ত্রাণ নয়, স্থায়ী বাঁধ চাই: সিরাজগঞ্জে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আকুতি

সিরাজগঞ্জের ৫ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। তবে বন্যার ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে নদীভাঙন।
সিরাজগঞ্জে প্রায় ৭ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

সিরাজগঞ্জের ৫ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। তবে বন্যার ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে নদীভাঙন।

বন্যা শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয় নদীভাঙন। ইতোমধ্যে চৌহালি, শাহজাদপুর উপজেলাসহ জেলার বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় ৭ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নদীভাঙ্গনের শিকার এসব পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রাস্তার উপর, বাঁধের উপর, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যে যেভাবে পারছে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছে।

বন্যায় নদীভাঙনে ঘর বাড়ি সব হারিয়ে দিশেহারা এসব মানুষের ত্রাণের প্রয়োজন। তবে তাদের মূল দাবি সঠিকভাবে নদী শাসনের কাজ করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। যাতে আর কেউ যেন তাদের মত ঘর ছাড়া না হয়।

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

ভাঙ্গন কবলিত শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল গ্রামের বাসিন্দা লুক মিহান সরদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙন। হাট পাচিল এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি বন্যার শুরুতেই নদীগর্ভে চলে গেছে।'

সময়মত নদীভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেকেই ভয়াবহ ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছে বলে জানান তিনি।

বন্যা ও নদীভাঙনে সব হারালেও তাদের কপালে জোটেনি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। তবে লুক মিহান সরদারের সেজন্য আক্ষেপ নেই। নদীভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি তার।

একই গ্রামের গৃহবধূ আম্বিয়া খাতুন ডেইলি স্টারকে জানান, নদীতে তার পুরো বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও তার সুখের সংসার ছিল। এখন পরিবারের সবাই ছন্নছাড়া হয়ে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

আম্বিয়া বলেন 'এক মুঠো ত্রাণ দিয়ে আমাদের কী হবে? যদি ঘর থাকে তাহলে আমরা খেটে পেটের ভাত যোগাড় করতে পারব। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ভাঙন প্রতিরোধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাতে আর কাউকে ঘর ছাড়া না হতে হয়।'

এদিকে টানা এক সপ্তাহ বিপৎসীমার উপরে থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে আবারও ভাঙন আতঙ্কে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ।  

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বামনগ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, বন্যার পানি আসার আগেই তার বসত বাড়িটি নদীগর্ভে চলে গেছে। বসত বাড়ি হারিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেটিও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।

আজিজুল জানান, ছোটবেলা থেকেই বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছি। বন্যার পানিতে আমাদের তেমন ভয় নেই। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরিবার নিয়ে কোথায় যাব তা ভেবে পাচ্ছি না।

ভাঙ্গন কবলিত এসব মানুষ নদীভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সময়মত কাজ না করাকেই দায়ী করেছে। ধীর গতিতে কাজ করার কারণে এ বছর বন্যায় ব্যাপকহারে নদীভাঙন হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, শাহজাদপুরের নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এনায়েতপুর থেকে হাট পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান আছে।

তিনি জানান, বন্যার কারণে এখন কাজ বন্ধ আছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ এলাকায় নদীভাঙন প্রতিরোধ হবে। এছাড়া বন্যার পর চৌহালি উপজেলার ভাঙন প্রতিরোধে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

নদীর ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সিরাজগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি বৃদ্ধি ও পানি কমার সময় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।

Comments