো নিয়ে আজকের আয়োজন।

খেঁজুর

ইফতারে অবশ্যই খেজুর বা খোরমা খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন ও ক্লোরিন ফাইবার। যা সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে খুবই দরকারি। সেহরিতেও একটি হলেও খেজুর খেতে পারেন। পাহাড়ে কিংবা ভ্রমণে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে এটি আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবেই জানেন সবাই। প্রতিটি খেঁজুরে থাকে ৬৬ ক্যালরি শক্তি। সেহরিতে খাবারের পর দুটি খেঁজুর খেয়ে নিলে সারাদিনে অনেকটা সাপোর্ট পেয়ে যাবেন।

দই

ইফতারিতে দই বা দই চিড়া খেতে পারেন। এতে সারাদিন অভুক্ত পেটে ঠান্ডা কিছু হজমক্রিয়া সচল রাখবে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে শক্তি থাকে ২৫৭ ক্যালরি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জুস কিংবা দুধের সঙ্গে ইসুবগুল খেতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি বা ডাব

ইফতারের সময় একসঙ্গে অনেক বেশি পানি পান করেন অনেকে। এতে খাবার ও পানি মিলে ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। এতে ইফতারের পর ইবাদতে, কাজে ক্লান্তি আসে। এটা না করে ইফতারের পর থেকে সেহরীর আগ পর্যন্ত একটু পর পর ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।

গ্লুকোজ বা স্যালাইন

বেশি দুর্বল লাগলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা বহুমূত্রসহ, নানাবিধ জটিল রোগের সমস্যা নেই, তারা এক গ্লাস গ্লুকোজ বা স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন ইফতারের পর।

পর্যাপ্ত এবং সুষম খাবার

খাদ্য তালিকায় সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে। আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি। অর্থাৎ সুষম খাবার খেতে হবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন পপকর্ন, কাঠবাদাম, ওটস, মসুরডাল, ছোলা, মটরশুঁটি, অ্যাভোক্যাডো, লাল আটা ইত্যাদি। 

এগুলোতে ক্যালরি খুব কম, হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তে চিনির পরিমাণও তাড়াতাড়ি বাড়ে না। সেহরিতে অনেকেই সারাদিন খাওয়া হবে না ভেবে অনেক বেশি খেয়ে ফেলেন। সেক্ষেত্রে বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা অতিক্রম করে ফেলে। এতে রোজা শেষে গিয়ে দেখা যায়, পবিত্র মাহে রমজানের সময়টায় ওজন বাড়িয়ে ফেলছেন অনেকেই। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছেমতো উদরপূর্তি করে খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন।

কাঁচা ছোলা

ইফতারে ভাজা পোড়া না রেখে রাখতে পারেন কাঁচা ছোলা। কারণ ২৫-৩০ গ্রাম ছোলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি থাকে। কিন্তু ফ্যাট থাকে মাত্র ৫ গ্রাম, যা কি না রক্তের চর্বি কমায়। তাই সামান্য পরিমাণ খেয়ে নিলেই অনেক শক্তি পাওয়া যায়। আবার কাঁচা ছোলা পেঁয়াজ, কাচামরিচ, শসা, টমেটো আর অল্প সরিষার তেল দিয়েও মাখিয়ে নিতে পারেন। দারূণ সুস্বাদু এই খাবারটি আপনাকে মুহূর্তেই সতেজ করে তুলবে।

ফল

ইফতারে সহজলভ্যতা অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ রকমের ফল যেমন পেয়ারা, আপেল, তরমুজ থাকা উচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম হিসেবে এদের রয়েছে যথাক্রমে ৬৮, ৪৫ ও ৩০ ক্যালরি। শাক সবজির ক্ষেত্রেও রান্না ও সেদ্ধ মিলিয়ে খাওয় উচিত। 

এ ছাড়া শাক-সবজি আর ফল মিলিয়ে পছন্দের কোনো সালাদ তৈরি করে নিতে পারেন স্বাদ অনুযায়ী। রঙিন ফলগুলো ইফতার আয়োজনে ফলের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রং মানুষের ক্ষুধা, আকষর্ণ এবং মনকেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তবে ফল এভাবে খাওয়ার সুযোগ না থাকলে জুস করেও খেতে পারেন। বিশেষ করে, কলা, বাঙ্গি, পেঁপে কিংবা আনারস।

প্রোটিন

খাবারে যাতে প্রোটিনের ঘাটতি না হয় সেজন্য ইফতার বা সেহরিতে চর্বিযুক্ত মাছ, চামড়াসহ মুরগির তরকারিও খেতে পারেন। যাদের গরুর মাংসে বিধিনিষেধ নেই তারা চর্বিযুক্ত গরুর মাংস খেতে পারেন। তবে প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে একবেলা মাছ খেতে চেষ্টা করুন।

রমজানের পরিশুদ্ধি কেবল ধর্মপালনেই নয় বরং জীবনাচরণেও। আর রমজানে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধনে প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। তাই আগে থেকেই এসব ভেবে মনকেও প্রস্তুত রাখলে, মাহে রমজানের পুরো মাসটাই সহজ এবং সুন্দর হবে আশা করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English
BNP will not tolerate extortionists and grabbers

BNP won’t tolerate extortionists, land grabbers: Rizvi

Attempts are being made to create chaos in the society in the name of "mob culture", says the BNP leader

1h ago