হাওরের নৌকা এখন সড়কের পরিবহন

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তা। ১ জুলাই ২০২২। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

ঘরে পানি। থাকার আর উপায় নেই। পাশের ২ তলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন হোসনা বেগম ও তার পরিবার।

হোসনা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বামীর চাকরির সুবাদে আমরা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌর শহরে প্রায় ১৫ বছর ধরে আছি। কিন্তু, এতো পানি কোনদিন দেখিনি।'

তিনি আরও বলেন, 'কুলাউড়া উত্তরবাজার যেতে রিকসায় ১৫ টাকা লাগতো। এখন সেখানে নৌকায় যেতে হয়। ভাড়া ৩০ টাকা। গত ১৪ দিন থেকে রাস্তায় পানি।'

'প্রতিদিন নৌকার ওপর ভরসা করতে হয়। নৌকা ছাড়া হেঁটে বা রিকসায় চলতে গেলে নোংরা পানিতে পা চুলকায়। নৌকাই নিরাপদ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। দ্বিগুণ ভাড়া হলেও এই সংকটে নৌকা পাচ্ছি তাই অনেক,' যোগ করেন হোসনা বেগম।

কুলাউড়া পৌর শহরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান সুজন ডেইলি স্টারকে জানান, কুলাউড়া পৌর শহরের সোনাপুর, বেহালা, সাদেকপুর, বিছনাকান্দি, দেখিয়ারপুর, আহমদাবাদ, নতুনপাড়া, তিতিডিসি, বাদেমনসুর, মাগুরা, জয়পাশা, ছড়ারপার, শিবির ও উত্তরবাজারের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ এখন নৌকার ওপর নির্ভরশীল।

উপজেলা পরিষদের সামনে নৌকাচালক সাজ্জাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৌর শহরে কারো নৌকা নেই। আমাদের মতো দিনমজুরদের কেউ কেউ নৌকা ভাড়া এনে এখানকার বাসিন্দাদের আনা-নেওয়ার কাজ করছেন। আবার অন্য এলাকার শ্রমিকরাও নৌকা নিয়ে এখানে আসছেন। আমি প্রায় ১০ দিন ধরে পৌর শহরের ভিতরে নৌকা চালাচ্ছি।

শুধু তারাই নন কুলাউড়া পৌর শহরের স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বেড়ে আবার ২/১ ইঞ্চি কমছে। বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যায়। এতে বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা। এখন নৌকাই তাদের ভরসা।

ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৭ই জুন থেকে পৌর এলাকার প্রধান রাস্তাগুলো হাঁটু পানি থেকে কোমর পানিতে ডুবে আছে। রাস্তায় অনায়াসে নৌকা চলাচল করছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে মানুষ রাস্তার ওপর দিয়ে নৌকায় চলাফেরা করছেন।'

তার মতে, 'কুলাউড়া পৌর শহরে এতো পানি আগে কখনো দেখিনি। এখন প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে পানি কমতে দেরি হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'হাকালুকি হাওরে পানি থাকায় কুলাউড়া পৌরসভায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৪ দিন ধরে ১, ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।'

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। টানা বর্ষণ ও উজানের পানি থেকেই পৌর শহরের দক্ষিণবাজার, সাদেকপুর, উপজেলার সব অফিস ও অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা।'

কয়েকটি এলাকায় দোকানপাট প্রায়শই বন্ধ থাকে। সোনাপুর, মহিলা কলেজ, সাদেকপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো চরম ঝুঁকিতে আছে।

মসজিদসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি ঢুকে পড়ায় জুমার নামাজ আদায়ে সমস্যায় পড়েছিলেন মুসল্লিরা। পৌর শহরে নৌকা নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায় অনেককে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পৌর মেয়র সিপার উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানা বর্ষণে কুলাউড়া পৌর এলাকার অসংখ্য বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। অনেকে আবার পানিবন্দি হয়েই বাড়িতে থাকছেন। তাদের কথা চিন্তা করে বন্যার শুরু থেকে পৌরসভার পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী ও শুকনো খাবারসহ রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।'

তার মতে, কুলাউড়া পৌর শহর দীর্ঘস্থায়ী বন্যা পরিস্থিতিতে পড়েছে। এতে শহরটি মারাত্মক ক্ষতিতে পড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

2h ago