সিলেটে বন্যায় চিড়া-মুড়ি-গুড়ের দাম বেড়েছে দেড় গুণ

সিলেটের বৃহত্তম পাইকারি বাজার কালীঘাট। ছবি: দ্বোহা চৌধুরী/স্টার

বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় সব খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় যোগান কমের কারণে নয়, বরং বন্যার সুযোগে উৎপাদন ও সরবরাহকারী পর্যায়েই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের।

ত্রাণ হিসেবে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের। এ ছাড়াও, দাম বেড়েছে মোমবাতিসহ আনুষঙ্গিক পণ্যের।

সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার আগের বাজারদরের তুলনায় সেসব পণ্যের দাম বেড়েছে অন্তত দেড়গুণ। প্রতিনিয়ত দাম আরও বাড়ছে বলেও জানান বিক্রেতারা।

বন্যার আগে চিড়ার বস্তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। মুড়ি আগে পাইকারি মূল্যে কেজি ৬০–৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। আর ৮০-৮৫ টাকা কেজি দরের গুড় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

কালীঘাটের লতিফিয়া স্টোরের মালিক মো. বেলাল আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাড়ি ভাড়া ২ গুণ-৩ গুণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে। এ ছাড়াও, পাইকাররা জানেন সিলেটে বন্যা, সংকট; তাই তারাও দাম বেশি চাচ্ছেন। মূলত দাম বেড়েছে আড়তের সিন্ডিকেট বা ব্যবসায়ীদের ইচ্ছায়।'

মা স্টোরের মালিক অনল পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ভালোমানের যে চিড়া আমরা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন তা বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে শুকনো খাবারের সাধারণ খুচরা বিক্রেতারা নয়, বরং ত্রাণ হিসেবে কিনতেই বেশিরভাগ মানুষ আসছেন।'

কালীঘাটের অন্যতম পাইকারি শুকনো খাবারের প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখর দাশের মালিক শেখর দাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকায় প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। গত সোমবার যে চিড়া এনেছি ১ হাজার ৩০০ টাকা করে বস্তা, তা গতকাল মঙ্গলবার চেয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ, বন্যার আগে দাম ছিল ১ হাজারের মতো।'

'মুড়ির দামও বেড়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবুও ত্রাণ হিসেবে যারা নিতে আসছেন, তাদের জন্য আমি ৮০ টাকা কেজি দরে মুড়ির বস্তা বিক্রি করছি। অন্যান্য স্থানে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। অতিরিক্ত মূল্যে হলেও আমরা না আনলে বাজারে সংকট সৃষ্টি হবে। সে বিবেচনায় আমরা বাধ্য হয়েই বেশি দামে হলেও পণ্য আনছি।'

স্বেচ্ছাসেবক বিমান তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুকনো খাবারের যেমন দাম বেড়েছে, তেমনি আনুষঙ্গিক জিনিস যেমন মোমবাতিরও দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ত্রাণ বিতরণ কষ্টসাধ্য তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'

শুকনো খাবারের বাজারমূল্যের বিষয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরের সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, 'সামর্থ্য থাকলেও আমরা সিলেটে শুকনো খাবার পাচ্ছি না। শ্রীমঙ্গল থেকে খাবার আনার চেষ্টা করছি, তাও খুবই অল্প পরিমাণে। ঢাকা থেকে খাবার না এলে এখানে শিশুখাদ্যের অভাব দেখা দেবে।'

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের মনিটরিং চলছে। যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।'

'আমরা পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের বলছি দাম সহনশীল রাখতে, যাতে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Polytechnic student protest Tejgaon 2025

Polytechnic students block Tejgaon road over six-point demand

The blockade has caused a long tailback on roads in the neighbouring areas.

54m ago