‘এত ছোট বিষয়ে কুবি শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত হওয়ার কথা না’

সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দেওয়া পদোন্নতি স্থগিত করার বিষয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সদস্য।
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলামকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দেওয়া পদোন্নতি স্থগিত করার বিষয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন কয়েকজন সদস্য।

সিন্ডিকেটের অন্তত ছয় জন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ওই শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল করার ব্যাপারে সিন্ডিকেটে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, এখন থেকে কাজী এম আনিছুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক নয় বরং প্রভাষক হিসেবে বেতন-ভাতা পাবেন।

কুবির সিন্ডিকেট সদস্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার উপস্থিতিতে সিন্ডিকেট বৈঠকে কোনো শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল বা স্থগিতের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 'টু রেজিস্ট্রার' এর পরিবর্তে 'টু হুম ইট মেয় কনসার্ন' লিখলে কারও পদোন্নতি স্থগিত বা বাতিল হতে পারে না। আমার সামনে এমন হলে অবশ্যই আমি প্রতিবাদ করতাম। এই ব্যাপারে আমি কুবির উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলব।'

কিছুক্ষণ পরই অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে টেলিফোন করে বলেন, 'আমি কুবির ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। সেই শিক্ষককে ডাউনগ্রেড (পদাবনতি) করা হয়নি। সেই শিক্ষক কাগজটি ঠিক করে জমা দিলেই পরবর্তী সিন্ডিকেটে তা পাশ হয়ে যাবে। তিনি বর্তমানে যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তাই পেতে থাকবেন।'

কুবির সিন্ডিকেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিন্ডিকেটে কাজী আনিছের পদোন্নতি হবে না পদাবনতি হবে এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। শুধু আলোচনা হয়েছে যে তার কাগজে যে ত্রুটি ছিল সেটি ঠিক করে আনার জন্য ফেরত পাঠানো হবে। তিনি বর্তমানে বেতনসহ যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তা কমানোর বিষয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। তার সব সুযোগ সুবিধা একই থাকা উচিত।'

সাদেকা হালিম বলেন, 'আমি তিন দশক ধরে বিভিন্ন সিলেকশন কমিটিতে কাজ করছি। কোনো কাগজে ভুল থাকলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা ঠিক করে আনতে বলি। এই ধরনের ছোটখাটো বিষয়ে কাউকে এভাবে হয়রানি করা কোনভাবেই মানতে পারছি না। সিন্ডিকেটের পর যে বিষয়গুলো আমি দেখছি তা আমি কোনোভাবেই মিলাতে পারছি না। আমি অবাক হচ্ছি আসলে সেখানে কী হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে প্ল্যানিং কমিটি ও রেজিস্ট্রার ভবনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের গাফিলতির কারণেই কাজী আনিছকে হেয় হতে হচ্ছে। আমি মনে করি এই বিষয়টি উপাচার্যের ঠিক করে দেওয়া উচিত এবং একজন শিক্ষকবান্ধব উপাচার্য হিসেবে তার পরিচয় দেওয়া উচিত।'

'এতদিনে কেন তাকে বলা হচ্ছে। এর আগে কেন বলা হয়নি কাগজ ঠিক করে দেওয়ার জন্য। উপাচার্য হয়ে প্রশাসনিক যে ব্যত্যয় ঘটেছে সেখানে ভিসিকে দাঁড়াতে হবে।'

কুবির কোষাধ্যক্ষ ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাজী আনিছের পদোন্নতি বাতিল বা তাকে আবার প্রভাষক করা হবে বা উনার সুযোগ সুবিধা কমানো হবে সিন্ডিকেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু কাগজটি ঠিক করে আনতে বলা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ৮০তম সিন্ডিকেটের আগেই বিষয়টি সমাধান করার জন্য কাজী আনিছ ও উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমার প্রস্তাব ছিল, যেহেতু ৭৯তম সিন্ডিকেটে কাজী আনিছকে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে তাই তাকে অবনমন না করিয়ে পরের পদোন্নতির জন্য সাধারণত যত বছর অধ্যাপনা করতে হয় তার চেয়ে একবছর বেশি থাকতে হবে। আমার প্রস্তাবটি কাজী আনিছ মেনে নিলেও উপাচার্য জানান তিনি শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। পরে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলে তারা তা মেনে নেয়নি।'

কুবির সিন্ডিকেট সদস্য ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ বলেন, 'আবেদন করার সময় এইরকম ভুল অনেকেই করেন। তাকে আগে বলা হলে এমন হয়রানি হতে হতো না বা কষ্ট করতে হতো না।'

কাজী আনিছের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার আসলে এই বিষয়টা তেমন মনে নেই।'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কুবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেই শিক্ষককে আগের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাগজটি ঠিক করে নিয়ে আসতে হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। তাকে ডিমোশন করে আবার প্রভাষক করা হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রায় একমাস আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে কাজী আনিছকে প্রভাষক হিসেবে দেখানো হয়। সিন্ডিকেটের আগেই কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জানতে চাইলে ডায়েরি কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমান কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, 'এখানে আমাদের কোনো দায় নেই। রেজিস্ট্রার অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি।'

এ বিষয়ে কুবির রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহেরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

কুবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী কাজী আনিছের পদোন্নতি স্থগিতের বিষয়ে বলেন, 'বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি এবং রেজিস্ট্রার অফিসের দোষে এমনটি হয়েছে। শিক্ষক সমিতিসহ শিক্ষক সমাজের দাবির মুখে আমি কাজী আনিছের বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলি এবং সিন্ডিকেটে বলা হয়ে এটি স্থগিত করে বিভাগে পাঠানো হবে এবং ত্রুটিমুক্ত হয়ে আসলে এটি বিবেচনা করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত। একদল আরেক দলকে দেখতেই পারে না। শিক্ষক সমিতি সম্পূর্ণ উল্টোদিকে থাকলে তো আমি এটি (কাজী আনিছের পদোন্নতি) করতে পারি না।

উল্লেখ্য কুবির সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তিনটি দলের মধ্যে দুটি দল জোট বেঁধে কাজী আনিছদের দলকে পরাজিত করে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার দলের সদস্যদের এখন বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের গত ৩০ জুন টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'আনিছুল ইসলাম আগে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের অভিজ্ঞতার সনদে "টু রেজিস্ট্রার" লেখার পরিবর্তে "টু হুম ইট মেয় কনসার্ন" লেখা ছিল। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই কারণে তার পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।'

তিনি তখন আরও জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ৭৯তম সিন্ডিকেটে আনিছুল ইসলামকে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ২৭ জুনে অনুষ্ঠিত ৮০তম সিন্ডিকেটে বাতিল করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

History of student protests in the USA

American campuses -- home to some of the best and most prestigious universities in the world where numerous world leaders in politics and academia have spent their early years -- have a potent history of student movements that lead to drastic change

1h ago