উপাচার্য হওয়ার কায়দা-কানুন

দেশের ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় সরকারের পছন্দই সেখানে একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি। ছবি: শেখ নাসির

দেশের ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় সরকারের পছন্দই সেখানে একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

অথবা, দেখা যাক তথ্য কি বলছে।

জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে যে ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা আছে, তাদের অন্তত ৩৯ জন সরাসরি আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের বিভিন্ন দলে যুক্ত ছিলেন।

বাকি ৯ জনের মধ্যে ৩ জন এসেছেন সামরিক বাহিনী থেকে, ১ জন বিএনপিপন্থী বলে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে। আর ৫ জনের সরকার সমর্থক দলগুলোতে কোনো পদ ছিল কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও তারাও সরকার সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। এদের অন্তত ২ জন সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করেছেন।

উপাচার্যদের জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে, বিভিন্ন ক্যাম্পাসের সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই উপসংহারে পৌঁছানো গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক নীল দলের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা সাধারণত এগিয়ে থাকেন। নীল দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন, এমন অন্তত ১২ জন এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও দুজন শিক্ষক রয়েছেন, যারা নীল দলের পদে না থাকলেও বিভিন্ন দলীয় বৈঠক ও কর্মসূচিতে অংশ নিতেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আর এই যোগ্যতা মাঝে মধ্যে অন্য যেকোনো ধরনের অযোগ্যতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পিএইচডি ডিগ্রির কথা। এক সময় এই ডিগ্রিটি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। সময়ের আবর্তে সেটা উঠে গেছে। সরকারপন্থীদের উপাচার্য হতেও এখন আর ডিগ্রিটির প্রয়োজনীয়তা নেই।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করেছেন, তার যেমন উপাচার্য হতে পিএইচডির প্রয়োজন হয়নি, তেমনি প্রয়োজন হয়নি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলস (বুটেক্স)- এর উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেমের।

বর্তমান উপাচার্যদের জীবন বৃত্তান্ত বলছে, তাদের ৮ জন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। ৯ জন ভারত থেকে, ৯ জন জাপান, ৭ জন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আর বাকিরা অন্যান্য দেশ থেকে পিএইচডি করেছেন। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো উপাচার্যের পিএইচডি ডিগ্রি নেই।

পুরোনো বিতর্ক থাকলেও লাভ নেই

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হলেও উপাচার্য নিয়োগের সময় সেগুলোর ব্যাপারে ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় না।

উদাহরণ টানতে গেলে আবারও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রসঙ্গ এসে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক এই সভাপতি (২০১৩-১৬) যখন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ছিলেন, তখন ২০১৫ ও ২০১৭ সালে দুই দফা ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠে।

পরে বিভিন্ন তদন্তেও উঠে আসে, প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজে ডিন কার্যালয়ের অবহেলা ছিল।

তাছাড়া, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন সম্পাদিত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গবেষণা পত্রিকা 'সামাজিক বিজ্ঞান রিভিউ' এর অন্তত তিনটি প্রবন্ধের বিরুদ্ধে কুম্ভিলকবৃত্তির (প্লেজিয়ারিজম) অভিযোগ উঠে। প্রবন্ধ লেখকদের কেউ কেউ শাস্তি পেলেও সম্পাদকের বিষয়টি এড়িয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধেও একটি গবেষণা প্রবন্ধে কুম্ভিলকবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তিনি নীল দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত না করারও অভিযোগ আছে। তিনি নীল দলের মনোনয়নে একবার সিন্ডিকেট সদস্য পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন।

পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে তাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য করা হয়, ২০২১ সালে উপাচার্য পদ খালি হলে সে দায়িত্বও দেওয়া হয়।

দ্য ডেইলি স্টার এই দুজনের সঙ্গেই মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।

'নীল' সবচেয়ে শক্তিশালী রঙ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ সময়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে তার পক্ষে-বিপক্ষে নীল দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এখন যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের অন্তত ৬ জন আরেফিন সিদ্দিকের বিরোধী প্যানেল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আর একজন আরেফিন সিদ্দিকের পক্ষের প্যানেলে ছিলেন।

এদের বাইরে, নেত্রকোণার নবপ্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এক সময় নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক ২০১৭ সালে নীল দলের মনোনয়নে নির্বাচন করে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করে একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি ছিলেন।

দেশের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারপন্থী শিক্ষকদের দলের নাম 'নীল' নয়। কিংবা বিএনপিপন্থীদের দলের নামও 'সাদা' নয়। তবে সব জায়গাতেই আওয়ামী লীগপন্থী কিংবা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের দলের অস্তিত্ব রয়েছে।

অথবা, শিক্ষকদের কেউ কেউ পেশাভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মতিয়ার রহমান হাওলাদার বঙ্গবন্ধু কৃষিজীবী পরিষদের নেতা ছিলেন।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শহীদুর রহমান খান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম'-এর নেতা ছিলেন।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের প্যানেলের নাম 'গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ'। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'হলুদ' দল। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এসেছেন 'স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ' করে। কোথাও বা শিক্ষকেরা 'বঙ্গবন্ধু পরিষদ' করেন, কোথাও দল করেন 'মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকবৃন্দ' ব্যানারে।

তারাও আওয়ামী লীগের লোক

দ্য ডেইলি স্টার ৫ জন উপাচার্যের রাজনীতির 'রঙ' খুঁজে পায়নি। কিন্তু এটা পেয়েছে যে, তারা কোনো না কোনোভাবে সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

যেমন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিদার উল আলমকে কেউ কেউ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বলে থাকেন। তবে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, তিনি ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদে ডিন পদে নীল দলের মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের কোনো পদে ছিলেন কি না, সেটা জানা যায়নি। তবে তিনি নীল দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যেতেন, দলীয় সভাগুলোতেও অংশ নিতেন। তিনি ২০০৯ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভারপ্রাপ্ত ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন।

দ্য ডেইলি স্টার একজন উপাচার্যকে খুঁজে পেয়েছে, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়তপন্থী শিক্ষকদের 'সাদা' দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ ২০০৯ সালে সাদা দলের প্রার্থী হিসেবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে তিনি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

তবে অধ্যাপক আহসান এই বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, 'এটি সর্বৈব মিথ্যা। আমি (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) হলুদ দলের সক্রিয় কর্মী ছিলাম না, এটা ঠিক। কিন্তু সব সময় হলুদ দলের সঙ্গেই ছিলাম। সাদা দল থেকে আমি কোনো নির্বাচন করিনি।'

পদত্যাগী ভিসি

আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৩ বছরে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যদের মধ্যে অন্তত ৪ জন বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির মতো ঘটনায় আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে গেছেন।

তারা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ও অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খন্দকার নাসির উদ্দিন এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এসএম ইমামুল হক।

অভিযোগ ছিল, তবু মেয়াদ শেষ করেছেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না মানা, সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করার মতো বেশ কিছু অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছিল। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এমনকি দায়িত্বের শেষ দিনে সব নিয়ম ভঙ্গ করে ১৩৭ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে গেছেন। তিনি তার মেয়ে ও জামাতাকে যোগ্যতার শর্ত শিথিল করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আলোচিত ছিলেন ক্যাম্পাসে তার অনুপস্থিতির জন্য। তার মেয়াদের ১ হাজার ৪৪৭ দিনের মধ্যে ১ হাজার ২০৭ দিনই তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন। তার অনিয়ম সংকলন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১১১ দফা 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

(মূল ইংরেজি প্রতিবেদন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত)

Comments

The Daily Star  | English
Bank Asia plans to acquire Bank Alfalah

Bank Asia moves a step closer to Bank Alfalah acquisition

A day earlier, Karachi-based Bank Alfalah disclosed the information on the Pakistan Stock exchange.

1h ago